তাসনীম চৌধুরী
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৩১ পিএম
অলংকরণ : জয়ন্ত সরকার
দরজা খোলা পেয়ে টুক করে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ল সে। সাদা এবং সোনালি শরীরটা যেন ঝকমক করছে। ইতিউতি তাকিয়ে দৌড়ে ডাইনিং টেবিলের নিচে গিয়ে গা এলিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে বসল।
তিনু আর বিনু কী এলো কী এলো বলে তার পেছন ধাওয়া করে টেবিলের সামনে এসে থমকে গেল। চুপিচুপি মাথা নিচু করে দেখতে লাগল দুজনই। বিনু ফিসফিস করে বলল, দেখেছিস আপু, কী সুন্দর তুলতুলে সাদা শরীর! ফাঁকে ফাঁকে সোনালি দাগ। কী সুন্দর লেজটা বিছিয়ে রেখেছে।
তিনু বলল, হ্যাঁ দেখ, চোখ দুটো কী সুন্দর! কলাপাতার মতো সবুজ। এই, যদি চলে যায়, দরজাটা বন্ধ করে দে। আমরা ওকে পুষব।
বিনু তাড়াতাড়ি দরজা লাগাতে গিয়ে বেশ শব্দ করে ফেলল। রান্নাঘর থেকে মা চ্যাঁচালেন- কী হলো?
বিনুও চেঁচিয়ে বলল, আম্মু জলদি এসো। দেখে যাও।
মা পড়িমরি ছুটে এলেন। এদিকে চ্যাঁচামেচি শুনে টেবিলের নিচ থেকে তড়াক করে লাফিয়ে উঠল সে। রান্নাঘরের দিকে দিল ভোঁ-দৌড়। মা বললেন, কী হয়েছে?
তিনু বিনু আঙুল তুলে রান্নাঘরের দিকে দেখালÑ ওই যে!
মা রান্নাঘরে গিয়ে দেখলেন, মিটসেফের ওপর লেজ ঝুলিয়ে বসে আছে একটা সুন্দর সাদা সোনালি বেড়াল।
- ওমা বেড়াল! এটা কোত্থেকে এলো?
- কী জানি আম্মু। আবদারের সুরে বলল তিনু বিনুÑ আম্মু দেখো, বেড়ালটার কি সুন্দর চেহারা। আমরা একে পুষব।
মা বললেন, এ বেড়াল অন্য কারও পোষা হতে পারে। হয়তো ভুল করে ঢুকে পড়েছে আমাদের বাসায়। দরজা খুলে দাও চলে যাক। অন্যের কিছু নেওয়া ঠিক নয় তোমরা তা জানো।
বিনু বলে, আম্মু অন্যের হলে নিশ্চয়ই খোঁজ করতে আসবে। তখন দিয়ে দেব। এখন আমাদের কাছে থাকুক না।
তিনুও কাতর কণ্ঠে বলে উঠল- আম্মু থাকুক না।
মা বললেন, ঠিক আছে। তবে শর্তে আছে। ওকে বিছানায় তুলবে না। খাবার একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দেবে। বেড়াল ধরার পর ভালো করে হাত ধুতে হবে। কেউ এসে বেড়ালের খোঁজ করলে সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেবে।
তিনু বিনু একসঙ্গে বলল, আমরা রাজি। তিনু বিনু খুব খুশি। তিনু বলল, আম্মু এ দুপুরবেলা কি রোদ পড়েছে। বেড়ালটার বোধহয় অনেক গরম লেগেছে। ওকে গোসল করাই?
মা বললেন, ঠিক আছে তবে বেশি পানি দিও না। ঠান্ডা লাগতে পারে।
-আচ্ছা। তারা খুশিতে নাচতে লাগল। কোলে করে বাথরুমে নিয়ে গেল বেড়ালটাকে।
জানো বন্ধুরা বেড়ালটা একবারও মিউমিউ করল না, খামচি দিল না। খুব ভদ্র আর শান্তভাবে কোলের মধ্যে বসে চোখ পিটপিট করে তাকাতে লাগল। দুই বোন মিলে শ্যাম্পু দিয়ে ওকে সুন্দর করে গোসল করাল। তারপর ফ্যানের নিচে বসিয়ে দিল। একটি পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো দিয়ে গাটা মুছিয়ে দিল। মা এসে একটা বাটিতে করে কিছু ভাত দুধ দিয়ে মেখে দিলেন। চপচপ করে খেতে লাগল বেড়ালটা।
তিনু আর বিনু ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল বেড়ালের খাবার খাওয়া।
সন্ধ্যেবেলা তিনু বিনু পড়তে বসেছে। বেড়ালটা টুক করে এক লাফে টেবিলে উঠে বসল। বিনু বলল, কী রে পড়তে এসেছিস নাকি? লেখাপড়া শিখবি?
বেড়াল সামনের একটা পা তুলল। বিনু হাততালি দিলÑ আপু দেখো বেড়াল হাত তুলেছে। ও বোধহয় লেখাপড়া শিখতে চায়।
তিনু বলল, বেড়ালের হাত আছে নাকি যে ও হাত তুলবে? ও পা তুলেছে।
বিনু জোর গলায় বলল, না হাত তুলেছে।
Ñ না, পা।
- না, হাত।
- পা।
পড়া রেখে ওরা ঝগড়া শুরু করে দিল। মা এসে বললেন, কী শুরু করেছো তোমরা পড়াশোনা ফেলে?
বিনু ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, আম্মু দেখ না আপু বলে বেড়ালের নাকি হাত নেই। ওর সামনের দুটো তো হাত। আর পেছনের দুটো পা, তাই না আম্মু?
তিনু বলে, বেড়ালের চারটা পা। বইয়ে আছে।
মা বললেন আচ্ছা, হইচই করছো তোমরা। কিন্তু বেড়ালটা কোথায়?
ওমা তাইতো! তিনু বিনু একসঙ্গে বলে উঠল- টেবিলের ওপরেই তো বসেছিল। কোথায় হাওয়া হয়ে গেল!
আচ্ছা তোমরা বলো তোÑ বেড়ালের কি হাত-পা আছে? নাকি কেবল পা আছে?
তিনু নাকি বিনুÑ কার কথা ঠিক? তোমরা ভাবতে থাকো আর ওরা বেড়াল খুঁজতে থাকুক।