× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রচ্ছদ

তাঁতে তারুণ্য

সুবর্ণা মেহ্‌জাবীন স্বর্ণা

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৫৮ পিএম

আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৫৯ পিএম

তাঁতে তারুণ্য

ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি একালেও ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয়। তাঁতের শাড়ির বুনন ও কারুকাজ যেমন যুগ যুগ ধরে বাঙালি নারীর প্রিয় ছিল, তেমন আধুনিক ডিজাইনের সংযোজনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছেও নতুন করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তাঁতের শাড়ি কেবল বাঙালি ঐতিহ্যের প্রতীক নয় বরং এটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও ফ্যাশনের এক অমূল্য অংশ হয়ে উঠেছে। তাঁতের শাড়ির মূল গুণগত বৈশিষ্ট্য এর হাতের বুনন, যা এ শাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখে। শাড়ি তৈরি হয় তাঁত নামক বিশেষ মেশিনে, যেখানে দক্ষ তাঁতিরা সুতো দিয়ে বুনন করেন। তাঁতের শাড়ি সাধারণত সুতি, সিল্ক বা মসলিনের হয় এবং এটি তার সূক্ষ্ম নকশা ও উচ্চমানের বুননের জন্য বিখ্যাত। সম্পূর্ণ হাতে বোনা হয় বলে প্রতিটি শাড়ি একক এবং বিশেষ হয়। শাড়ির কারুকাজে শিল্পীদের দক্ষতা প্রতিফলিত হয়। এ শাড়ি সাধারণত কোমর বা পা দিয়ে চালানো তাঁতে বোনা হয়। এ পদ্ধতিতে বুননের জন্য শাড়ি মসৃণ ও মজবুত হয়। বিভিন্ন ধরনের নকশা করা হয় এ শাড়িতে। যার মধ্যে রয়েছে ধনেখালি, জামদানি, বেনারসি ইত্যাদি। এগুলো সাধারণত ফুল, পাতা, জ্যামিতিক বা অন্যান্য নকশা দ্বারা সজ্জিত হয়।

হালকা ও আরামদায়ক

তাঁতের শাড়ি সাধারণত সুতি কাপড়ে তৈরি হয়, যা খুব হালকা ও আরামদায়ক। তরুণীদের মধ্যে এ শাড়ির জনপ্রিয়তার কারণ এর সহজ পরিধানযোগ্যতা। বিশেষত গরমে বা দীর্ঘ সময় পরার জন্য খুবই আরামদায়ক।

ফ্যাশন ও স্টাইলে বৈচিত্র্য

আধুনিক সময়ে তাঁতের শাড়ি কেবল ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সাজে নয়, বরং পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে মিশিয়ে স্টাইল করা হচ্ছে। ব্লাউজ ডিজাইনেও এসেছে পরিবর্তনÑ স্লিভলেস, ব্যাকলেস কিংবা জ্যাকেট-স্টাইল ব্লাউজের সঙ্গে তাঁতের শাড়ির সংমিশ্রণ ভিন্ন মাত্রা তৈরি করেছে। এর ফলে তাঁতের শাড়ি এখন শুধু উৎসবের পোশাক নয়, বরং অফিস কিংবা পার্টি লুকের জন্যও উপযুক্ত।

নতুন ডিজাইন ও রঙ

ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়িগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু রঙ ও নকশার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, যেমন সাদা বা লাল পাড়ের শাড়ি। কিন্তু আজকাল আধুনিক ডিজাইনাররা বিভিন্ন উজ্জ্বল ও বৈচিত্র্যময় রঙের সমন্বয়ে নতুন ধরনের তাঁতের শাড়ি তৈরি করছেন, যা ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি তরুণদের ফ্যাশন চাহিদাও মেটাচ্ছে। এর পাশাপাশি নকশায় যোগ হচ্ছে নতুন ধরনের প্যাটার্ন, যা একে আরও ফ্যাশনেবল করে তুলছে।


শৈল্পিক কারুকাজের সংযোজন

তাঁতের শাড়িতে নতুন ধরনের কারুকাজ যেমন ব্লক প্রিন্ট, হাতের এমব্রয়ডারি এবং আধুনিক মোটিফের ব্যবহার করা হচ্ছে; যা শাড়িগুলো আধুনিক ফ্যাশনের সঙ্গে মানানসই করার পাশাপাশি একই সঙ্গে এর ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্য ধরে রাখে।

উপযুক্ত দৈনন্দিন এবং উৎসবমুখী পোশাক

তাঁতের শাড়ি দৈনন্দিন জীবনে যেমন পরা যায় তেমন উৎসব, পার্টি বা বিশেষ অনুষ্ঠানে আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে পারে। তরুণরা একে ক্যাজুয়াল বা পার্টি লুক হিসেবে সহজেই পরতে পারেন, যা তাদের স্টাইলিশ এবং স্নিগ্ধ দেখায়।

টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন

তাঁতের শাড়ি প্রাকৃতিক সুতা ব্যবহার করে হাতে বোনা হয়, যা এটি পরিবেশবান্ধব করে তুলেছে। বর্তমান সময়ে টেকসই ফ্যাশন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, আর এ কারণে তাঁতের শাড়ি আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম ইকো-ফ্রেন্ডলি ফ্যাশনের দিকে ঝুঁকছে এবং তাঁতের শাড়ি এ চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ

তাঁতের শাড়ি তরুণদের তাদের শিকড় এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত রাখে। এ শাড়ি কেবল একটি পোশাক নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করে। এতে তরুণরা তাদের ঐতিহ্য ধারণ করেও আধুনিক ফ্যাশনে উপস্থাপন করতে পারে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজলভ্যতা

আগে তাঁতের শাড়ি কিনতে বিশেষ জায়গায় যেতে হতো, কিন্তু এখন বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাঁতের শাড়ি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এবং এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি তার প্রাচীন সৌন্দর্য বজায় রেখেও আধুনিক যুগের ফ্যাশনের সঙ্গে মানিয়ে চলেছে। এর নমনীয়তা এবং নতুনত্বের কারণে এটি যুগের পর যুগ ধরে বাঙালি নারীর কাছে প্রিয় হয়ে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

তাঁতের শাড়ির যত্ন 

তাঁতের শাড়ি দীর্ঘস্থায়ী ও সুন্দর রাখতে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। যেহেতু এটি হাতে বোনা এবং সাধারণত সূক্ষ্ম কাপড়ে তৈরি হয়, তাই কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করলে শাড়ি ভালো থাকে দীর্ঘদিন।

  • প্রথম কয়েকবার তাঁতের শাড়ি শুধু ঠান্ডা পানিতে এবং সাবান ছাড়া ধুতে হয়। এটি শাড়ির রঙ ও নকশা সুরক্ষিত রাখে।
  • কয়েকবার ধোয়ার পর মৃদু ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে শাড়ি ধোয়া উচিত। তবে কড়া সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যাবে না।
  • তাঁতের শাড়ি কখনোই ওয়াশিং মেশিনে ধোয়া উচিত নয়, কারণ এতে শাড়ির বুনন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • সরাসরি রোদ শাড়ির রঙ ফিকে করে দিতে পারে, তাই ছায়াযুক্ত জায়গায় বা উল্টো করে শুকানো উচিত।
  • শাড়ি শুকানোর পর হালকা গরম ইস্তিরি দিয়ে আয়রন করা উচিত। খুব বেশি গরম ইস্তিরি শাড়ির বুনন বা সূক্ষ্মতা নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে যদি শাড়িটিতে সিল্ক বা মসলিন মেশানো থাকে, তাহলে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
  • শাড়ি সংরক্ষণের সময় তা ভাঁজ করে রাখার পরিবর্তে, শাড়ি রোল করে রাখলে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • শাড়ি সংরক্ষণ করার আগে ম্যালাথিয়ন বা নিমপাতা ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে পোকার আক্রমণ না হয়।
  • সময় সময় শাড়ির ভাঁজ পরিবর্তন করা উচিত, যাতে ভাঁজের জায়গাগুলোয় স্থায়ী দাগ বা ক্ষতি না হয়।

শাড়ি পরার পরে যত্ন

প্রতিবার শাড়ি পরার পর তা ভালোভাবে হালকা রোদে বা বাতাসে রেখে তাজা করে নিয়ে তারপর সংরক্ষণ করা উচিত। এতে শাড়িতে কোনো ধরনের ঘাম বা আর্দ্রতার গন্ধ থেকে যাবে না।

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা