সন্তান
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:১৩ পিএম
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:১৪ পিএম
বাড়ির কাজ জানাটা আসলে জীবনের একটা দক্ষতা, যা বড় হয়ে প্রতিটি মানুষের কাজে লাগে। তাই এর শিক্ষা শুরু হোক ছোটবেলায়ই।
সকালে অ্যালার্মের ঘণ্টায় ঘুম ভাঙা, তারপর কোনোমতে নাকে-মুখে গুঁজেই দৌড় স্কুলে। স্কুল থেকে ফিরে আবার টিউশন, পড়াশোনা, নাচগান-আঁকা-সাঁতার-ক্যারাটে-ক্রিকেট-ক্রিয়েটিভ রাইটিং। এখনকার সময়টা বাচ্চাদের রোজকার রুটিন মোটামুটি এ রকমই। মা-বাবারাও চান তাদের সন্তান সব বিষয়ে পারদর্শী হয়ে বড় হোক। খুব ভালো কথা। কিন্তু ‘সব বিষয়ে পারদর্শী’ করতে গিয়ে একটা খুব জরুরি বিষয় অনেক সময়ই বাচ্চাদের শেখানোর তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। তা হলো, ঘরের ছোটখাটো কাজ করা। অনেক মা-বাবাই বাচ্চাদের বাড়ির কাজ শেখানোর কথা শুনলে ভাবেন, ‘ও তো ছোট, ওকে দিয়ে কী কাজ করাব?’ এ ধারণা আসলে ভুল। কখনও না কখনও তো সন্তানকে বাড়ির কাজ করতেই হবে। সেটা ছোটবেলায়ই শুরু হলে মন্দ কী। সন্তানকে তো আপনি একা হাতে গোটা বাড়ি ঝাড়মোছ করার বা রান্নাবান্না সামলানোর দায়িত্ব দিচ্ছেন না! ছোট ছোট কাজ, যেগুলো ওর ছোট্ট হাতের পক্ষে উপযোগী, তেমন কাজই তো করতে শেখাচ্ছেন। আপনি নিজেও থাকছেন তত্ত্বাবধানে। এটাই কি সবচেয়ে ভালো সময় নয় বাচ্চাকে বাড়ির কাজ একটু একটু করে শেখানোর? বাচ্চারা কিন্তু বাড়ির কাজে তাদের শামিল করে নিলে খুশিই হয়। বোঝে যে, বড়রা যে কাজগুলো করছে, ওকেও সে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে মানে বড়দের মতোই ভরসা করা হচ্ছে ওকে। এ বোধটাই ওর মনে চাড়িয়ে দিন।
তবে বাচ্চার বয়স
বুঝে কাজের দায়িত্ব দিন। যারা সবে কাজ করতে শিখছে তেমন ছোট বাচ্চাদের জায়গার জিনিস
জায়গামতো সাজিয়ে রাখা, ছোটখাটো জিনিস যেমন কুশন গুছিয়ে রাখা, টেবিলম্যাট, বিছানার
চাদর কুঁচকে গেলে সোজা করে দেওয়া, গাছে পানি দিতে সাহায্য করা এসব প্রাথমিক কাজ সম্পর্কে
সচেতন করা দিয়ে শুরু করুন। তারপর ধীরে ধীরে কিচেন থেকে খাবার নিয়ে টেবিলে সাজানো,
অল্পবিস্তর ডাস্টিং করা, বাগানে টবে গাছ পোঁতা, স্যান্ডউইচে সুন্দর করে পুর ভরা থেকে
রান্নায় আপনাকে সাহায্য করা (এমনভাবে যা ওর পক্ষে নিরাপদ হয়), নিজে ছোটখাটো রান্না
করা (অবশ্যই জিরো-ফায়ার রেসিপি হতে হবে), পড়ার টেবিল গোছানোÑ এভাবে ধাপে ধাপে আগাতে
হবে।
তবে বাচ্চার প্রকৃতি বুঝেই তাকে কোনো কাজ করতে দেবেন। যে বাচ্চা খুব দুরন্ত, তাকে এমন কাজ দেবেন না যেখানে ধারালো জিনিস যেমন ছুরি ব্যবহার করতে হয়। যার ধুলোয় অ্যালার্জি, তাকে ডাস্টিং না করতে দেওয়াই ভালো। নেহাতই যদি করতে হয়, যেন মাস্ক পরে করে। যে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ধাত রয়েছে, বাসনকোসন ধোয়া বা গাছে পানি দেওয়ার মতো কাজ তাকে খুব বেশি না করতে দেওয়াই ভালো।
বাচ্চা যদি কোনো
কাজ করতে পারে, তার প্রশংসা করুন। বড়দের প্রশংসা পেলে ছোটরা যেমন খুশি হয়, তেমন খুব
কম জিনিসেই হয়। আর সেটা যদি বড়দেরই কোনো কাজ করে হয়, তাহলে তো কথাই নেই! ওকে বুঝিয়ে
দিন যে, আপনারা যে কাজগুলো করেন, সেগুলোই ও এত সুন্দরভাবে করতে পারছে মানে ও তো বড়
হয়েই গেছে! দেখবেন নিজেই কেমন দায়িত্ব নিতে শিখে যাবে। মাঝে মাঝে ছোটখাটো পুরস্কারও
দিন, কিন্তু সেটা মাঝে মাঝেই। কাজের বদলে জিনিস পাওয়ার অভ্যেস করিয়ে দেবেন না। আর
একটু বড় হওয়ার পর তাহলে বিনা জিনিসে কাজই করতে চাইবে না।
কাজ শেখানোর ক্ষেত্রে
দয়া করে জেন্ডার বিভাজন করবেন না। যদিও এখনকার অভিভাবকরা এমন ভুল সাধারণত করেন না,
কিন্তু কেউ কেউ এখনও করেন। অনেক সময় বাড়িতে আরও বড় কোনো গুরুজন থাকলে তারাও এ ধরনের
কথা বলতে পারেন। ছেলে হোক বা মেয়ে, সব প্রাথমিক কাজ সবার শিখে রাখা খুব জরুরি। কখনও
না কখনও নিজেরটা নিজেকে চালিয়ে নিতে হবেই, সে যে জেন্ডারই হোক।
অনেক সময় বাচ্চাকে
অতিরিক্ত আরামে রাখতে গিয়ে বাবা-মায়েরা ন্যূনতম স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষাটুকুও দেন
না তাকে। ঘরের ফ্যান চালানো কিংবা পানি ঢেলে খাওয়ার সময়ও সে আশা করে অন্য কেউ কাজটা
করে দেবে। এটা করবেন না, পরে কিন্তু ওকেই ভুগতে হবে। নিজের রান্না করা, খাবার গরম করে
নেওয়া, যে জায়গায় থাকছে সেটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এটুকু করা যে ওরই দায়িত্ব,
সারা জীবন কেউ ওর মুখের সামনে সবকিছু এগিয়ে দেবে না; এ বোধটা তৈরি হতে দিন। আবার উলটো
দিকটাও রয়েছে। বাচ্চাকে কাজ শেখানো মানে কাজগুলো যেন সে প্রথম প্রথম আপনার তত্ত্বাবধানেই
করে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ও যখন কোনো কাজ করতে হাতেকলমে শিখছে, তখন অন্যদিকে মন দেবেন
না। তাতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।