ফারহাত মাইশা অর্পা
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৩৮ পিএম
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৫৯ পিএম
ছবি : মঞ্জুরুল আলম
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যেতে চাইলে এইচএসসি পরবর্তী সময় উত্তম। এ সময়ে বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব হলে দূর ভবিষ্যতে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে প্রবেশ প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠে। তাই প্রয়োজন সঠিক তথ্য জানা ও প্রস্তুতি গ্রহণ। লিখেছেন ফারহাত মাইশা অর্পা
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর এখন শিক্ষার্থীদের ভর্তি পছন্দের তালিকায় যেমন, বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তেমনি অনেকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। আসলে উচ্চমাধ্যমিকের পরেই বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার মোক্ষম সময়। এইচএসসির পর বিদেশে পড়তে গেলে অনেক বিষয় সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে শেখা এবং স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে শেখার ফলে শিক্ষার্থীরা অন্যদের তুলনায় অধিক দক্ষভাবে চিন্তা ও কাজ করতে শেখে। উচ্চমাধ্যমিকের পর বাইরে পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রস্তুতিটি মূলত ডকুমেন্টগুলো রেডি করার প্রস্তুতি। বাইরে আবেদন করতে হলে অনেক রকমের ডকুমেন্টের দরকার পড়ে। আবার সব ডকুমেন্টের দরকার সব দেশে সমান নয়। কিছু কিছু দেশে আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি ডকুমেন্টেরও দরকার পড়ে।
পাসপোর্ট
বাইরে পড়াশোনা করতে যাবেন এ চিন্তা আপনার মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই আপনাকে দেখতে হবে আপনার পাসপোর্ট করা আছে কি না। বাইরে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আবেদন করার কিছু সময় আগে থেকেই পাসপোর্ট করে রাখতে হবে যাতে করে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার বেশি তাড়াহুড়া করতে না হয়। আবার বেশি সময় হাতে রেখে পাসপোর্ট করলে আপনি পাসপোর্ট বানানোর ক্ষেত্রে বাড়তি খরচও কিছুটা কমাতে পারবেন।
ইংরেজি দক্ষতা যাচাই
বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আপনাকে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো ভাষাগত দক্ষতা যাচাই করা। প্রত্যেকটি দেশে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা রয়েছে। আপনি যখন যে দেশে যাবেন তখন আপনাকে সে ভাষার দক্ষতা যাচাই স্কোরের ওপর ভিত্তি করে আপনি আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ কিংবা ভিসার জন্য নির্বাচিত হবেন। আপনার যদি টার্গেট থাকে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা যাওয়ার তাহলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার জন্য ভালো স্কোর অর্জন করতে হবে। বর্তমানে সারা-বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষার নাম হলো IELTS, GRE, GMAT, TOFEL ইত্যাদি।
একাডেমিক নথি একত্র করা
উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম যোগ্যতার প্রমাণ হলো বিগত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদগুলো। তাই স্কুল ও কলেজ থেকে ইস্যুকৃত প্রতিটি কাগজ সংরক্ষণ করা জরুরি। বিশেষ করে সার্টিফিকেট, মার্কশিট প্রতিটির প্রতিলিপিসহ মূল কপিগুলো একত্রে রাখতে হবে। অনুলিপিগুলো স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সত্যায়িত করে রাখা উত্তম।
তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নথিগুলোর ভাষা যদি ইংরেজি না হয়, তাহলে সেগুলো অনুবাদ করা। চীন, কোরিয়া, তুর্কি ও জার্মানির মতো ভিন্ন ভাষার দেশে অধ্যয়নের আবেদনের ক্ষেত্রেও শুধু ইংরেজিতে অনুবাদই যথেষ্ট। তবে অনূদিত সংস্করণগুলো অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা নোটারি পাবলিকের মতো জাতীয়ভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রত্যয়িত করে নেওয়া উচিত। একাডেমিক রেকর্ডের পাশাপাশি খেলাধুলা, সমাজকল্যাণমূলক বা শিল্পকলার কার্যক্রমগুলো থেকে প্রাপ্ত প্রশংসাপত্রগুলোও সংকলন করা উচিত। এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভর্তি প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখে।
কোথায় যেতে চাই
আমাদের দেশ থেকে মূলত দুই শ্রেণির মানুষ বাইরে পড়াশোনা করতে যান— এক শ্রেণি যেতে চান ফুল বৃত্তি নিয়ে এবং অন্য শ্রেণি যেতে চান নিজের খরচে। এ ছাড়াও আরও একটি শ্রেণি রয়েছে যারা ইদানীং কম খরচে বাইরে থেকে ভালো পড়াশোনার সুযোগ খুঁজে থাকেন। বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ থাকে ফান্ডিং বা অর্থায়ন নিয়ে। এ সমস্যা নিরসনের উপায় হচ্ছে স্কলারশিপগুলো। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা ধরনের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তৃতীয় বিশ্বের মেধাবীদের জন্য বৃত্তি ও ভাতার ব্যবস্থা করে। এ অর্থ সহায়তায় পড়াশোনার খরচসহ জীবনযাত্রার ব্যয়ভারও অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্কলারশিপগুলোর পূর্বশর্ত হিসেবে শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভাষা দক্ষতা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রবেশিকা পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক প্রভাব রাখে। তাই দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্কলারশিপগুলো নিয়ে গবেষণার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে। কয়েকটি দরকারি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের তালিকায় নজর রাখতে হবে—
ইউকে ও ইউরোপিয়ান স্কলারশিপের জন্য— http://surl.li/puyzxu
জার্মান স্কলারশিপের জন্য— http://surl.li/dewvys
যুক্তরাষ্ট্রের স্কলারশিপের জন্য— http://surl.li/iqtpna
পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের জন্য— https://www.fastweb.com/
https://www.scholars4dev.com/
বৃত্তিগুলোর আবেদনের সাধারণ সময়কাল ডিসেম্বর থেকে মে এর মধ্যে প্রতি বছর। তাই এইচএসসি পাস করার পর আপনি হাতে বেশকিছু দিন সময় পাবেন। এ ছাড়াও আপনি দেখতে পারেনÑ ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট বৃত্তি, ইন্দোনেশিয়া গভর্নমেন্ট বৃত্তি, মিসর গভর্নমেন্ট বৃত্তি, রাশিয়ান গভর্নমেন্ট বৃত্তি, আজেরবাইজান গভর্নমেন্ট বৃত্তি, চাইনিজ গভর্নমেন্ট বৃত্তি, জাপান গভর্নমেন্ট বৃত্তি, রোমানিয়ান গভর্নমেন্ট বৃত্তি, হাঙ্গেরিয়ান গভর্নমেন্ট বৃত্তি, ব্রুনেই দারুসসালাম গভর্নমেন্ট বৃত্তি ও তুর্কিশ গভর্নমেন্ট বৃত্তির তথ্য।
কী কী পরীক্ষা দেওয়া লাগবে
উচ্চমাধ্যমিকের পরে বাইরে পড়াশোনার ক্ষেত্রে মনে হয় সবচাইতে বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে এ বিষয়টি নিয়ে। কেবল আমেরিকার ক্ষেত্রে স্যাট লাগে তাও ক্ষেত্র বিশেষে। এ ছাড়া পৃথিবীর বাকি দেশগুলোতে আপনি কেবল IELTS পরীক্ষা দিয়েই আবেদন করতে পারবেন। আবার কিছু কিছু দেশ যেমন, চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, তাইওয়ান এ দেশগুলোতে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের নিজেদের ভাষায় পড়াশোনা করতে হবে। তাই এসব ক্ষেত্রে IELTS এর দরকার নেই।
প্রফেশনাল রাইটিং
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের একটি ভীতি হলো একাডেমিক রাইটিং অথবা প্রফেশনাল রাইটিং। বিভিন্ন ভার্সিটিতে বৃত্তির জন্য আবেদন করার পূর্বে আপনার এসওপি, কিছু রিটেন স্যাম্পল ওদের দিতে হয় যেমন, আপনি যে স্টেটমেন্ট অব পারপাস টা দেবেন, সেটাতেও আপনার অনেক একাডেমিক রাইটিং লিখতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের রিটেন স্যাম্পল, রিটেন এসএ দেওয়ার দরকার হয়ে থাকে, এবং এ রিটেন স্যাম্পল গুলোই একাডেমিক হয় যা অনেক বেশি প্রফেশনাল। তাই এর ভালো প্র্যাকটিস থাকা অনেক জরুরি।