× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৩০০ বছরের পুরোনো কালভৈরব মন্দির

সুমন্ত গুপ্ত

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৫ এএম

কালভৈরব মন্দির

কালভৈরব মন্দির

অনেক দিন হলো কোথাও যাওয়া হয় না। তাই ঘুরতে যেতে মন চাইছিল কোথাও। শুক্রবার তাই সূর্য্যি মামা নয়ন মেলার পরই ফোন দিলাম আমাদের চার চাকার পাইলট পলাশ ভাইকে। ফোন ধরেই পলাশ ভাইকে বললাম আপনি ফ্রেশ হয়ে বাসায় চলে আসেন বাইরে বের হব। স্বল্প সময় পরই পলাশ ভাই বাসায় এসে উপস্থিত। সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়লাম। গাড়িতে উঠতেই পলাশ ভাই বলে উঠলেন কোথায় যাব। আমি বললাম, কোথায় যাব তা তো জানি না, ঢাকামুখী চলেন দেখি কোথায় গিয়ে থামা যায়। তপ্ত রোদে মহাসড়ক পেরিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। চলতি পথে জাদুর বাক্স ঘাঁটছিলাম। আমি মোবাইলকে জাদুর বাক্স বলি, কেননা এই জাদুর বাক্সের নেশা থেকে বের হওয়া খুব কঠিন। যাই হোক জাদুর বাক্সের কল্যাণে চোখে পড়ল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডায় অবস্থিত ৩০০ বছরের পুরোনো শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দিরের কথা। পলাশ ভাইকে বললাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানে যাওয়ার জন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালভৈরব মন্দিরের গিয়েছেন কি না জানতে চাইলে পলাশ ভাই বললেন, যাই নাই কখনও তবে নেটে সার্চ দিয়ে বের করা যাবে। 

পলাশ ভাইয়ের কথা শুনে মনে হলো, আসলেই আমরা ডিজিটাল যুগে আছি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে আমরা মহাসড়কে আছি। নির্মীয়মাণ ছয় লেনের সড়ক ধরে এগিয়ে চলছি। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলায় গাড়ি একটু ধীরগতিতেই চলছিল। পলাশ ভাই বললেন, সড়কটি আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলায় ঢুকেছে। আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড়, সেখান থেকে আখাউড়ার ধরখার। পরে ঢুকেছে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায়। সড়কটির কাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহনে উন্মুক্ত হবে নতুন দিগন্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের মেড্ডা এলাকায় যখন আমাদের গাড়ি থামল তখন সূর্য হেলান দিয়েছে পশ্চিম কোণে। সড়ক থেকেই চোখে পড়ে মন্দিরটির বিশাল তিনটি মঠ। একটু সামনে এগোতেই গেট ঠেলে পা রাখতে রাখতেই দৃষ্টি পড়ল খোদাই করা লেখার দিকে। লেখা ‘শ্রী শ্রী কালভৈরব নাটমন্দির’। নেট ঘেঁটে পলাশ ভাই নিয়ে এলেন শত বছরের পুরোনো কালভৈরব মন্দিরের প্রবেশদ্বারে। আমরা এগিয়ে চললাম মন্দির পানে। দর্শন পেলাম ২৮ ফুট উঁচু শ্রী শ্রী কালভৈরব মূর্তির। মাথা ঠেকে আছে মন্দিরের ছাদে। প্রশস্ত মধ্য প্রদেশ উঁচিয়ে পায়ের ওপর হাত রেখে বসে আছেন শিব, জটা বিছিয়ে কাঁধজুড়ে। হাতের ডান পাশে বিশাল এক ত্রিশূল। সামনে থেকে না দেখলে মূর্তিটির বিশালতা আন্দাজ করা যায় না। আগরবাতির সুবাসিত গন্ধে মন নিয়ে গেল এক অপার্থিব জগতে। কথা হচ্ছিল ওই এলাকার প্রবীণ শিবু বাবুর সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ১৯০৫ সালে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ২৮ ফুট উচ্চতার কালভৈরব বা শিবমূর্তি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাধিক উচ্চতার মূর্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশালাকার মূর্তির ডানদিকে কালী এবং বামদিকে দেবী পার্বতীর প্রতিমা রয়েছে। সরাইলের বিখ্যাত জমিদার নূর মোহাম্মদ কালভৈরব মন্দিরের জমি দান করেন। প্রচলিত আছে, কাশীশ্বর দেবাদিদেব মহাদেব নিজ শরীরের অংশ থেকে কালভৈরবের সৃষ্টি করে তাকে কাশীধাম রক্ষার ভার প্রদান করেন। শ্রী শ্রী কালভৈরবের আবির্ভাবের পর স্থানীয় দুর্গাচরণ আচার্য স্বপ্নে প্রাপ্ত নির্দেশ অনুসারে মাটি দিয়ে বিশালাকার কালভৈরবের বিগ্রহ (মূর্তি) তৈরি করেন। নির্মাণের পর থেকে স্থানীয় ভক্তবৃন্দের সহায়তায় ১৯৭১ সাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবে পূজা-অর্চনা হয়ে আসছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কালভৈরবের বিগ্রহটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী মহারাজ ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় আবারও ২৮ ফুট উঁচু শ্রী শ্রী কালভৈরব মূর্তি ও মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দিরের বামপাশে আলাদা ভবনে ১০৫ বছরের পুরোনো ১১ কেজি ওজনের কষ্টিপাথরের শ্রী শ্রী কৈলাসেশ্বর শিবলিঙ্গ রয়েছে। 

শ্রী শ্রী কালভৈরব বিগ্রহ ছাড়াও প্রাচীনতম এই মন্দিরে আরও আছে দেবী পার্বতী, শ্রী শ্রী কৈলাসেশ্বর শিবলিঙ্গ, কালী মূর্তি, দুর্গা মন্দির, সরস্বতী দেবী, শ্রী শ্রী কালভৈরব নাটমন্দির এবং দুটি মঠ। প্রতি বছর বাংলা সালের ফাল্গুনী শুক্লা সপ্তমী তিথিতে এখানে ৪ দিনব্যাপী পূজা, হোমযজ্ঞ, মেলাসহ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। তখন শ্রীলঙ্কা, ভারত, মালদ্বীপ, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পূজারি, ভক্ত এবং দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠে কালভৈরব মন্দির প্রাঙ্গণ। মন্দিরটি পরিদর্শনের সময় দেখতে পেলাম দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজনা এসেছেন কালভৈরব মন্দির দর্শনে। কেউবা এসেছেন মনবাঞ্ছা পূরণের নিমিত্তে আবার কেউবা এসেছেন মনবাঞ্ছা পূরণের পর পূজা দিতে।

সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের মতে, কালভৈরব হচ্ছেন সনাতন ধর্মালম্বীদের দেবতাবিশেষ। সংস্কৃত শব্দ ‘ভৈরব’-এর অর্থ ভয়ংকর বা ভয়াবহ; যা শিবের একটি হিংস্র প্রকাশ। এর সঙ্গে মৃত্যু ও বিনাশ সম্পর্কিত। তাই কালভৈরবকে মনে করা হয় মহাদেব শিবের রুদ্ররূপ। দুষ্টশক্তির বিনাশ করতে মহাদেব এই রুদ্ররূপ ধারণ করেন। হিন্দু পুরাণ, বজ্রযানী বৌদ্ধশাস্ত্র এবং জৈন ধর্মগ্রন্থগুলোর বক্তব্য অনুযায়ী, ‘মহাজগতের বিশেষ স্থানগুলো ভৈরব রক্ষা করেন। ভৈরবের মোট সংখ্য ৬৪। তাদের আটটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। প্রতিটি শ্রেণির আবার একজন করে প্রধান ভৈরব রয়েছেন। প্রধান আট ভৈরবকে ‘অষ্টাঙ্গ ভৈরব’ বলা হয়। এই আটজন মহাবিশ্বের আটটি দিকের অধিপতি। এই আটজন আবার নিয়ন্ত্রিত হন মহাস্বর্ণ কালভৈরবের দ্বারা। তিনি সাধারণভাবে কালভৈরব নামেই পরিচিত।

কীভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ কিংবা যাত্রাবাড়ী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে চলাচলকারী বাসে চড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলাস্থ বিশ্বরোড আসা যায়। সরাইল বিশ্বরোড এসে রিকশা বা সিএনজির মতো স্থানীয় পরিবহনে মেড্ডা এলাকায় অবস্থিত কালভৈরব মন্দির যেতে পারবেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা