বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র নারী
ফারহাত মাইশা অর্পা
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৫৫ এএম
দেশের প্রথম নারী রেসিং ড্রাইভার কাশফিয়া আরফা
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র নারী রেসিং ড্রাইভার হিসেবে কাশফিয়া আরফা এশিয়ান অটো জিমখানা চ্যাম্পিয়নশিপে মিক্সড-ডাবল ক্যাটাগরিতে সেকেন্ড রাউন্ডে ষষ্ঠ স্থান জিতে নিয়েছেন। আরফা এফআইএ (ফিয়া) এএসএন জাতীয় রেসিং লাইসেন্সের অধিকারী। এ কৃতিত্ব শুধু আরফার ক্যারিয়ারের জন্য নয়, বাংলাদেশের মোটরস্পোর্টস কমিউনিটির জন্যও মাইলফলক। লিখেছেন- ফারহাত মাইশা অর্পা
দেশের প্রথম এবং একমাত্র নারী রেসিং ড্রাইভার হিসেবে কাশফিয়া আরফা এশিয়ান অটো জিমখানা চ্যাম্পিয়নশিপে মিক্সড-ডাবল ক্যাটাগরিতে সেকেন্ড রাউন্ডে ষষ্ঠ স্থান জিতে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আরফা এফআইএ (ফিয়া) এএসএন জাতীয় রেসিং লাইসেন্সের অধিকারী। আরফা পড়াশোনা করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে, যেখানে তিনি হ্যান্ডবল টিমেও ছিলেন। বর্তমানে অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে কাজ করছেন।
কাশফিয়া আরফা বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা রেসিংচালক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। প্রতিযোগিতায় কাশফিয়া চালিয়েছেন একেবারে নতুন একটি গাড়ি। একটি নতুন ট্র্যাক লে-আউটে তিনি পার করেন তার প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। সেখানেই আরফা দেখিয়েছেন তার দক্ষতা। এ অনুষ্ঠানের পর সমাজমাধ্যমে আরফা দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য গর্ব করেন। অটো রেসিংয়ে নিজের যাত্রা নিয়ে আরফা বলেন, ‘আমি শৈশব থেকেই ফর্মুলা ওয়ান পছন্দ করি এবং রেসিং জগতের অংশ হওয়া সব সময়ই আমার স্বপ্ন ছিল। আমি ২০১৮ সালে নিয়মিত গাড়ি চালানো শুরু করি। আমার সঙ্গী আলিফ হোসেন খান সে আবেগকে পেশায় পরিণত করার জন্য আমাকে উৎসাহিত ও সমর্থন করেন। তিনি না থাকলে আমি এমন পদক্ষেপ নিতাম না।’
এক গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে নিজের কার রেসিংয়ের প্রফেশনাল যাত্রার প্রথম পদক্ষেপের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘এটি অনানুষ্ঠানিক গাড়ি মিটআপ এবং কমিউনিটিতে যোগদানের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। এ বছরের শুরুর দিকে এক বন্ধু আরহাম রহমান আমাকে অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (AAB)-এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাদের মাধ্যমে আমি আন্তর্জাতিক মোটরস্পোর্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছি। AAB-এর পরিচালক এবং সভাপতি অবিশ্বাস্যভাবে সমর্থন করেছেন, এমনকি FIA Motorsports-এর মতো ইভেন্টের জন্য আমাকে স্পনসর করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘AAB বাংলাদেশের একমাত্র সংস্থা যা FIA রেসিং লাইসেন্স প্রদান করে। যোগ্যতা অর্জনের জন্য আমি পাঁচটি জাতীয় রেসিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। প্রশিক্ষণ নিয়েছি এবং দেশের শীর্ষ ৩০ জন ড্রাইভারের মধ্যে স্থান পেয়েছি। অবশেষে যখন আমি এফআইএ লাইসেন্স পাই এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পাই তখন এটি দারুণ অনুভূতি ছিল।’ কাশফিয়া আরফা বলেন, ‘এএবি স্পনসর দিয়েছে। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগ করে দিয়েছি। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ও তা জয় করা প্রসঙ্গে আরফার মন্তব্য হলো- একজন নারী রেসার হিসেবে প্রথম চ্যালেঞ্জটি গুরুত্বসহকারে নেওয়া হচ্ছিল। এখানে মোটরস্পোর্ট অনেকটা পুরুষপ্রধান এবং এর মধ্য দিয়ে যাওয়া কঠিন। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি ছিল প্রযুক্তিগত। বাঁ হাতের একটি গাড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্য করা এবং একটি নতুন ট্র্যাক বিন্যাস শেখা।
যেসব মেয়ে এ খেলায় আসতে চান তাদের উদ্দেশে এ রেসার বলেন, ‘নেতিবাচক কথা শুনবেন না। মানুষের কাছে সব সময় কিছু বলার থাকবে, কিন্তু আপনি যদি আবেগপ্রবণ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন তবে যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারবেন। আপনার লক্ষ্যগুলোয় মনোনিবেশ এবং কঠোর পরিশ্রম করা অপরিহার্য। আমি যদি বাধাগুলো ভেঙে দিতে পারি, আমি নিশ্চিত অন্যরাও পারবেন। শুধু আপনার স্বপ্ন অনুসরণ করুন, এমনকি যখন রাস্তা কঠোর মনে হয়। আপনি আপনার পরিবারকে গর্বিত করবেন এবং চলার পথে অন্য মেয়েদের অনুপ্রাণিত করবেন।’
নিজের পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে আরফা বলেন, ‘আমি ১৭ অক্টোবর মালয়েশিয়ান ফেস্টিভ্যাল অব স্পিড এবং ২০২৪ সালে স্পেনের ভ্যালেনসিয়ায় FIA মোটরস্পোর্টস ইভেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো স্পেনে FIA বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। আমার অধিনায়ক, রাসেল রহমান এবং অভিক আনোয়ার দারুণ পরামর্শদাতা। সর্বোপরি, আমি বাংলাদেশের আরও মেয়েদের মোটরস্পোর্টে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করতে চাই।’
সমাজমাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে আরফা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা রেসিং ড্রাইভার এবং এফআইএ এএসএন জাতীয় রেসিং লাইসেন্সের ধারক হতে পেরে আমি গর্বিত!’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘এটি মাত্র শুরু! আরও অনেক কিছু আসতে হবে!’ এ কৃতিত্ব শুধু আরফার ক্যারিয়ারের জন্য নয়, বাংলাদেশের মোটরস্পোর্টস কমিউনিটির জন্যও মাইলফলক। আরফা দেশের মেয়েদের মোটরস্পোর্টসকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার অনুপ্রেরণা দেন। তিনি মনে করেন, তার এ অর্জন অন্য অনেককে অনুপ্রেরণা দেবে।