× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আপন পরিচয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী

শত বছরের ঐতিহ্য

ইফতেয়ার রিফাত

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১২:১০ পিএম

আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৫১ পিএম

 শত বছরের ঐতিহ্য

টাঙ্গাইলের চমচম, মুক্তাগাছার মন্ডা, নাটোরের কাঁচাগোল্লা বা বগুড়ার দইয়ের মতোই আমাদের দেশের মিষ্টপ্রিয় মানুষের মুখে মুখে ফেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীর নাম। ওপরে হালকা চিনির আবরণ। কামড় দিতেই দাঁত বসে যায় ছানার পুরে। সেইসঙ্গে মিষ্টিঘ্রাণ, জিবে জল না এসে উপায় কী! এক-দুই বছর নয়, ছানামুখীর এ সুনাম ও ঐতিহ্য প্রায় ২০০ বছরের।

জনশ্রুতি আছে, মহাদেব পাঁড়ে নামে এক মিষ্টির কারিগর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন ভাগ্যান্বেষণে। কাজ শুরু করেন শহরের মেড্ডায় শিবরাম মোদকের মিষ্টির দোকানে। মৃত্যুর সময় শিবরাম তার দোকান মহাদেবকে দিয়ে যান। এ মহাদেব পাঁড়েই হলেন ছানামুখী মিষ্টির আবিষ্কারক।

কিছুদিন যেতেই তার বানানো মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। দীর্ঘদিন একই জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে খাবারটি। তৎকালীন ব্রিটিশ কর্মকর্তা থেকে আমজনতা সবাই এর স্বাদে মুগ্ধ ছিলেন। কথিত আছে, মহাদের পাঁড়ের বানানো একটি বিশেষ ধরনের মিষ্টি খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং এবং তার স্ত্রী লেডি ক্যানিং। তখন সেই মিষ্টির নাম রাখা হয় লেডি ক্যানিং। অনেকের মতে, সেই লেডি ক্যানিং হলো ছনামুখীর আরেক নাম।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ মিষ্টান্ন জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

জেলা প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ডিপিডিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে নিশ্চিত করে। ডিপিডিটিতে ছানামুখী ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নম্বর ৪১।

২৪ সেপ্টেম্বর ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো জিআই সনদে উল্লেখ রয়েছে, ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন বইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের নামে ২৯ ও ৩০ শ্রেণিতে জিআই-৭৫ নম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি পণ্যের জন্য চলতি বছরের ৮ এপ্রিল নিবন্ধিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম প্রথমে ও পরে সদ্যোবিদায়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান গত ২ এপ্রিল ছানামুখী মিষ্টান্নকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) খাবার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ডিপিডিটির রেজিস্ট্রারের কাছে একটি আবেদন পাঠান। সেখানে ছানামুখী মিষ্টির বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক নাম, ছানামুখীর বর্ণনা, উৎপাদনের পদ্ধতিসহ নানা বিষয় বিস্তারিত উল্লেখ করেন।

আদর্শ মাতৃভান্ডারের স্বত্বাধিকারী রাখাল মোদকের ছেলে দুলাল চন্দ্র মোদক জানান, তারা বংশানুক্রমিক ছানামুখী তৈরি করে আসছেন। ছানামুখী তৈরির কয়েকটি ধাপ রয়েছে। ১ কেজি ছানামুখী মিষ্টি তৈরিতে প্রয়োজন হয় ৭ থেকে ৮ লিটার দুধ এবং প্রয়োজনমতো চিনি। প্রথমে গাভির দুধ জ্বাল দিতে হবে। এরপর গরম দুধ ঠান্ডা করে ছানা কাটানো হয়। ছানা হয়ে গেলে তা থেকে পানি ঝরানোর জন্য রাখা হয় পরিষ্কার টুকরিতে। পরে ওই ছানা দীর্ঘ সময় কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতে হয়, যাতে সব পানি ঝরে যায়। এভাবে দীর্ঘ সময় ঝুলিয়ে রাখলে ছানা শক্ত হয়ে যায়। কারিগররা এ শক্ত ছানা ছুরি দিয়ে কেটে ছোট ছোট টুকরো করে নেন। এরপর চুলায় একটি কড়াই বসিয়ে তাতে পানি, চিনি ও এলাচ দিয়ে ফুটিয়ে চিনির শিরা তৈরি করে ছানার টুকরোগুলো সেই শিরায় ছেড়ে নাড়তে হয়। সবশেষে চিনির শিরা থেকে ছানার টুকরোগুলো তুলে একটি বড় পাত্রে শুকানোর জন্য রাখা হয়। আর এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে ছানামুখী। দুলাল চন্দ্র মোদক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া জেলার জন্য সম্মানের। এর কারিগর হিসেবে বিষয়টা আমাদের জন্যও আনন্দের। আমরা খুশি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘মিষ্টির জন্য প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাদা কদর আছে ছানামুখীর। এর পুরোটাই শুকনো ছানা দিয়ে তৈরি। পানি ঝরিয়ে নিয়ে চিনির শিরায় জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় মিষ্টান্নটি। এর কদর ব্যাপক। মানুষ কিনতে আসে দূরের জনপদ থেকেও।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাইরে থেকে ছানামুখী কিনতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এ অঞ্চলের ছানামুখীর কথা শুনছি। আজ বেড়াতে এসে ছানামুখী চেখে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। তাই কয়েক কেজি কিনে নিলাম।’

তৈরির জন্য কেটে রাখা ছানামুখী

শহরের মিষ্টান্ন ভান্ডারের দোকানি বলেন, ‘গরমকালে ছানামুখীর চাহিদা বেশি থাকে। তবে শীতকালেও আমরা প্রতিদিন ১০-১৫ কেজি ছানামুখী বিক্রি করতে পারি। বিভিন্ন দেশে থাকা স্বজনদের জন্য পাঠানো হয় এ মিষ্টি। তা ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়াতে এসে এ মিষ্টি না খেয়ে যাবেন এমন মানুষের দেখা পাওয়া দুষ্কর।’ মহাদেবপট্টির আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডারের দোকানিরা জানান, প্রতি কেজি ছানামুখী ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্রি হয়। জেলার বাইরেও অনেক মিষ্টি দোকানি এখান থেকে কারিগর নিয়ে ছানামুখী তৈরি করেন। তিনি বলেন, ছানামুখী খুচরা বিক্রি থেকে পাইকারি বিক্রি বেশি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারিভাবে ছানামুখীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। জেলার ব্র্যান্ডবুকেও একে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিদেশি অতিথিসহ মন্ত্রী পর্যায়ের যারাই আসেন, ছানামুখী দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা