× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ওয়ার্ল্ড ওয়াটার কংগ্রেস অ্যান্ড এক্সিবিশন

সেঁওতির বিশ্বজয়

নাদিম মজিদ

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৩ পিএম

আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৪ পিএম

সুপেয় পানির টেকসই সমাধান নিয়ে কাজ করেন সাবরিনা রশিদ সেঁওতি

সুপেয় পানির টেকসই সমাধান নিয়ে কাজ করেন সাবরিনা রশিদ সেঁওতি

সম্প্রতি কানাডার টরন্টোয় অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াটার কংগ্রেস অ্যান্ড এক্সিবিশন ২০২৪। ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইয়ং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড জেতেন সাবরিনা রশিদ সেঁওতি। তার গল্প শোনাচ্ছেন নাদিম মজিদ

ছোটবেলা থেকে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে সেঁওতি জেনে আসছেন বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এ দেশে পানির অভাব থাকার কথা নয়। একটু বড় হলে জানেন, বাংলাদেশে পানি সহজলভ্য হলেও সুপেয় পানি সহজলভ্য নয়। আমাদের দেশের পানিতে অনেক রকম সমস্যা রয়েছে। এসবের সমাধান হিসেবে প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা মাথায় আসত তার। সে লক্ষ্যে ইন্টারমিডিয়েটের পরে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নিজের অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিসে যুক্ত হন। চারপাশে কী হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করেন। বিশ্বব্যাপী পানি নিয়ে কী কী সমস্যা তৈরি হচ্ছে এবং সমাধানের দিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখেন।

২০১৮ সালে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় জানতে পারেন হল্ট প্রাইজ প্রতিযোগিতার কথা। সে প্রতিযোগিতায় জমা দিতে হয় সামাজিক সমস্যা সমাধানের আইডিয়া। গুরুত্ব দেওয়া হয় খাদ্য নিরাপত্তা, পানি সহজলভ্যতা, শিক্ষা এবং জ্বালানিসংক্রান্ত আইডিয়া। প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত বিজয়ীদের আইডিয়া বাস্তবায়নে দেওয়া হয় ১ মিলিয়ন ডলার। এটাকে বলা হয় ‘নোবেল প্রাইজ ফর স্টুডেন্ট’। বিচারকরা দেখেন তাদের আইডিয়া এবং বাস্তবায়নের উপায়। হল্ট প্রাইজ প্রতিযোগিতার আয়োজক হল্ট ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল। পুরস্কার দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।

সে প্রতিযোগিতায় তারা চার বন্ধু মিলে বানিয়ে নেন টিম টেট্রা নামের দল। সেঁওতি ছাড়াও দলে ছিলেন নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের মোবাশ্বির তাহমীদ এবং আসিফ হোসেন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাব্বির করীম। দলটি গোছানোর সময় তারা খেয়াল করেন তাদের দলে রয়েছে দারুণ কম্বিনেশন। তাহমীদ ভালো এক্সিকিউশনে, ফাইন্যান্সে দারুণ আসিফ, আইডিয়েশন ও ডিভাইস তৈরিতে দক্ষ সাব্বির এবং ম্যানেজমেন্টে ভালো সেঁওতি। সে সময় সেঁওতি সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। হল্ট প্রাইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় তাদের দলের নাম কী হতে পারে তা তাদের মাথায় আসছিল না। যেহেতু তাদের চারজনের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো, তাই তারা সেখান থেকে টেট্রাকে তাদের নাম হিসেবে বেছে নেন। টিম টেট্রা সে বছর হল্ট প্রাইজ প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় পর্যায় পেরিয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে ফাইনালিস্ট হয়। হল্ট প্রাইজে চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ী হলে সে আইডিয়া বাস্তবায়নের জন্য অনুদান দেওয়া হয়। আঞ্চলিক পর্যায়ে ফাইনালিস্ট হওয়ায় খ্যাতি মিললেও মেলেনি অনুদান। তবে সে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায় তাদের আইডিয়া পেয়েছিল আন্তর্জাতিক রূপ। যা একই বছরে ইউএনডিপি ও ইউনিলিভার আয়োজিত সেফ ওয়াটার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে বিজয়ী হতে সহযোগিতা করে। বিজয়ী হওয়ায় এ প্রজেক্ট পাইলটিং করার জন্য ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

সার্ভে করতে গিয়ে বিপত্তি

২০১৯ সালে টিম টেট্রা তাদের সলিউশন তৈরির কাজ শুরু করে। শুরুতে তারা সাতক্ষীরার গাবুরায় যান। সেখানকার পানি কী পরিমাণ নোনাযুক্ত তা বের করার জন্য তাদের দলের সদস্য আসিফ নিজে সেখানকার নোনা পানি খেয়ে পরীক্ষা করেন। সার্ভে করে ফেরার পথে তার পেট খারাপ হয়। ঢাকায় আসতে আসতে কাহিল অবস্থা। যদিও সরাসরি পানি না খেয়েও পরীক্ষা করা যেত, কিন্তু নিজে পানি খাওয়ায় টিমের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে বকুনি খেতে হয়েছিল সেদিন। তাদের এক সদস্যের পেট খারাপ হওয়ায় তারা সেসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনীয়তা ভালোভাবে উপলদ্ধি করেন।

গাবুরায় পাইলটিং

২০২১ সালে পাইলটিংয়ের কাজ শুরু করা হয় সাতক্ষীরার গাবুরা ইউনিয়নের একটি বাড়িতে। সেখানকার পানি নোনা। সুপেয় পানি পাওয়াটাই দুষ্কর। সেখানে পাঁচজনের একটি পরিবারের জন্য হাউসহোল্ড সমাধান করেন। তারা সমাধানটি তৈরিতে ব্যবহার করেন সৌরবিদ্যুৎ; যা সমাধান টেকসই করতে সাহায্য করে।

কমিউনিটিভিত্তিক এটিএম বুথ

পাইলটিং করার সময় তারা দেখেন প্রতিটি বাড়িতে আলাদা সলিউশন করলে খরচ বেড়ে যায় অনেক; যা বেশিরভাগ পরিবারের সাধ্যের বাইরে হয়ে থাকে। এ সমস্যা সমাধানে তারা কমিউনিটিভিত্তিক সমাধানকে বেশি গুরুত্ব দেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াটার এটিএম বুথ বসালে সেখান থেকে মানুষ কার্ডের সাহায্যে পানি নিতে পারবে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বর্তমানে খুলনায় চারটি প্লান্ট কাজ করছে। এ বছরের শেষ নাগাদ খুলনা ও সাতক্ষীরায় তাদের প্লান্টের সংখ্যা দাঁড়াবে ১২-তে।

সামাজিক ব্যবসা

টেট্রা তাদের এ প্রজেক্টকে সামাজিক ব্যবসা হিসেবে এগিয়ে নিচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় এটিএম বুথ মেইনটেন্যান্সের জন্য যিনি দায়িত্বে থাকছেন, তিনি একজন নারী। তিনি স্থানীয় গ্রাহকদের পজ মেশিনের সাহায্যে কার্ড রিচার্জ দেন। প্লান্টের ব্যাকওয়াশ করেন। এটিএম বুথের আয় থেকে তিনি একটি অংশ পান। তিনি তার অন্যান্য দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি এখানে মেইনটেন্যান্স করে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন।

ইউক্রেনের রিফিউজি ক্যাম্পে

টেট্রার উদ্ভাবিত সৌর সমাধান ব্যবহার হচ্ছে ইউক্রেনের শরণার্থী শিবিরে। সেখানে তারা সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিশুদ্ধ পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। নামিবিয়ায়ও এ ধরনের সমাধান দিতে কথাবার্তা চলছে।

সেঁওতির পুরস্কার

গত ১১-১৫ আগস্ট কানাডার টরন্টোয় অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াটার কংগ্রেস অ্যান্ড এক্সিবিশন ২০২৪। ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এ আয়োজনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইয়ং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড জেতেন সাবরিনা রশিদ সেঁওতি। এ পুরস্কার প্রদানের জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল চলতি বছরের মার্চে। সেখানে সেঁওতি আবেদন করেছিলেন। আবেদন করার পর ওয়াটার এন্ট্রাপ্রেনারশিপের ওপর ডকুমেন্টেশন চাওয়া হয়। সেঁওতি বাংলাদেশে করা টেট্রার উদ্যোগ তুলে ধরেন। উপস্থাপন করেন বিভিন্ন জার্নালে তার প্রকাশিত ২০+ প্রকাশনার কথা। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টায় মাস্টার্স করতে যাওয়ার আগে শিক্ষকতা করেছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে। এ পুরস্কার বিজয়ের ক্ষেত্রে তার এসব অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছিল।

১১ আগস্ট সেঁওতি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ইয়ং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল উল্লেখযোগ্য অর্জন প্রদর্শন এবং আউটস্ট্যান্ডিং নেতৃত্ব সম্ভাবনার স্বীকৃতি হিসেবে; যা ৩৫ বছরের নিচে থাকা পানি পেশাজীবীদের দেওয়া হয়। একই প্রোগ্রামে ১৩ আগস্ট তার প্রতিষ্ঠান টেট্রা জিতেছিল আইডব্লিউএ প্রজেক্ট ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড। তাদের সলভিং কোস্টাল স্যালানিটি প্রজেক্টের জন্য গভর্ন্যান্স, ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

হতে চান গ্লোবাল ওয়াটার সলিউশন হাব

শুধু বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসা হিসেবে কাজ করতে চায় না টেট্রা। তাদের লক্ষ্য তারা বিশ্বব্যাপী ওয়াটার সলিউশন হাব হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবে। নিম্ন  আয়ের মানুষের জীবনে একটি দারুণ প্রভাব ফেলতে পারবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা