× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিপ্পিপাড়ার মোরগঝুঁটি

ইমরান অনিক

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১৬ এএম

সিপ্পিপাড়ার মোরগঝুঁটি

সিপ্পি রেঞ্জে পাহাড়চূড়া তিনটি। মূল সামিট চূড়াটি দূর থেকে চেনা গেলেও যতই কাছে আসতে থাকবেন, ততই সে লুকোচুরি খেলতে শুরু করবে অন্য চূড়াগুলোর আড়ালে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়াগুলোর মধ্যে সিপ্পি আরসুয়াং অন্যতম, যার উচ্চতা আনুমানিক ৩০০৫ ফুট। লিখেছেন ইমরান অনিক

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়াগুলোর মধ্যে সিপ্পি আরসুয়াং (Sippi Arsuang) অন্যতম, যার উচ্চতা আনুমানিক ৩০০৫ ফুট; যা বাংলাদেশের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ চূড়া। সিপ্পি আরসুয়াং পাহাড়ের অবস্থান বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার অনেক গহিনে। রোয়াংছড়িতে অবস্থিত এ পাহাড় বিগিনারদের জন্য আদর্শ ট্রেক হতে পারে। সময়ও কম লাগে।

মাত্র তিন দিনেই এই ট্রেক শেষ করে আসা যায়। রনিনপাড়া থেকে সিপ্পি ট্রেইল ধীরে ধীরে আকাশমুখী হয়েছে। সিপ্পি রেঞ্জে পাহাড়চূড়া তিনটি। মূল সামিট চূড়াটি দূর থেকে চেনা গেলেও যতই কাছে আসতে থাকবেন, ততই চোখে ধুলো দিতে সে লুকোচুরি খেলতে শুরু করবে অন্য চূড়াগুলোর আড়ালে। মোট চারটি ধাপ, মানে চারটি পাহাড় অতিক্রম করে পৌঁছাতে হবে সিপ্পি চূড়ায়।

বিভিন্ন আদিবাসী ভাষায় এর নাম বিভিন্ন রকম। বম জাতিরা বলে- সিপ্পি, তংঞ্চঙ্গ্যা বলে- রামেতং, মারমা বলে- রামাতং, পাংখোয়া বলেÑ আরসুয়াং; যার অর্থ মোরগের ঝুঁটি। এ ছাড়া রামজুমসহ অনেক নামে ডাকে। সিপ্পিপাড়া থেকে যে তিনটি চূড়া দেখা যায় তার দক্ষিণের চূড়ার বাম পাশের টাই সিপ্পি। মাঝেরটি আরসুয়াং, ডানেরটির নাম তংখংতং। কেউ কেউ আবার দক্ষিণেরটিকে সিপ্পি আরসুয়াংও বলে। তবে যত নামই থাকুক, ভ্রমণকারীদের কাছে এই পাহাড় পরিচিত সিপ্পি আরসুয়াং নামেই।

সিপ্পি থেকে শঙ্খমুনীপাড়াসহ বেশ কয়েকটি পাড়া দেখা যায়। সিপ্পির চূড়ায় নাকি আগে ব্রিটিশদের একটি ক্যাম্প ছিল। রনিনপাড়ার আগমুহূর্তে একটা খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়, ওটা থেকে সিপ্পি দেখা যায়। শোনা যায়, সিপ্পির চূড়ার জঙ্গলে নাকি বাঘ থাকে। এ ছাড়া ওই জঙ্গলে নাকি হরিণ আর শূকর বেশ সহজলভ্য। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের দিকে সিপ্পির জঙ্গলে পেতে রাখা ফাঁদে হরিণ ধরা পড়েছিল। পরে শিকারিরা সেই হরিণ আনতে গিয়ে ভুক্তাবশেষ খুঁজে পায়। তবে নিজের চোখে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কেউই বাঘ দেখেনি। পলি প্রাংশা ট্রেইল থেকে উত্তরদিকে তাকালে এই দুটি পাহাড়ের দিকে আপনার চোখ আটকে যাবেই। একটি পাহাড় চোখা হয়ে উঠে গেছে তো আরেকটি পাহাড় দেখতে ঠিক টেবিলের মতো।

পেছনে মাথার ঝুঁটি উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিপ্পি আরসুয়াং। আর সামনে লুমাইচাং বা টেবিল পাহাড়। সিপ্পির আশপাশের পাড়াগুলোতে তংঞ্চঙ্গ্যা, বম আর মারমা সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। আর তাদের ভাষাগত পার্থক্যের কারণে তারা সিপ্পিকে বিভিন্ন নামে ডাকে যেমনÑ তংঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় রামেতং, বম ভাষায় সিপ্পি আর মারমা ভাষায় রামাজং। এসব ভাষার অর্থ একই ‘বড় পাহাড়’। আর সিপ্পিকে দূর থেকে দেখলে একে মোরগের ঝুঁটির মতো দেখা যায়, তাই একে বম ভাষায় ‘সিপ্পি আরসুয়াং’ নামেও ডাকে হয়।

যাওয়ার উপযুক্ত সময়

যেহেতু শুধু পাহাড় সামিটই মূল লক্ষ্য, তাই বর্ষায় না যাওয়াই ভালো। নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে যাওয়া ভালো। রুট প্ল্যান : সিপ্পি আরসুয়াং পাহাড়ে যাওয়ার তিনটি রুট আছে। যেকোনোটি দিয়ে গিয়ে অন্যটি দিয়ে ফেরা যাবে। 

প্রথম পথ : সিপ্পিতে খুব কম মানুষই যায়। যারা যায় তার বেশিরভাগই প্রথম রুটে যায়। এই পথটি পরিচিত ও একটু সহজ। বান্দরবান থেকে প্রথমে রোয়াংছড়ি যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে পাইক্ষ্যাংপাড়া যেতে হবে, সময় লাগবে ৩ ঘণ্টার মতো। পাইক্ষ্যাংপাড়া থেকে রনিনপাড়া ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মতো লাগবে। রনিনপাড়া থেকে সিপ্পি চূড়ায় যেতে ৪ ঘণ্টার মতো লাগবে।

দ্বিতীয় পথ : বান্দরবান থেকে প্রথমে রোয়াংছড়ি যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে ফরেস্ট অফিস হয়ে ব্যাঙছড়িপাড়া যেতে হবে, সময় লাগবে দেড় ঘণ্টার মতো। ব্যাঙছড়িপাড়া থেকে ব্যাঙছড়ি বাজার ১০ মিনিটের পথ। ব্যাঙছড়ি বাজার থেকে অংজাইপাড়া ১৫ মিনিট। অংজাইপাড়া থেকে লুংলাইনপাড়া ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মতো লাগবে। লুংলাইনপাড়া থেকে তারাছাপাড়া ১.৪০ ঘণ্টার মতো। তারাছাপাড়া থেকে প্রতিক্যা কার্বারীপাড়া ১ ঘণ্টার মতো। প্রতিক্যা কার্বারীপাড়া থেকে পুরান ফাংপুড়িপাড়া ৩ ঘণ্টার মতো।

তৃতীয় পথ : বান্দরবান থেকে প্রথমে রুমাবাজার যেতে হবে। বাসে বা চাঁদের গাড়িতে যেতে পারবেন। রুমাবাজার থেকে মুননৈয়ামপাড়া হয়ে যেতে হবে।

প্ল্যান এক : দিন শূন্য, ঢাকা-বান্দরবান দিন ১, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-পাইক্ষ্যাংপাড়া-রনিনপাড়া দিন ২, রনিনপাড়া-সিপ্পি-রনিনপাড়া দিন ৩, রনিনপাড়া-পাইক্ষ্যাংপাড়া-রোয়াংছড়ি-বান্দরবান-ঢাকা।

প্ল্যান দুই : দিন শূন্য, ঢাকা-বান্দরবান দিন ১, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-ব্যাঙছড়িপাড়া-ব্যাঙছড়ি বাজার-অংজাইপাড়া-লুংলাইনপাড়া-তারাছাপাড়া-প্রতিক্যা কার্বারীপাড়া দিন ২, প্রতিক্যা কার্বারীপাড়া-নাইন স্টেপ পাহাড়-পুরান ফাংপুড়িপাড়া-সিপ্পিপাড়া-সিপ্পি-রনিনপাড়া দিন ৩, রনিনপাড়া-পাইক্ষ্যাংপাড়া-রোয়াংছড়ি-বান্দরবান-ঢাকা।

প্ল্যান তিন : দিন শূন্য, ঢাকা-বান্দরবান দিন ১, বান্দরবান-রুমা-মুননৈয়ামপাড়া-পাইন্দু খাল-বিলপাড়া-সাইজামপাড়া দিন ২, সাইজামপাড়া-সিপ্পিপাড়া-সিপ্পি-রনিনপাড়া দিন ৩, রনিনপাড়া-পাইক্ষ্যাংপাড়া-রোয়াংছড়ি-বান্দরবান-ঢাকা অনেকেই সিপ্পির সঙ্গে তিনাপ সাইতার একই ট্যুরে রেখে থাকে। তাই তিনাপ সাইতার নিয়ে রুট প্ল্যান সাজালে হতে পারে এমনÑ ১ম দিন : ঢাকা> বান্দরবান>রোয়াংছড়ি> রনিনপাড়া, দ্বিতীয় দিন : রনিনপাড়া>সিপ্পি পাহাড়> দেবছড়াপাড়া, তৃতীয় দিন : দেবছড়াপাড়া>পাইন্দু।

ঢাকা থেকে বান্দরবানের বাসে করে বান্দরবান নেমে ফ্রেস হয়ে রোয়াংছড়িগামী লোকাল বাসে চেপে রোয়াংছড়ি বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। আগে থেকেই গাইড ঠিক করে রাখলে গাইড আপনাদের জন্য বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করবে। রোয়াংছড়ি বাজার থেকে পাহাড়ে হাঁটার উপযোগী ভালো গ্রিপের স্যান্ডেল আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনে নিন। রোয়াংছড়ি থেকে প্রথমে যেতে হবে ২৭ কিলোমিটার দূরের রনিনপাড়া।

রনিনপাড়া থেকে সিপ্পির দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে পরের দিন খুব সকালে, কেননা দেরি করে রওনা দিলে রোদের তাপে ভুগতে হবে। রনিনপাড়া থেকে সিপ্পি যাওয়া- আসায় সব মিলিয়ে ৮ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। রনিনপাড়া থেকে ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর পৌঁছে যাবেন দেবাছড়াপাড়ায়। সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া খাবার এখানে রান্না করে খেয়ে নিতে পারেন, যেমনÑ নুডলস/স্যুপ ইত্যাদি। এর পরের রাস্তাটুকু আরও দুর্গম এবং ঘন জঙ্গলে ঢাকা। তাই ম্যাচেটি দিয়ে কেটে কেটে আগাতে হয়। প্রায় ৪-৪:৩০ ঘণ্টা হাঁটার পর সিপ্পির চূড়ায় পৌঁছে যেতে পারবেন।

গাইড : গাইড মূলত রোয়াংছড়ি থেকে নিতে হবে। এখানে রুমা বা থানছির মতো গাইড নেই। এসে কথা বলে কাউকে নিতে হবে। আমরা গাইড হিসেবে নিয়েছিলাম পলাশ তংঞ্চঙ্গ্যা ভাইকে। যার মোবাইল নম্বর ০১৮৩৮-৭১৭৭৩৫। রনিনপাড়া হয়ে গেলে সিপ্পি সামিটের দিন এই পাড়া থেকেও এক দিনের জন্য গাইড নিতে হবে। আর সিপ্পিপাড়া হয়ে গেলে সামিটের জন্য সিপ্পিপাড়া থেকে গাইড নিতে পারবেন। সিপ্পিপাড়ার কার্বারীর ছেলে রুনরেম সাং-০১৮৬২০১১৮৫২ বা রাওউয়াক ভাইকে নিতে পারেন। গাইড নেবেন দিন হিসেবে। দিনপ্রতি ৪০০ টাকার মতো। আর রুমা হয়ে গেলে রুমাবাজার থেকে গাইড নিতে পারবেন। এদিকে গাইডের হিসাব আলাদা। টাকার ব্যাপার আলোচনা করে নেবেন।

জেনে নিন 

পাহাড়ে ভ্রমণের আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। কারণ পাহাড়ে আবহাওয়ার কারণে নানা প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হয়। যাওয়ার আগে অবশ্যই পুরো ভ্রমণ পরিকল্পনা বানিয়ে নিতে হবে। কত দিন থাকছেন, কত জন যাচ্ছেন, কীভাবে যাচ্ছেন, আনুমানিক কত টাকা খরচ হচ্ছে এসব বিষয়ে পরিকল্পনা করে তবেই যাত্রা শুরু করা উচিত। ভ্রমণের জন্য কিছু বিশেষ জিনিসের দরকার হয়। যেমন- ট্রেকিংয়ের জন্য লাঠি, পানি-কাদায় পাহাড়ে উঠার উপযোগী জুতা, ছাতা, টর্চ, চার্জার ব্যাটারি, প্রয়োজনীয় ঔষুধ। 

কোথায় থাকবেন

বান্দরবান শহরে থাকার অনেক আবাসিক হোটেল আছে। রোয়াংছড়িতে দুটি আবাসিক হোটেল আছে। রুমাবাজারে কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। পাহাড়ের ভেতরে আদিবাসীদের ঘরে থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

বান্দরবান শহরে, রোয়াংছড়ি ও রুমাবাজারে খাবার হোটেল আছে। পাহাড়ে আদিবাসীদের ঘরে নিজেদের রান্না করে খেতে হবে। যাওয়ার সময় তেল, মশলা, আলু, পেঁয়াজ নিয়ে যেতে হবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা