গোলাম কিবরিয়া
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:২৬ এএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৩০ পিএম
কালের ধারায় প্রকৃতি এ ধরায় প্রাণের সজীবতা, রঙ, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়ে এসেছে ঋতুরানী শরৎ। শরৎ হলো বর্ষার পরবর্তী ঋতু। বর্ষার অতিবর্ষণ ও অবিরাম মেঘবালিকার গুরু গুরু গর্জন থেমে গিয়ে প্রকৃতিতে শরৎ নিয়ে আসে এক অপরূপ দৃশ্য।
নদী, বিল, পুকুর ও হাওরের স্বচ্ছ পানির বুকে শুভ্র শাপলার পাগল করা হাসি প্রেয়সীর হৃদয়কাড়া হাসির মতোই মনে হয়। আকাশে-বাতাসে, দূর্বাঘাসে শরতের রানী তার স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে দেয়। এমন প্রকৃতি অনুভব করতে ভ্রমণপিয়াসী মন ছুটে বেড়াতে ইচ্ছে করে চারদিক। এই শরতে দেশে ভ্রমণে সেরা ৩ গন্তব্য নিয়ে থাকছে আজকের তথ্য।
সুন্দরবন
ঘরে বসে সুন্দরবনের পাখপাখালির ডাক। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ। নিরাপত্তার সঙ্গে নিশিযাপন। মানসম্মত খাবার খাওয়া। এই শরতে বৃষ্টিবিলাস। স্বল্প খরচে লোকালয় থেকে খুব কাছে ভ্রমণ করেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন উপভোগের সুযোগ করে দিয়েছে বনবাস ইকো ভিলেজ। খোলামেলা বারান্দায় বসে কিংবা হ্যামক বা দোলনায় দোল খেতে খেতে সুন্দরবনের অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মোংলা বাসস্ট্যান্ড এসে মোংলাঘাট থেকে সরাসরি ট্রলারে (ছাদওয়ালা নৌকা) রিসোর্টের আঙিনায় চলে আসতে পারবেন সুন্দরবনের ক্যানেল ক্রুইজিং করতে করতে।
সুনামগঞ্জ
বিপুল সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ সাজে সেজে আছে দেশের উত্তর-পূর্বদিকে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে অবস্থিত বিশাল জলরাশির টাঙ্গুয়ার হাওর, বারেকটিলা, যাদুকাটা নদী, লাউড় রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ, পনাতীর্থ, নারায়ণতলা, সীমান্তহাট, খ্রিস্টানদের মিশন, সীমান্তঘেঁষা পাহাড়, নদী, ছাতকের ট্যাংরা টিলা গ্যাসফিল্ড, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, সুনামগঞ্জের মরমি কবি হাছন রাজার মিউজিয়াম, দিরাইয়ে বাউল সাধক পুরুষ শাহ আব্দুল করিম, জগন্নাথপুরে রাধারমণের কিছু নিদর্শন। ঐতিহ্যবাহী জুবিলী স্কুল, জেলা সদরের মোহাম্মদপুরে ফিশারিজ সৌন্দর্যে অপরিসীম। মনমাতানো সৌন্দর্যে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর, আর সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি মেঘ, বৃষ্টির প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে বারেকটিলায়, যা আপনাকে দিতে পারে নৈসর্গিক, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আত্মতৃপ্তি। যা আপনার ক্লান্ত মনটাকে একটু হলেও দোলা দেবে।
বরিশাল
ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল। এ অঞ্চলের নানাদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নদী, খাল। দিনে-রাতে এসব নদী-খালে চলে জোয়ার-ভাটার অপূর্ব খেলা। আর ধানের মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যায়। বরিশাল বিভাগ মূলত ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ও ভোলা জেলা নিয়ে গঠিত এবং প্রতিটি জেলায় রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান। বাংলার ভেনিসখ্যাত বরিশাল জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের সব সময়ই মন জুড়াতে সক্ষম।
উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে- মিয়াবাড়ি মসজিদ, দুর্গাসাগর দীঘি, গুঠিয়া মসজিদ, লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি, শাপলার রাজ্য সাতলা গ্রাম, অক্সফোর্ড মিশন চার্চ, ছারছীনা দরবার শরিফ, উলানিয়া জমিদারবাড়ি, কলসকাঠী জমিদারবাড়ি, কীর্তনখোলা নদী, পাদ্রিশিবপুর গির্জা, শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর। এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারাবাজার গড়ে উঠেছে ঝালকাঠি, বরিশাল ও পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায়। জুলাই থেকে পিরোজপুর, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার পেয়ারা চাষিরা শত শত ছোট-বড় নৌকা নিয়ে হাজির হন ভাসমান বাজারে। পেয়ারাবাজার যেতে বরিশালের নতুল্লাবাদ থেকে বাসে অথবা সিএনজিতে করে যেতে হবে বানারীপাড়া। তার পর সেখান থেকে নসিমনে যাবেন কুড়িয়ানা। একটু হেঁটে একটা ব্রিজ পার হয়ে আবার ইজিবাইকে করে চলে যেতে পারবেন আটঘর ও কুড়িয়ানা বাজারে। আর ভিমরুলি যেতে চাইলে বানারীপাড়া থেকে নৌকা বা ট্রলারে যাওয়াই ভালো।