হুমায়রা রহমান
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৪০ পিএম
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৫ পিএম
সুন্দর ছবিটি এঁকেছে সুওয়াইবা বিনতে মাহমুদ। সে ঢাকার আজিমপুর গভঃ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী
লীনা ক্লাস টুতে পড়ে। গাছ লাগানো লীনার অনেক দিনের শখ। মা গাছ লাগাতে দেন না। মায়ের কারণে লীনা অনেক শখ পূরণ করতে পারে না। লীনা তাই লুকিয়ে লুকিয়ে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিল। পরে ভাবল, লুকিয়ে লুকিয়ে লাগালে টবগুলো তো আবার ব্যালকুনিতেই আনতে হবে। তাই এ বোকামিটা না করাই ভালো। কিন্তু মা যদি গাছ লাগানো নিয়ে অশান্তি করতে থাকে, তাহলে লীনা কীভাবে তার শখ পূরণ করবে? লীনা বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে লাগল।
হঠাৎ মা তার রাগী গলায় ডেকে উঠল, লীনাআআ! এদিকে আয়! লীনা মনে মনে বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারল না। লীনা গেল মায়ের কাছে। মা বলল, আমার ওষুধটা এগিয়ে দাও। মা যে গত পরশু দিন থেকে জ্বরে ভুগছে। তা-ও কি রাগের কোনো কমতি আছে! লীনা মায়ের রাগে বিরক্ত হয়ে যায়। মাঝে মাঝে মন খুব খারাপ হয়ে যায়।
আসলে মা একটু বেশিই রাগে, যার জন্য বাবাও ভয়ে থাকে। এত রাগে বলে লীনা নাম দিয়েছে মিস মরিচ। মরিচ যেমন মুখে নিলেই ঝালে সবাই নাজেহাল হয়ে যায়, তেমনি মায়ের রাগে লীনারা সবাই নাজেহাল হয়ে গেছে। প্রথমে যখন মায়ের জ্বর হলো, তখন লীনা খুব খুশি হয়েছিল। ভেবেছিল, রাগটা একটু কমবে। কিন্তু রাগের কোনো কমতি নেই। এ অবস্থায়ও মা সবার সঙ্গে রাগ-ঝাল করছে।
লীনা ওষুধের বক্সটা এগোল। মা কর্কশ কণ্ঠে লীনাকে হুকুম করলÑওষুধের প্যাকেট ছিঁড়ে খাইয়ে দিয়ে যাও। মনে মনে লীনা না বললেও প্রকাশ্যে হ্যাঁ বলল। অবশেষে মাকে ওষুধ খাইয়ে সব কাজ সেরে লীনা তার ঘরের বিছানায় বসে ভাবতে লাগলÑকীভাবে মাকে রাজি করাবে।
হঠাৎ তার মাথায় চমৎকার বুদ্ধি এলো। সে ভাবল, মা তো মুরগি অনেক পছন্দ করে। তাহলে মাকে মুরগি পোষার কথা বললেই তো হয়।
লীনা ছুটে গেল মায়ের কাছে। ভয়ে ভয়ে বলল, মা! ব-বলছিলাম যে, আমরা যদি মুরগি পুষি তাহলে কেমন হবে?
মা তাকে বাহবা দিয়ে বলল, বাঃ, আইডিয়াটা দারুণ। বাবাকে বলো মুরগির বাচ্চা আনতে একটা।
লীনার মুখে আনন্দের ছাপ দেখা যাচ্ছে। সে মিষ্টি করে হেসে দিল। সামনের দুটো দাঁত পড়ে গেছে। ফোকলা দাঁতের মজার হাসি। বাবা বাজারে গেল। একটা কমলা রঙের মুরগির বাচ্চা আনল। লীনা বাচ্চাটার নাম দিল লিমা। মুরগিটা সারাক্ষণ ব্যালকনিতে ঘুরে বেড়ায়। বিকাল হলে লীনা তাকে চাল খেতে দেয়। মুরগিটা মজা করে খায়। এত দিনে লীনা আর লিমার ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে। মা-ও এ কদিনে সুস্থ হয়ে উঠেছে। লিমার সঙ্গে মায়ের দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়েছে। লীনা বুঝতে পারল আগের চেয়ে মায়ের রাগ অনেক কমে গেছে। মনে মনে বলল, মুরগিটা কিনে লাভ হয়েছে।
শুক্রবারের ঘটনা। লাঞ্চ শেষে লীনা গেল মায়ের কাছে। মা বলল, কীরে, কিছু বলবি? লীনা বলল, মা, লিমার খুব গাছের শখ। ওর জন্য কিছু গাছ লাগাতে দাও না! মা রাজি হলো। লীনা গাছ লাগাল। গাছ লাগানো শেষে লিমাকে কোলে নিয়ে বলল, তোর জন্যই মায়ের রাগ কমল আর আমার শখও পূরণ হলো। মা আর কোনো দিন রাগবে না।
অষ্টম শ্রেণি, কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, নাটোর