পর্যটন প্রস্তাবনা
সাকিয়া হক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২৬ পিএম
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২৮ পিএম
বিভিন্ন বয়সি নারী ভ্রমণকারীদের নিরাপদ ভ্রমণ, ভ্রমণে উৎসাহী করাসহ পর্যটন ব্যবসায়ে নারীদের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভ্রমণকন্যা পরিচালনা করে আসছে নানা কর্মসূচি।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ সময়ে আমরা তোড়জোড় করে এগিয়ে চলেছি সংস্কারের দিকে। অচিরেই হয়তো নতুন এক বাংলাদেশ দেখতে পাব আমরা। স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশে তাই ভ্রমণকন্যার প্রত্যাশা একটাÑ নারীবান্ধব পর্যটন সেক্টর। এ কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন ভ্রমণকন্যারাও। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পর্যটন শিল্প বা বাণিজ্যের সঙ্গে তালমিলিয়ে সমানতালে এগিয়ে যেতে আমাদের পর্যটন খাতে প্রয়োজন আমূল সংস্কার। বাংলাদেশ আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃতির রানী। উত্তরের পঞ্চগড় বা দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমের চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা পূর্বের রাঙামাটি; কী নেই আমাদের? বাংলার রূপের মুগ্ধতা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে আমাদের সংস্কার করতে হবে বিভিন্ন স্তরভেদে।
প্রথমেই সংস্কার করতে হবে আমাদের দেশের পর্যটন স্পটগুলো। অবহেলায় বিলুপ্তপ্রায় হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে শুরু করে নজরদারির অভাবে উপচে পড়া স্বনিয়ন্ত্রিত ভারসাম্যহীন পর্যটন স্পটগুলো, সবই সংস্কার করে পর্যটনবান্ধব করতে হবে। অঞ্চলভিত্তিক ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখে পর্যটনকে আরও নিরাপদ করতে হবে, যাতে করে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিগুলো বিলুপ্ত না হয়। নতুন নতুন পর্যটন স্পট খুঁজে বের করে সেগুলোর প্রচারণা বাড়াতে হবে। চালু করতে হবে ভ্রমণনীতি, ভাঙতে হবে প্রচলিত সিন্ডিকেট। পর্যটক সেবা শতভাগ নিশ্চিত, দক্ষ জনবল তৈরিতে উচ্চমানের প্রশিক্ষণ প্রদান, পর্যটনকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সব ব্যবস্থা একটা সুনির্দিষ্ট কারিকুলামের আওতায় আনতে হবে।
আমাদের উচিত দেশের মানুষকে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে উৎসাহিত করা। এতে পর্যটনের অর্থনৈতিক অবস্থান উন্নত হবে ও আমরা পর্যটন সেবার মান চাহিদা অনুযায়ী দিন দিন বাড়াতে পারব। পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মেলার আয়োজন করা এবং সেখানে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করানো। ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রামাণ্যচিত্র, সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি, সংলাপ, বিজ্ঞাপন, পোস্টার বা মার্কেটিং সংশ্লিষ্ট সব খাতে বাজেট ও উদ্যোগ সংস্কার করে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী অবকাশযাপনের সুযোগ আমাদের দেশে তৈরি হলে দেশের টাকা দেশে থাকবে নিদারুণ এক পন্থায়। নিরাপত্তা জোরদার করে পর্যটকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটকরা ভ্রমণের প্রতি আরও উৎসাহিত হবেন। ভ্রমণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা সব সরকারি দপ্তরে আলাদা ভ্রমণ শাখা তদারকির ব্যবস্থা।
প্রতিটি ঘরে একটা করে পর্যটন হাব গড়ে তোলার এখনি উপযুক্ত সময়। যার পরিচালনায় থাকবে নারীরাই। প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নারীদের পর্যটন ব্যবসায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে নারীরাও এটাকে পেশা হিসেবে নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।
বিদেশি পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণের নিয়মকানুন কিছুটা সংস্কার করে সহজ করা প্রয়োজন, এতে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বিদেশি পর্যটকদের ভোগান্তি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে উল্লেখযোগ্য ও প্রশংসনীয় সংস্কার চলমান। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আমাদের ভিসাসংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি সংস্কারের প্রথম ধাপে আসতে হবে। জটিল নিয়মগুলো সরিয়ে পর্যটকদের জন্য স্বল্প সময়ের ভিসা নিয়ম করা যেতে পারে। এতে করে ঝামেলাহীন ভ্রমণে আগ্রহী হবেন অনেক পর্যটক। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আমাদের দেশের পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে ব্র্যান্ডিং করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে উদ্যোগ ও বাজেট বৃদ্ধি অপরিহার্য।
এ ছাড়া দূষণ এড়াতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমরা প্রতিটি স্পটে ময়লা ফেলার ডাস্টবিন ও নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার নিয়ম নিশ্চিত করতে পারি। নিয়মের অবমাননা করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে পারি। প্লাস্টিকরোধে আমরা পর্যটন স্পটগুলোতে ‘প্লাস্টিক জমা দেওয়ার বক্স/ রিসাইক্লিং পয়েন্ট’ স্থাপনা দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন এনে দিতে পারে। সবার ইতিবাচক অংশগ্রহণেই দেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনার সব দুয়ার খুলে যাবে।
প্রতিষ্ঠাতা, ভ্রমণ সংগঠন ‘ভ্রমণকন্যা’