× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পর্যটন প্রস্তাবনা

নতুন সময়ের পর্যটন ভাবনা

সৈয়দ গোলাম কাদের

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫২ পিএম

নতুন সময়ের পর্যটন ভাবনা

বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি অনুচ্চারিত নাম। দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার অগ্রগতির ছাপ রাখতে পারলেও পর্যটনের ক্ষেত্রে সবার পেছনে অবস্থান করছে। দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা, হিমালয়কন্যা নেপাল এবং ভুটান সকলে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে পর্যটনে অগ্রগতির পতাকা তুলে রেখেছে।

এমনকি পাকিস্তান যারা সব সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে পেছনে, পর্যটনের ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ৫৩ বছর কাটল কেউ কথা রাখেনি। সরকার আসে সরকার যায়। অপরূপ বাণী আর কথার ফুলঝুরি। প্রাপ্তিযোগ অতি সামান্য। অনেক সংগ্রামের পর ২০১০ সালে গঠিত হলো ট্যুরিজম বোর্ড। যেখানে একজন বেসরকারি অভিজ্ঞ পর্যটন ব্যক্তির দায়িত্ব নেওয়ার কথা, সেটিও সরকারি বলয় থেকে বের হতে পারেনি। 

সরকার কোথায় যেন ভয় পায়। বরাবর আমরা দেখছি, অভ্যন্তরীণ বা ডোমেস্টিক ট্যুরিজম নিয়ে মাতামাতি বেশি। মুখে বিদেশি পর্যটক আনার ব্যাপারে যত না কথা কাজে তার প্রতিফলন নেই। বিগত সরকার একটি ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যানে ৩২ কোটি টাকা খরচ করল, কিন্তু তা আজও বাস্তবের মুখ দেখল না। না বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন ছিল। সমস্যা হলো সরকার ও সুশীল সমাজে এক ধরনের নেতিবাচক চিন্তা আছে। পর্যটন বিষয়টা আমরা ভ্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি অর্থাৎ বেড়াতে যাওয়া। অর্থ খরচ করা। দেশের জন্য অর্থ উপার্জনে অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তিতে পর্যটন যে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে, এটা যেন আমাদের অজানা। এই শিল্প যে দেশব্যাপী কর্মসংস্থান করতে পারে, সেটাও আমরা ভালোভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছি। গত কোভিডের সময় বিশ্ব যখন স্বাভাবিক সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে নতুন সময়ে পর্যটকের কী চাহিদা হবে, আমরা তখন দুঃখ স্বপ্ননিদ্রায় ছিলাম।

সৈয়দ গোলাম কাদের, সেক্রেটারি জেনারেল ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ চ্যাপ্টার ও প্রতিষ্ঠাতা, টোয়াব

আজ আমরা ছাত্র যুবা-জনতার হাত ধরে নতুন এক সময়কে ধারণ করতে যাচ্ছি। প্রাণের ভেতর এক নতুন অনুভূতি, এবার হয়তো আমরা ঘুরে দাঁড়াব। আমার অনেকবার উচ্চারণ করতে ইচ্ছা হতো পর্যটন একটি অন্যতম সামাজিক ব্যবসা হতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার সাহস হয়নি। কারণটা বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনে পর্যটন অনেক দেশে গুরুত্ব পায়। আজ আমরা নতুন যে সময়ে উপনীত, সেখানে পুরোনো ধ্যানধারণা ঝেড়ে ফেলে নতুন সময়ের সঙ্গে তাল মিলাতে শিখতে হবে। পর্যটন নিতান্ত বিনোদন নয়। এর বহুমাত্রিকতা জানাটা জরুরি। মানুষের অজানাকে জানার, অজেয়কে জয় করা যে নেশা তা কখনও থামে না। নতুনরূপে নতুনভাবে, নতুন ভাবনায় বিকশিত হয়। এখন সচেতনভাবে ভ্রমণ করছে বিশ্ব। টেকসই পর্যটন, পরিবেশবান্ধব পর্যটন, অপচয়রোধে পর্যটন। স্থানীয় জনবান্ধব পর্যটন। নতুন সময়ে আমার বিশ্বাস এই নতুন বাংলদেশে পর্যটনকে আমরা নতুনভাবে ঢেলে সাজাব। যে পর্যটন মানুষের কল্যাণে নির্মিত হবে, ক্যাসিনো বা নিতান্ত প্রমোদের দিকে না ঝুঁকে। শ্রীলঙ্কা সবুজ, কেরালা সবুজ, বাংলাদেশও সবুজ। কেরালা এবং বাংলাদেশ পরিবেশগতভাবে প্রায় একই রকম। অনেক পর্যটককে দেখেছি বাংলাদেশে এসে তারা যে জায়গার সঙ্গে মিল খুঁজে পাই, তা হলো কেরালা। 

আমরা প্রায় বলতে শুনেছি বাংলাদেশ পরিচিত করতে আমাদের কোনো আইকন নেই। ভারতে যেমন আছে তাজমহল, নেপালের হিমালয়। আমাদের কী আছে? আসলে ভাবুন তো কেরালার কী আছে? তারা ভারতের অন্য সব রাজ্যের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে আছে। তারা কৃত্রিমতা ছেড়ে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়েছে। দেশি বার্জে বা আমাদের গয়না নৌকা দিয়ে বিদেশিদের মাত করছে। বাংলাদেশ একটি বহুমাত্রিক দেশ। ছোট নদী থেকে সাগর আছে। দেশের রকেট স্টিমারগুলো এ জন্য খুবই উপযুক্ত ছিল কিন্তু তাতে বিনিয়োগ না করে সেগুলো বেঁচে দিলাম। অথচ মিয়ানমার সেগুলো কাজে লাগিয়ে বিদেশিদের মন জয় করছে। এখনও সময় শেষ হয়নি নতুন সময়ে নতুন করে সাজানো কি সম্ভব নয়। 

একটি দেশ বা গন্তব্য (ডেস্টিনেশন) চারটি বা পাঁচটি পণ্য থাকলে একক গন্তব্য হতে পারে। বাংলাদেশ সে শক্তি রাখে। আমাদের আছে বিশ্বখ্যাত নদী পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র আরও অসংখ্য। সুন্দরবন আছে। আছে চা বাগান, উপজাতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম। বাংলার মেলা, সংস্কৃতি। এবার ড. ইউনূস বিশ্ব ক্রীড়া অঙ্গন জয় করলেন তার সামাজিক ব্যবসার ধারণা দিয়ে। ফ্রান্স গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠানের সুযোগ পেলেন ড. ইউনূসের পরামর্শে। বাংলাদেশ পর্যটনের ক্ষেত্রে যদি সামাজিক ব্যবসা মডেল তৈরি করা যায়, বিশ্ব তা দেখতে আসবে।

পর্যটনের বিকাশ শুধু কথার চিড়াতে ভেজে না। ভেজে ব্যাপক বাজারজাতকরণের রসে। বাজারজাতকরণ প্রাত্যহিক বিষয়। প্রয়োজন এক মহাপরিকল্পনা, যাতে বাংলাদেশ বিশ্ব পর্যটনে নিজের আসন তৈরি করতে পারে। কেরালা প্রতি বছর ১০০ কোটির ওপর খরচ করে। শ্রীলঙ্কা তাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর বিশ্বময় আমন্ত্রণ জানাল ব্যাপকভাবে, সেটা তাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করল। বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার পূর্ণ হলো। 

পরিশেষে বলব, আজকে এই নতুন সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের নতুন চেতনায় জাগতে হবে। পর্যটন যেমন একটি বহুমাত্রিক শিল্প, তেমনি তার বহু নির্ভরশীলতা। পর্যটন একটি পরিবর্তনশীল ও বিকাশমান শিল্প। এখানে প্রয়োজন একটি গতিশীল পরিচালনা পর্ষদ। যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব। দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রপ্রধানের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা। যাতে এর গতি থমকে না যায়। নতুন সময়ে নতুন জাগরণে আমরা জাগতে চাই। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে তা আরও বেগবান হবে।

সেক্রেটারি জেনারেল ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ চ্যাপ্টার ও প্রতিষ্ঠাতা, টোয়াব


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা