পর্যটন প্রস্তাবনা
আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৩৮ পিএম
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২৯ এএম
আগামী ২০৫০ সালে পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে বড় শিল্প হবে পর্যটন। পর্যটন শিল্প দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশের জিডিপির (২০১৯) ৩ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। অথচ ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ এবং পর্যটনের জিডিপিতে সর্বাধিক অবদানের দেশ। যার পরিমাণ ছিল ২.৩৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভ্রমণ ও পর্যটন উন্নয়নসূচক ২০২৪-এ বাংলাদেশ ১১৯টি অর্থনীতির মধ্যে ১০৯তম স্থানে রয়েছে। পর্যটন ব্যবস্থার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো- আকর্ষণীয় যাতায়াতের সুবিধা, বাসস্থান, সুযোগ-সুবিধা এবং ট্যুরিজম কর্মকাণ্ড। এই পাঁচটি উপাদান যখন আমরা সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব, তখন আমরা পর্যটনে এগিয়ে যাব। বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আশা করি তার সুযোগ্য নেতৃত্বে এটি একটি সম্মানজনক সফল মন্ত্রণালয় হিসেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গড়ে উঠবে। বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু প্রস্তাবনা রইল।
১. বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দুটি আলাদা মন্ত্রণালয় করা উচিত।
২. ই-ভিসা চালু করা এবং প্রয়োজনে বিমান বাংলাদেশের টিকিট কাটার পরিপ্রেক্ষিতে ভিসা অন অ্যারাইভালের ব্যবস্থা করা।
৩. যেসব ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটর বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে নিয়ে আসবেন এবং যাদের মাধ্যমে ফরেন রেমিট্যান্স আসবে। তাদের স্বীকৃতি প্রদান ও ট্যুরিজম খাতে বিভিন্ন সুযোগ প্রদান।
৪. বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) ও প্রতিটি জেলা অফিসের সমন্বয়ে ট্রাভেল ও ট্যুরিজম বিষয়ক সেমিনার, কর্মশালা, ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন আয়োজন করা। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বাংলা ও ইংরেজিতে পর্যটন বিষয়ক কফি টেবিল বই সেই জেলার নামে প্রকাশ করা।
৫. বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে পর্যটন বিষয়ক অফিসার নিয়োগ বা কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা এবং পর্যটন বিষয়ে বই ব্রুশিয়ার ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণ রাখা।
৬. Visit Bangladesh Program-এ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় সেই সব দেশের বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিক ভ্রমণ লেখক, ফটোগ্রাফার ট্রাভেল ব্লগারদের বাংলাদেশ ভ্রমণে আমন্ত্রণ জানানো এবং সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহে ভ্রমণ করানোর সময়সীমা ৭-১০ দিন হতে পারে এবং ভ্রমণ শেষে তারা তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তাদের দেশের দৈনিক পত্রিকা, ভ্রমণ ম্যাগাজিন, টিভিতে প্রচার করবেন এবং লেখার কপিরাইট MOFA & BTB-এর থাকবে। যেন MOFA বা BTB-এর কোনো পাবলিকেশনে ব্যবহার করতে পারেন।
৭. ট্যুরিজম স্টার্টআপের মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপস : ওয়ান স্টপ সলিউশন সার্ভিস, ট্যুরিজম কমপ্লেইন ইত্যাদি তৈরি করা।
৮. ট্রাভেল ও ট্যুরিজম শিল্পে অবদানের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড প্রদান।
৯. ট্যুরিজম সম্পর্কিত লাইসেন্সধারী বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম মনিটর করা এবং তাদের কাছ থেকে বার্ষিক কার্যক্রমের প্রতিবেদন প্রদান বাধ্যতামূলক করা।
১০. যারা লাইসেন্সধারী একটি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তারা অন্য ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।
১১. ভ্রমণবিষয়ক বইমেলার আয়োজন করা ও দেশের ভ্রমণবিষয়ক বইয়ের তালিকা তৈরি করা।
১২. রামনাথ বিশ্বাসের ভ্রমণবিষয়ক বইয়ের পুনর্মুদ্রণ ও বানিয়াচংয়ে তার বসতভিটা পুনরুদ্ধার করা।
১৩. বিশ্বে যারা বাংলাদেশকে নিয়ে বই লিখেছেন সেই সব বই সংগ্রহ করে রাখা। পাঠ্যপুস্তকে ট্যুরিজম বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা।
১৪. যেসব পর্যটন স্পট ইতোমধ্যে হুমকির সম্মুখীন, সেখানে সীমিত পর্যটন ব্যবস্থা এবং সুন্দরবনে ট্যুরিজম নীতি বাস্তবায়ন করা।
১৫. যারা পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত তাদের অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
১৬. বিদেশে ট্যুরিজম ফেয়ার অথবা ট্রাভেল মার্টে যাওয়ার নীতিমালা প্রণয়ন।
১৭. বাংলাদেশে যেসব ট্যুরিজম মেলা আয়োজিত হয় সেখানে তাদের অংশগ্রহণে আর্থিক সহযোগিতা সম্পর্কে নীতিমালা প্রণয়ন। পর্যটনবিষয়ক দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা।
১৮. শিক্ষার্থীদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেলওয়ের টিকিট এবং পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেলে হ্রাসকৃত মূল্যে থাকার ব্যবস্থা করা।
১৯. প্রতিটি জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে আবর্জনা ফেলার পর্যাপ্ত বিন রাখা এবং স্থানীয় ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান প্রতি মাসে অন্তত একবার বাধ্যতামূলক করা।
২০. বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশে বিমান টিকিটের ভাড়া অত্যধিক। সেটার কারণ খুঁজে বের করে সমাধান করা।
২১. এয়ারপোর্ট ও বর্ডারে ইমিগ্রেশন অফিসারদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও আধুনিক সময়োপযোগী কম্পিউটার ও সফটওয়্যারের ব্যবহার নিশ্চিত করা।
২২. বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পর্যটনকে তুলে ধরার জন্য নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূসকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করার প্রস্তাব করছি।
প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন