× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আমার সন্তানের গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত নিথর দেহ

কহিনুর আক্তার

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪ ১৩:৪৮ পিএম

ফয়সাল আহমেদ শান্ত

ফয়সাল আহমেদ শান্ত

১৬ জুলাই বেলা ৩টার দিকে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার সময় বাসার সামনে শান্তর সঙ্গে দেখা। তার কাঁধে একটা ব্যাগ ছিল। সে তখন সুমাইয়াকে (তার বোন) পকেট থেকে বাসার চাবিটা বের করে দিয়ে আমাকে বলল, ‘এটা রাখো।’ বাসার একটা চাবি আমার কাছেও আছে। চাবি কেন দিচ্ছে জিজ্ঞেস করতে সে বলল, ‘আম্মু একটু ২ নম্বর গেটে যাব। চাবিটা রাখো।’

জিজ্ঞেস করলাম, ‘সন্ধ্যায় তোমার টিউশন আছে। ২ নম্বর গেটে কেন যাচ্ছো?’ বলল টিউশনটা করেছে এখন একটা কাজে যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামতেই সুমাইয়াকে বললাম শান্তকে ফোন করতে। আমি নাশতা বানাচ্ছিলাম। সুমাইয়া জানাল শান্তর ফোন বন্ধ। মাঝে মাঝেই এমন হতো, চিন্তা করিনি। কিছুক্ষণ পর দুটি ছেলে এলো শান্তর বয়সি। বলল তাদের সঙ্গে একটু যেতে হবে। কথা বলে জানতে পারলাম শান্ত কেন মিছিলে গেছে। আরও জানলাম, সেখানে সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তখনও স্বাভাবিক ছিলাম। কারণ আমি শুনেছি ঝামেলা হলে পুলিশ রাবার বুলেট মারে বা পায়ে গুলি করে। ভেবেছি আহত হয়েছে।

হাসপাতালে যাওয়ার পর কেউ কোনো কথা বলেনি। অনেকক্ষণ পর পুলিশ আমাকে ডাকল। ভাবলাম, হয়তো ছেলে দেখতে চেয়েছে। কিন্তু পুলিশ আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিল। আমি বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম কী হয়েছে। এর মধ্যে কেউ একজন বলল, গন্ডগোলে কয়েকজন মারা গেছে। তখন বুঝতে পারলাম আমার ছেলে আর নেই। সেখানেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। মনে হলো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জ্ঞান ফিরতেই ছেলেকে দেখতে চাইলাম। কিন্তু তারা দেখাতে রাজি হলো না। আগে থানায় যেতে বলল। থানায় অনেক জায়গায় স্বাক্ষর নিল। তাদের অনেক বললাম ছেলেকে যেন পোস্টমর্টেম না করায়। কিন্তু শুনল না। পোস্টমর্টেম করানোর পর রাত ২টা নাগাদ ছেলেকে প্রথম দেখলাম আমি। দিনের ৩টায় যে ছেলেকে জীবিত বিদায় দিলাম তার গুলিবিদ্ধ, কাটাছেঁড়া করানো নিথর দেহ আমার সামনে।

ফয়সাল আহমেদ শান্ত, আমার একমাত্র ছেলে। এ ছেলেকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল আমার। কত কষ্ট, কত দুঃখের জীবন মাটি কামড়ে পাড়ি দিচ্ছিলাম একদিন সে বড় হয়ে এসব ঘুচিয়ে দেবে ভেবে। পতেঙ্গার বিজয়নগরে থাকতাম। ২০২০ সালে সেখান থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদ করা হলো। এর মধ্যে করোনা, তার বাবার চাকরি চলে গেল। তিনি গ্রামে ফিরে একটা ফার্নিচারের দোকান দিলেন। আমি শহরে থেকে গেলাম। স্কুলে শিক্ষকতা করে ছোট্ট একটা বাসায় থাকতাম। শান্ত তিনটি টিউশন করাত। মা-ছেলে মিলে সংগ্রাম করছিলাম একটা সুন্দর দিনের আশায়।

আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না জানতাম। তাকে কারা কেন মারল এর সঠিক তদন্ত চাই। সত্যটা যেন বেরিয়ে আসে। আমি শুধু তাকে জিজ্ঞেস করব আমার এমন শান্ত ছেলেকে সে কেন মারল। যে সুন্দর দিনের জন্য মাটি কামড়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছিলাম সেই দিন তো এলো না। নতুন করে এক বড় দুঃখের পাহাড় বুকে জামা হলো। এ পাহাড় বুকে নিয়ে যুদ্ধ করা যাবে কি না তা-ও জানি না। তবে এ প্রশ্নের উত্তর পেলে কিছুটা হালকা লাগবে।

ফয়সাল আহমেদ শান্ত, চট্টগ্রামের এমইএস কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৬ জুলাই ছাত্র আন্দোলন ঘিরে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে সংঘর্ষে নিহত হন। লেখক : কহিনুর আক্তার শান্তর মা

অনুলিখন : আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা