× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বৈষম্য দূর করতে চেয়েছিল ভাইয়া

নাফিসা খাতুন

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪ ১৩:৪২ পিএম

মনিরুল ইসলাম মনির

মনিরুল ইসলাম মনির

আমার ভাই মনিরুল ইসলাম মনির বয়সে আমার দুই বছরের বড়। আমার বাবা শামছুল হক পেশায় কৃষক। আমরা দুই ভাই-বোন কৃষক পরিবারে বেড়ে উঠেছি। মনির ভাইয়া ছোটবেলা থেকেই সামাজিক নানা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পড়ালেখার পাশাপাশি সে চাষাবাদে আব্বাকে সহায়তা করত। এর ফাঁকে সে বাড়িতে ছাত্রদের পড়াত। ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে ভাইয়া আমাদের গ্রামের লোকজনদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। 

২০২১ সালের শেষ দিকে মনির ভাইয়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিডি ক্লিন’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে জরাজীর্ণ খাল পরিষ্কারে নেমে পড়ে। এসবের পাশাপাশি রক্তদানও করত। মনির ভাইয়া নিজ গ্রামসহ আশপাশ এলাকার অসচ্ছল এবং অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য ২০২৩ সালে ‘হিকমা ইয়ুথ সোসাইটি’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে গত রোজার ঈদে এলাকার দুস্থদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতো।

মনির ভাইয়া নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সরকারি মহাবিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়ছিল। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করত বলে কখনও চাকরি করতে চায়নি। বরং পড়ালেখা শেষে ব্যবসা করতে চেয়েছিল। চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে মনির ভাইয়া তাতে অংশ নেয় এবং আমাকেও শামিল হতে বলে। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, যারা আন্দোলন করছে তারা তো মেধার ভিত্তিতে চাকরির সুযোগ সৃষ্টির জন্য মাঠে নেমেছে। তুই তো ব্যবসা করতে চাস তাহলে আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছিস কেন? ভাইয়া বলেছিল, ‘এ আন্দোলন ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য। এটা কারও ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়। বাংলাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী নেমেছে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য। আমাদেরও তাদের সঙ্গে শরিক হতে হবে।’

২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার মনির ভাই বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে যায়। সেদিন তাদের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওইদিন আব্বার কাছে খবর আসে, যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাদের পুলিশ খুঁজছে। খবরটি পাওয়ার পর আব্বা মনির ভাইয়াকে ফোন করে রাতে বাড়ি আসতে নিষেধ করেন। তার পর থেকেই ভাইয়া রাতে আর বাড়ি থাকেনি।

৩ আগস্ট আব্বা ধানের চারা তুলতে ভাইয়াকে বাড়ি ডাকেন। সেদিন ভাইয়া আব্বার সঙ্গে সারা দিন ধানের চারা তোলে। এরপর পুলিশের ভয়ে ভাইয়া নানির বাড়িতে যায়। পরদিন ৪ আগস্ট রবিবার সকালে ভাইয়া সহপাঠীদের ডাক পেয়ে দুপচাঁচিয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে যায়। ফোনে কথা হলে সে আমাকেও আমার বান্ধবীদের নিয়ে দুপচাঁচিয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে বলে। ভাইয়ার কথামতো আমরা সকাল ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। দুপচাঁচিয়ায় পৌঁছে দেখি ভাইয়া মিছিলের একেবারে সামনে। আমরা সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেওয়ার পর পরই পুলিশ অ্যাকশনে যায়। 

এরই মধ্যে খবর আসে পুলিশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে থানায় আটকে রেখেছে। খবরটি  শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। বেলা ১১টার কিছু পরে শত শত শিক্ষার্থী থানার দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশ গুলি শুরু করে। এতে বেশ কয়েকজন গুলিতে আহত হয়। এ সময় ভাইয়াও গুলিবিদ্ধ হয়। সহপাঠীরা তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান, গুলিতে ঘটাস্থলেই ভাইয়ার মৃত্যু হয়েছে। ভাইয়ার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আব্বা হাসপাতালে আসার পথে তার হাঁটুতে রাবার বুলেট লাগে। 

আমি এবং আমার ভাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। আমার ভাইয়ের মতো অনেকে শহীদ হয়েছেন। কেউ চোখ হারিয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করছেন। ভাইকে তো আর আমরা পাব না। তবে যারা আহত হয়ে বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাচ্ছেন তাদের চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি। আমার ভাইয়া যেসব সামাজিক কাজে যুক্ত ছিল সেগুলো তার সহপাঠী, বন্ধু এবং অন্যরা এগিয়ে নেবে এবং সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

৪ আগস্ট বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন মনিরুল ইসলাম মনির।  তিনি নওগাঁর বঙ্গবন্ধু সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন। লেখক নাফিসা খাতুন শহীদ মনিরের ছোট বোন।

অনুলিখন : মোহন আখন্দ, বগুড়া অফিস

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা