শনিবারের হাসি
হানিফ ওয়াহিদ
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ১২:০৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদের গেটে জিলাপি বিতরণ হচ্ছিল। সবাইকে এক পিস করে দেওয়া হচ্ছে।
রাকিব মসজিদ থেকে বেরিয়ে নিজের পুরোনো জুতা ফেলে এক জোড়া নতুন জুতা পায়ে গলিয়ে সেদিকে গিয়ে ডান হাত বাড়িয়ে দিল। একজন মুসল্লি তার হাতে একটি জিলাপি দিল। এবার সে বাঁ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমার বউয়েরটা দেন।
মুসল্লিদের একজন বলল, আপনার বউয়ের জন্য পাবেন না। একটার বেশি দেই না।
রাকিব চিৎকার করে বলল, নারী-পুরুষ ভেদাভেদ মানি না, মানব না। বউয়েরটা দিতেই হবে।
তাকে আরও একটা জিলাপি দেওয়া হলো।
দুইটা জিলাপি পকেটে ঢুকিয়ে সে আবারও ডান হাত বাড়িয়ে দিল, আমার ছেলেকে একটা দেন। বাচ্চাদের অবহেলা আল্লাহতায়ালাও পছন্দ করেন না। কেমন মানুষ আপনারা, ছোটদের না দিয়ে বড়দের দিচ্ছেন?
এবারও সে আরেকটা পেল।
এবার বাঁ হাত বাড়িয়ে দিল, আমার মেয়েরটা কই?
সেই মুসল্লি বিরক্ত গলায় বলল, যান তো ভাই, আর বিরক্ত কইরেন না। আপনার ছেলেকে দিয়েছি, মেয়েকে আর দেওয়া হবে না।
রাকিব একটু সরে গিয়ে স্লোগান শুরু করে দিল, নারী-পুরুষ ভেদাভেদ, মানি না মানব না। মানি না মানব না।
না বুঝেই কিছু মানুষ তার সঙ্গে জুটে গেল। তারাও সুর মেলাল, মানি না, মানব না।
যারা জিলাপি বিতরণ করছিল তারা ভয় পেয়ে পুরো এক প্যাকেট জিলাপি রাকিবের হাতে ধরিয়ে দিল।
রাকিব রাস্তা দিয়ে হাঁটে আর জিলাপি খায়। তার মন আজ বেশ ফুরফুরা।
হঠাৎ তার মনে হলো, আমি যে আমার মেয়ের জন্য জিলাপি চাইলাম, আমার তো মেয়ে নাই!
আরেকটা জিলাপি মুখে দেওয়ার পর মনে পড়ল, হায়, আমার তো ছেলেও নাই!
আরও দুইটা জিলাপি গপাগপ সাবাড় করার পর মনে হলো, সর্বনাশ! আমি তো বিয়েই করি নাই। বউ এলো কই থেকে! এত জিলাপি তাহলে খাবে কে? থাক, আমার পরিবারের সবাই খেতে পারবে।
কিছুক্ষণ হাঁটার পরই মনে হলো, পরিবারের কেউ তো এখানে নাই, তারা গ্রামে থাকে। আমি ছাত্রনেতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেলে ফ্রি খাই, ফ্রি থাকি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে ঢোকার সময় এক বড় ভাই ছাত্রনেতার সঙ্গে দেখা। তিনিই রাকিবকে রাজনীতিতে ঢুকিয়েছেন। ডাক দিয়ে বললেন, রাকিব কই যাও?
রাকিব বড় ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলল, আসসালামু আলাইকুম ভাই, গরম গরম জিলাপি খান।
জিলাপি নিয়ে গপাগপ খেতে খেতে বড় ভাই বললেন, পাইলা কই?
রাকিব মাথা চুলকাতে চুলকাতে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর কী কী হয়েছে সব জানিয়ে বলল, কী থেকে কী হলো বুঝলাম না ভাই। মনের অজান্তেই এসব করে ফেলেছি।
বড় ভাই যেন জিলাপি খাওয়া ভুলে গেল। সে কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, রাকিব তুমি আমাদের গর্ব। তোমার শরীরে একজন আদর্শ নেতার রক্ত টগবগ করে ফুটছে।
আমি নিশ্চিত, তুমি একদিন এ দেশের বড় নেতা হবে!