× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কানারটেক

বিদ্যুৎহীন অন্ধদের এক জনপদ

আবু সাঈদ, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৩:১৮ পিএম

আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪ ১৩:১৮ পিএম

বিদ্যুৎহীন অন্ধদের এক জনপদ

প্রায় দুই যুগ ধরে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক নূরবাগ এলাকায় বাস করছেন তারা। অধিকাংশই অন্ধ  হওয়ায় এই গ্রামের নাম কানারটেক। নাগরিক অন্য সুবিধা পেলেও গ্রামটিতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। গ্রামটির বাসিন্দাদের ভাষ্য, সবাই শুধু আশ্বাসই দেয়, কিন্তু বিদ্যুৎ দেয় না 

কানারটেক, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার একটি গ্রাম। বহু বছর যাবৎ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বসবাসের কারণেই গ্রামটির এ নাম। এখানকার ৫০টি ঘরের প্রায় প্রতিটিতেই বাস করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। উপজেলার সব জায়গায় বিদ্যুত পৌঁছালেও বিদ্যুৎ ছাড়াই গ্রামে বাস করেন অন্ধ ও তাদের পরিবার। উপজেলার মৌচাক নূরবাগ এলাকায় গ্রামটির অবস্থান।

বারবার চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় হতাশার শেষ নেই কানারটেকের বাসিন্দাদের। ২৩ বছর ধরে চেষ্টা করেও ঘরগুলোয় বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারেননি তারা। অথচ পাশেই কোমল পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পোশাকশিল্প কারখানা, ছোটবড় দোকানপাট এমনকি বাংলাদেশ বনশিল্প করপোরেশনের স্থাপনায়ও রয়েছে বিদ্যুত।

কানারটেকে বাংলাদেশ অন্ধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি কুরবান আলী বলেন, ‘আমরা চোখে দেখি না, তাই সবাই অবহেলা করে। বিদ্যুতের লাইগা যার কাছেই যাই সবাই কয় সামনে বিদ্যুতের ব্যবস্থা কইরা দিব কিন্তু পরে আর দেয় না। আমাগো ৫০টা ঘরে গত ২৩ বছরে বিদ্যুতের আলো জ্বলেনি, ফ্যান ঘোরেনি। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কইছিল প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে। বিদ্যুৎ না থাকায় আমাগো বউ-পোলাপাইনও অন্ধকারে জীবন যাপন করতাছে।’

কানারটেকের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার মৌচাক এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশেই একটি পরিত্যক্ত জমিতে ৫০টি পরিবারের প্রায় ২৫০ জন বাসিন্দা ২০০১ সাল থেকে বসবাস করে আসছেন। বেশির ভাগই দৃষ্টিহীন ও ভূমিহীন। 

এখানকার বাসিন্দাদের সমস্যা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপিও সুপারিশ করেছেন। এর পরও বিদ্যুৎ না পেয়ে একরকম হতাশায় ভুগছেন তারা। এরই মধ্যে গ্রামের একটি জমি নিজেদের দাবি করেছে বাংলাদেশ বনশিল্প করপোরেশন। জমির মালিকানা দাবি করে কানারটেকের সমিতি অফিসের পাশে একটি ঘর স্থাপন করে সেখানে একজন নিরাপত্তাকর্মী রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই ঘরে বিদ্যুত থাকলেও একই স্থানে অন্ধদের ৫০টি পরিবার বঞ্চিত বিদ্যুৎসুবিধা থেকে।

বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বাংলাদেশ অন্ধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজারের কাছে ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর একটি আবেন করেন। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মৌচাক জোনাল অফিসের দায়িত্বে থাকা পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের কাছেও আবেদন করা হয়। 

কানারটেকের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ অন্ধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাগো এ সমিতির সাবেক সভাপতি বিদ্যুতের লাইগা অনেক চেষ্টা করেছে। একবার বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরা খুঁটি আনছিল। দুই দিন সেই খুঁটি ফালাইয়া রাইখা আবার নিয়া গেছে। বিদ্যুৎ আর পাই নাই। মরার আগে মনে হয় না আমরা বিদ্যুৎ পামু।’

এ বিষয়ে মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন বলেন, ‘শিল্প-অধ্যুষিত কালিয়াকৈর উপজেলায় আমার ইউনিয়নের এই গ্রামের ৫০ পরিবার ২৩ বছর ধরে বিদ্যুৎ না পাওয়া খুবই দুঃখজনক। এতগুলো পরিবারকে বিদ্যুৎ না দেওয়া মানে তাদের এক ধরণের নির্যাতন করা। তাদের নিয়ে বিদ্যুতের জন্য অনেক জায়গায় ধরনা দিয়েছি। কিন্তু বনশিল্প করপোরেশনের বাধার কারণে কানারটেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারিনি।’

এ বিষয়ে জানতে বনশিল্প করপোরেশনের ম্যানেজার ওহেদুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর আওতাধীন মৌচাক জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আশরাফ উদ্দিন খান বলেন, ‘একসময় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য খুঁটি স্থাপনসহ ট্রান্সফরমারও লাগানো হয়েছিল। তখন একটি পক্ষ সেখানে বাধা সৃষ্টি করেছিল এবং তারা জমিটি নিজেদের দাবি করায় তাদের দুই পক্ষের মাঝে আইনি ঝামেলা চলায় খুঁটি-ট্রান্সফরমার খুলে ফেলা হয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা