× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মুনের গল্প বলি

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৪:৪৮ পিএম

আইস ক্লাইম্বিং ও সাদা পাহারে চড়ার নানা কৌশল শিখেছেন মুন

আইস ক্লাইম্বিং ও সাদা পাহারে চড়ার নানা কৌশল শিখেছেন মুন

আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন নিজেকে তারা কোনো পেশায়ই যুক্ত রাখেন না। ফলে ইচ্ছামতো অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়তে পারেন। তেমনই একজন মানুষ হোমায়েদ ইসহাক মুন। তিনি একাধারে ট্রাভেলার, সার্টিফিকেটধারী সাঁতারু কোচ, ফটোগ্রাফার, শৌখিন রানার এবং লেখক। 

পানি বরাবরই ভালো লাগে মুনের। সাঁতার শিখতে গিয়ে বাড়ির কাছের গুলশান সুইমিং পুল, পুকুর কোনোটাই বাদ যায়নি তার। শেখার পর তার মনে হলো, সাঁতার তো ভালোই পারেন। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলে কেমন হয়! তখন অ্যাডভেঞ্চারগুরু কাজী হামিদুল হক, যিনি বাংলা চ্যানেল আবিষ্কার করেন, তিনি বেঁচে আছেন। ২০২১ সালে সমুদ্রের কিলো দশেক সাঁতার কেটেও বাংলা চ্যানেল পৌঁছা হয়নি তার। এরপর আটঘাট বেঁধে লেগে পড়েন মুন। মাত্র দুই বছরের মাথায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মাসে পাঁচ ঘণ্টা সাত মিনিট সময় নিয়ে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেন। 

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ বিষয়টা মুনকে ভাবিয়ে তুলল। সঙ্গী সাঈদ আখতারুজ্জামান ‘সুইম বাংলাদেশ’ নামে একটি পেজ ওপেন করেন ফেসবুকে। দুজনে মিলে সাঁতার প্রশিক্ষণে নেমে পড়েন। এর মধ্যে মুন বিকেএসপি থেকে কোচের ট্রেনিং সম্পন্ন করেন। এভাবেই তার প্রফেশনালি সাঁতার শেখানোর কাজের শুরু। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীকে সাঁতার শিখিয়েছেন।

মুন একজন পর্বতারোহীও। পাহাড়ে ওঠার নেশাটা তার অনেক আগে থেকেই। তিনি ভারতের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করেছেন ২০১২ সালের মার্চে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২৮ দিনের এ কঠিন প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে মুনের যাওয়ার সুযোগ হয় সিকিম রাজ্যে, কাঞ্চনজঙ্ঘা রিজিওনে। সেখানে আইস ক্লাইম্বিং ও সাদা পাহাড়ে চড়ার নানা কৌশল শেখানো হয়। কিছু দিন আগে তিনি স্কুবা ডাইভিংয়ের ওপর বেসিক ওপেন ওয়াটার ডাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শ্রীলঙ্কা থেকে।

বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা, সাঁতার নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন তিনি জাতীয় সংবাদপত্র ও অনলাইনে। সাঁতারনামা, বল নিয়ে কারিকুর, বাংলা চ্যানেল রুদ্বশ্বাস সাড়ে চার ঘণ্টা, কচ্ছপের সঙ্গে দশ দিন, অমূল্য ভালোবাসা শিরোনামে লেখাগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 

মুনের আরেক শখ ছবি তোলা। ভ্রমণের পাশাপাশি মুন ছবি তোলেন। বাংলাদেশের অনেক প্রথম সারির সংবাদপত্র, ম্যাগাজিনে তার অসংখ্য ছবি ছাপা হয়েছে। 

ভ্রমণপ্রিয় মুনের অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ সমৃদ্ধ। বাবা-মা বিদেশ থাকার সুবাদে মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রথম উড়োজাহাজে চড়ে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে তপ্ত ভূমিতে অবতরণ করেন। ভ্রমণের দল বিটিইএফ (বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপানশন ফোরাম)-এর সঙ্গে ছাত্রাবস্থায় পুরো বাংলাদেশ চষে বেড়ানোর সুযোগ হয়েছে তার। দৈনিক পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন প্র্রচুর।

একবার সুন্দরবনের গহিন জঙ্গলে হাঁটার সময় সদ্য হেঁটে যাওয়া বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বুক আঁতকে উঠেছিল তার। আরেকবার বাঘ দেখার জন্য গহিন বনে মাচা বানিয়ে সেখানে বসে পালা করে অধীর অপেক্ষা করা ছিল তার দারুণ অভিজ্ঞতা। ভ্রমণের জীবনে কতবার বন্য প্রাণীর মুখোমুখি হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। পাহাড়ে রাস্তা হারিয়েছেন। পাহাড়ে সাইকেল চালিয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন।

স্বেচ্ছাসেবীর কাজেও মুন অনন্য। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কাজ করেছেন। প্রায় ২০ হাজার মহিলা ও শিশুর মধ্যে খাবার বিতরণ করেছেন। তখন একটি বিদেশি সংস্থায় চাকরি করতেন। কিন্তু এখানেও তার মন বসেনি। পাহাড়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না বলে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে নেপালের এভারেস্ট রিজিয়নে থ্রি পাস ট্রেক করতে বেরিয়ে পড়েন একা। ২১ দিন হেঁটে ছিলেন, সময়টা ২০১৯ সাল। সিডরের সময় ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে চলে যান বরগুনার পাথরঘাটায়। সেখানে ১০ দিন ফ্রান্সের একটি মেডিকেল টিমের সঙ্গে কাজ করেন। দারুণ ছিল সে অভিজ্ঞতা। ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে সে দেশের ভলান্টিয়ারদের নিয়ে খাগড়াছড়িতে ভলান্টিয়ার হয়ে ছিলেন প্রায় তিন মাস, রংপুরে ছিলেন এক মাস।

পশুপাখির জন্যও ভালোবাসার শেষ নেই মুনের। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ভারতের ধর্মশালায় একটি অ্যানিমেল রেসকিউ সেন্টারে কাজ করেছেন। ভাওয়ালের বনে কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রে কাজও বাদ দেননি। 

২০০৫ সাল থেকে চার মাস পরপর রক্ত দান করে আসছেন তিনি। কারও রক্তের প্রয়োজন পড়লে রক্ত সংগ্রহে সহায়তা করতে একটুও পিছপা হন না।

এ বছর মুন আয়রনম্যানে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন, যেখানে একই সঙ্গে সাঁতার, সাইকেল, রানিং যাকে ট্রায়াথলন বলেÑএ তিন অ্যাকটিভিটি একের পর এক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা থেকে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থলে একটি চ্যনেল আছে ‘পাল্ক স্ট্রেইট’; সেটাও কখনও জীবনে পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছা আছে তার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা