আশিকুজ্জামান
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৪:৪৩ পিএম
দেশের বিভিন্ন অপ্রচলিত উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করে সময় কাটে ছোলায়মান আলী ফকিরের
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাঠ পর্যায়ে কৃষি নিয়ে কাজ করেন এমন গবেষকের সন্ধান করলে সবার আগে যার নাম আসবে তিনি ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী ফকির। তিনি শিমুল আলু, চুকুর, অড়হরসহ নানাবিধ উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং মাঠ পর্যায়ে সেগুলোকে ব্যবহারোপযোগীও করে তুলেছেন।
শিমুল আলু বা কাসাভা, রোজেল বা চুকুর, অড়হরসহ বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করেছেন ড. ছোলায়মান। এসব উদ্ভিদ থেকে তিনি উন্নতমানের খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন করেছেন। চিপস, চপ, কেক, পাকোড়া, পুডিংসহ নানাবিধ মুখরোচক খাদ্য এসব উদ্ভিদ থেকে উন্নয়ন করেছেন তিনি।
কাসাভা হলো গাছের শেকড়জাত এক ধরনের আলু। অনেকের কাছে এটা শিমুল আলু বা কাঠ আলু হিসেবেও পরিচিত। কাসাভা সহজে এবং কম খরচেই চাষাবাদ করা সম্ভব। কম উর্বর আবাদি জমিতেও এর চাষাবাদ করা যায়।
কাসাভা সেদ্ধ করে, পুড়িয়ে এমনকি গোল আলুর মতো তরকারির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। কাসাভার আটা গমের আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি, পরোটা, কেক তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। কেক, চপ, পাকোড়া, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো কাসাভার চিপসও তৈরি করে প্রদর্শনী করেছেন অধ্যাপক ছোলায়মান।
এ গবেষক আরও জানান, খাদ্যের চেয়ে শিল্পে কাসাভার ব্যবহার বেশি। বিশেষ করে বস্ত্র ও ওষুধ শিল্পের জন্য কাসাভা গুরুত্বপূর্ণ। গ্লুকোজের অন্যতম উৎস কাসাভা। কাসাভার স্টার্চকে এক ধরনের জীবাণুর মাধ্যমে গ্লুকোজে রূপান্তর করা হয়।
আরেকটি সম্ভাবনাময় গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ হলো রোজেল। আঞ্চলিক ভাষায় যা চুকাই বা চুকুর নামে পরিচিত। অপরিচিত ও অপ্রচলিত এ রকম একটি উদ্ভিদের ফুলের বৃতি প্রক্রিয়াজাত করে জ্যাম, জেলি, পুডিং, চাটনি, আচার, চকলেট, চা, জুসসহ বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয় উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন ড. ছোলায়মান।
অধ্যাপক ছোলায়মান বলেন, মূলত রোজেলের বৃতিই প্রধান কার্যকর উপাদান। বৃতির উজ্জ্বল লাল রঙ জৈব খাবার রঙ হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব। বৃতি থেকে জ্যাম, জেলি, চা, আচার, চাটনি, জুসসহ বিভিন্ন পানীয় প্রস্তুত করা সম্ভব। রোজেলের বীজ যখন পরিপক্ব হয় তখন তা আমিষ ও চর্বিতে পরিপূর্ণ থাকে বিধায় এটা প্রক্রিয়াজাত করে গবাদি পশুর খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে রোজেলের পাতাও ওষুধিগুণে পরিপূর্ণ। তা ছাড়া বৃতির উজ্জ্বল রঙই প্রমাণ করে দেয় এটা পুষ্টিগুণে ভরপুর। রোজেলের বৃতিতে থাকে অ্যান্থোসায়ানিন, ক্যারোটিনয়েডসহ গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ।
অড়হর নিয়েও গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ছোলায়মান। অড়হর ডাল দেশে প্রচলিত না হলেও এর গাছের বীজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কাবাবসহ মুখরোচক সাতটি খাদ্য তৈরি করা সম্ভব বলে তার গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে দাবি করেন। তিনি বলেন, শুকনো বীজের অড়হর দিয়ে রুটি, পুরি, শিঙাড়া আর সেদ্ধ বীজের পেস্ট দিয়ে হালুয়া, কাবাব তৈরি করা সম্ভব।
অড়হর ডালের পেস্ট আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি করেছেন অধ্যাপক ছোলায়মান। এটি ভাতের বিকল্প হিসেবে চালের ওপর চাপ কমাবে বলেও জানান এ গবেষক। ভাতের চেয়ে কার্বোহাইড্রেট অনেকাংশে কম থাকায় এটা মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণে অধিক কার্যকর। স্বল্প খরচে ডালের চাহিদা পূরণে অড়হর গাছ ভূমিকা রাখবে। তরকারিতে মটরশুঁটির বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে অড়হর ডাল।