রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগার
জাহিদুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১২:২০ পিএম
পাঠাগারের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন রাজাখালী। এ ইউনিয়নের সবুজ বাজারের দক্ষিণে কৃষ্ণচূড়া মোড়ে ১ জানুয়ারি, ২০২১ সালে উদ্বোধন করা হয় ‘রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগার’-এর।
এটি এ ইউনিয়নের সর্বপ্রথম পাঠাগার। করোনাকালে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে এলাকার শিক্ষিত যুবকদের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পেছনে বর্তমান সভাপতি ম ফ ম জাহিদুল ইসলাম, লায়ন আরিফ চৌধুরী, আনোয়ারুল ইসলাম মামুন, মিসবাহ উদ্দিন, হুমায়ুন কবির খোকন, মোহাম্মদ আলমগীর, অ্যাডভোকেট কামরুল কবির আজাদ, হেফাজ উদ্দিন, মোস্তাক আহমেদ ও মিশকাত উদ্দিন সিকো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে পাঠাগারটি পরিচালনায় উপদেষ্টা, কার্যকরী ও সাধারণ পরিষদ নামে তিন স্তরের কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।
পরিচালনা পরিষদের সদস্য ২১। সাধারণ পরিষদের ১০০। এ পাঠাগারে বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ১ হাজার। প্রতিদিন একটি পত্রিকা এবং মাসিক কয়েকটি ম্যাগাজিন রাখা হয়। বই আদানপ্রদান রেজিস্টারে স্বাক্ষর করে বাড়িতে পড়ারও সুযোগ রয়েছে। এ পাঠাগার কেন্দ্র করে এলাকায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও পরিবেশ রক্ষার কার্যক্রম সম্পন্ন করছে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে সাহিত্য আড্ডা, পাঠচক্র, বুক রিভিউ, চিত্রাঙ্কন, কুইজ, রচনা ও কবিতা আবৃত্তি; ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, ক্যারিয়ার অলিম্পিয়াড, ক্যারিয়ার গাইডলাইন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ক কর্মশালা; সাইবার সিকিউরিটি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও আইনি সহায়তা বিষয়ক কর্মশালা।
পরিবেশ রক্ষায় তারুণ্যের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা, পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন, বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ; অভিভাবক সমাবেশ, বিনামূল্যে পাঠদান, গণসাক্ষর অভিযান, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, সহমর্মিতার ঈদ উদ্যাপন; উপহারের মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়, রমজানে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এবং করোনাকালে ১ হাজার ৫০০ ব্যক্তিকে বিনামূল্যে টিকার রেজিস্ট্রেশন, মাস্ক ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকের জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন, রক্তদান, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যালি, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য।
সাইবার সিকিউরিটি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার, জরুরি সেবার হটলাইন, পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক সচেতনতা এবং ক্যারিয়ার অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৩ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। খাদ্যসামগ্রী, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, অভিভাবক সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৩ হাজার ব্যক্তিকে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষায় ১০ হাজার ৯৫০টি গাছের চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে।
পাঠাগারের সার্বিক বিষয়ে কার্যকরী পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ম ফ ম জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনায় শিক্ষাবিমুখ ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ এবং এলাকায় শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য তরুণ-শিক্ষিত প্রজন্মের কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে গড়ে তোলা হয় রাজাখালী উন্মুক্ত পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্থানীয় অসাধু মহলের বিরোধিতা ও বাধা সত্ত্বেও আমরা বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং পাঠাগার পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি এটাই আমাদের সার্থকতা। উপদেষ্টা পরিষদ ও সদস্যদের মাসিক চাঁদার মাধ্যমে এ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাব এটাই আমাদের লক্ষ্য। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এলজির সহযোগিতায় ৪০টি পরিবারে ১২০টি ভেড়া বিতরণ করা হয়। লবণ চাষি পরিবারের মাঝে ১৪টি সেচ পাম্প বিতরণ করা হয় যেখান থেকে ১১৩ জন চাষি সুফল ভোগ করে। তা ছাড়া পুষ্টির চাহিদা পূরণে বসতবাড়ির আঙিনায় পতিত জমির ব্যবহারে ৭২টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনে পেয়ারা ও পেঁপে গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে।’ পাঠাগারের কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘সব বয়সের নারী-পুরুষ ভেদাভেদ ভুলে পাঠের অভ্যাস সৃষ্টিতে এ পাঠাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি সবার সহযোগিতায় বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অদম্য ইচ্ছা আছে আমাদের।’