ক্যাডেট কলেজ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে
সিফাত রাব্বানী
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১২:১৬ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গ কলেজ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ পেয়েছেন রুবায়তুল এহসান রিদম।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গ কলেজ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ পেয়েছেন রুবায়তুল এহসান রিদম। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিফাত রাব্বানী
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় এক স্বপ্নের সন্ধান পান মো. রুবায়তুল এহসান রিদম।নিজের স্বপ্নপূরণের চেষ্টায় তিনি ছিলেন অটল। পরিবার-পরিজনের শত আপত্তি সত্ত্বেও নিজের স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছিলেন সর্বদা। এহসানের সঙ্গে আলাপকালে শুরুতেই বেশ কৌতূহল নিয়ে জানতে চাই যুক্তরাষ্ট্রকেই কেন বেছে নিলেন? জবাবে জানান, শিক্ষাব্যবস্থার দিক দিয়ে চিন্তা করলে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলো থেকে অনেক এগিয়ে। বিশ্বমানের এ শিক্ষার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে গবেষণা ও পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রমের সুযোগ।
এমনকি এ যুক্তরাষ্ট্রই সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি স্কলারশিপ দেয় শিক্ষার্থীদের। জানালেন কীভাবে আবেদন করলে ভালো একটি স্কলারশিপ পাওয়া যায়। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদন প্রক্রিয়া আমাদের দেশ থেকে অনেক আলাদা এবং সময়সাপেক্ষ। সেখানে উত্তীর্ণ হতে হলে কোনো ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া লাগবে না, তবে আপনার স্কুল-কলেজে থাকাকালে প্রতিটি কার্যক্রম, যেমন প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল, সম্মাননা, রচনা, স্যাট, আইইএলটিএস এবং অতিরিক্ত কিছু যোগ্যতা এসবের সমন্বয়ে তৈরি করা একটি প্রোফাইলের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীকে যাচাই করা হবে।
ভালো একটি স্কলারশিপ পেতে লাগবে এসব বিষয়ের পারদর্শিতার একটি সূক্ষ্ম মিশ্রণ। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থীদের পারিবারিক আয়ের ওপর নির্ভর করে বাড়তি স্কলারশিপ প্রদান করে। তার এ স্বপ্নপূরণে ক্যাডেট কলেজের কীরূপ প্রভাব ছিল জানতে চাইলে জানান, ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই রকম প্রভাবই ছিল। যেহেতু ক্যাডেট কলেজে পড়েছেন, তার ছাত্রজীবন অন্য শিক্ষার্থীদের মতো ছিল না। হাতের কাছে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট না থাকায় বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে কিছুটা কম যুগোপযোগী ছিলেন। তবে এ ক্যাডেট কলেজই আবার অনেক কিছু দিয়েছে তাকে। যে এহসান আগে কিছুতেই পরিপূর্ণ ছিলেন না, ক্যাডেট কলেজই তাকে পরিণত করেছে স্বনির্ভর, পরিশ্রমী, দায়িত্ববান একজন অলরাউন্ডার হিসেবে। শিখিয়েছে কখনও হাল না ছাড়ার। তাই ক্যাডেট কলেজের প্রতি তিনি চিরকৃতজ্ঞই থাকবেন বলে জানান।
তার স্বপ্নপূরণের পরিবারের আপত্তি ছিল কিঞ্চিৎ। প্রতি ছুটিতেই চেষ্টা করতেন কোনো জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার। মাঝে মাঝে এসব প্রতিযোগিতার টানে কলেজ থেকেই দু-তিন দিনের ছুটি নিয়ে চলে আসতেন ঢাকায়, যার জন্য কথা কমও শুনতে হয়নি তাকে। পরিবারসহ আত্মীয়স্বজন সবাই চাইত যাতে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। তবে একজন ছিলেন যিনি সব সময় তার এ স্বপ্নকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি হলেন তার মামা, ড. এ কে এম আবদুল্লাহ আল-আমিন। যিনি সম্প্রতি ইংল্যান্ডের হারপার অ্যাডামস ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন।
এহসান রিদমের প্রোফাইলের উল্লেখযোগ্য বিষয় কী ছিল জানতে চাইলে জানান, তার সম্মাননা, পুরস্কারসমূহ এবং এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিস। আজ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং বিভাগীয় প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬০টির বেশি পুরস্কার আছে তার ঝুলিতে। করোনাকলে ঘরে বসেই কাজ করেছেন কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দক্ষতা উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম এবং তারুণ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। গত এক বছরে কাজ করেছেন একটি অ্যাড-টেক কোম্পানি ও রিসার্চ টিমের সঙ্গে। দ্বাদশ শ্রেণিতে নিযুক্ত হয়েছেন তার কলেজের সাংস্কৃতিক দলের অধিনায়ক হিসেবে। সে সুবাদে ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাওয়ার্ড’সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় পালন করেছেন ক্যাম্পাস প্রতিনিধির দায়িত্ব।
কেন এ কলেজ বেছে নিলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, গেটিসবার্গ কলেজ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৩তম স্থানে রয়েছে। এরই পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘স্টাডি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’-এর দিক দিয়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয়। এটি একটি লিবারেল আর্টস্ কলেজ, যেখানে একই সঙ্গে দুটি বা তিনটি বিষয়ে অধ্যয়ন এবং প্রথম বছর পর্যন্ত যেকোনো সময় বিষয় পরিবর্তন করা যাবে। এ ছাড়া রিসার্চ, কমিউনিটি, ক্লাসরুম, বাসস্থান, পরিবেশ সবকিছুর দিক থেকেই গেটিসবার্গ কলেজ অনন্য। গেটিসবার্গ কলেজ তাকে চার বছরের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা সমমূল্যের প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপ দিয়েছে; যা তার টিউশন ফি, ইন্স্যুরেন্স এবং অন্য সব ফি কভার করবে।
বর্তমানে এহসান চেষ্টা করছেন তার মতোই কিছু উৎসাহী শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের আবেদন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে, যাতে তারা তাদের স্বপ্নপূরণের রাস্তায় এগিয়ে যেতে পারে, যত বাধাই আসুক না কেন। তিনি এবং তার কিছু বন্ধু মিলে ‘ভেঞ্চার এডুকেশন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন; যেখানে উচ্চশিক্ষায় বিদেশ গমন এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত নানানরকম তথ্য ও সাহায্য প্রদান করা হবে একেবারেই বিনামূল্যে! কারণ তিনি চান তার মতো করে প্রতিটি স্বপ্নবাজের স্বপ্নই যেন সত্যি হয়।