× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঐতিহ্যবাহী সিল্ক শাড়ির নগরে

ইসতিয়াক আহমেদ

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ১১:১৪ এএম

ছবি : লেখক

ছবি : লেখক

রেশমি কাপড়, কালাই রুটি, হরেকরকমের সুস্বাদু আম কিংবা পদ্মা নদী। এ নামগুলো শুনলেই প্রথমে যে স্থানের নাম আপনার মনে আসবে, সেই রাজশাহীর গল্প আজ বলব আমরা। এ-যাত্রায় রাতের ট্রেন ধরে চলে গিয়েছিলাম উত্তরের শিক্ষানগরী খ্যাত, আমের ও কালাই রুটির দেশ রাজশাহীতে। একদিকে বিস্তৃত পদ্মা আর তার কোল ঘেঁষেই এ সিল্ক সিটি। মূলত রাতের পদ্মা এক্সপ্রেসে চড়েই আমাদের যাত্রা। রাজশাহী নেমেই চলে গেলাম পর্যটন মোটেলে। নাশতা করেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা। প্রথমেই এ-যাত্রায় ছুটে যাওয়া রাজশাহীর বিখ্যাত আম-লিচুর বাগানে। মোটেল থেকে অটো নিয়ে ছুটলাম প্রথমে কাশিয়াডাঙ্গা বাইপাস রেলগেটে। সেখানে নেমে খানিক পায়ে হেঁটে ঢুকে পড়লাম আম-লিচুর বাগানে। বৃষ্টিভেজা ওয়েদার আর সেই সঙ্গে দলবেঁধে চলল গাছ থেকে নিজ হাতে আম-লিচু পেড়ে খাওয়া। অসাধারণ! আমের সিজনে এলে অন্তত এ ফিলটা নিতে ভুল করবেন না কেউ। পেট পুরে আম-লিচু খেয়ে আমরা পথ ধরলাম কর্ণাহারের মর্মরিয়া বাজারের পথে। যে জায়গা বিখ্যাত বিভিন্ন হাঁসের মাংসের জন্য। মূলত রাজহাঁস ও পাতিহাঁসের কালাভুনার জন্য বিখ্যাত এ জায়গা। দুপুরে দলবেঁধে লাঞ্চ সেরেই আমাদের ফেরার পথ ধরা।

রেশমি কাপড় বুনছেন কারিগর। ছবি : লেখক

মোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে আবারও বেরিয়ে পড়লাম। মোটেল থেকে হাঁটা দূরত্বেই মূলত রাজশাহীর বিখ্যাত টি-বাঁধ। পদ্মা নদী ঘিরে শহরজুড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বাঁধ। মূলত ইংরেজি অক্ষর T-এর আকৃতি অনুসারে তৈরি এটি। গোধূলিলগ্নে রক্তিম সূর্য নদীর জলকে দেয় এক নতুন রূপ। স্থানীয় ও দূরদূরান্তের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি বহুলপরিচিত এবং বেশ জনপ্রিয়ও বটে। আমরাও লোভ সামলাতে না পেরে এই শেষবেলায় নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম পদ্মার বুকে। পদ্মা ঘুরেফিরে এবার রাতের রাজশাহী দেখার পালা। অটোরিকশা নিয়ে প্রথমে চলে গেলাম সাহেববাজার। রাজশাহীর মূল কেন্দ্রবিন্দুই যেন এ সাহেববাজার। সেখানে চা-চু খেয়ে ১০টি রিকশা ঘণ্টাচুক্তিতে রিজার্ভ করে বেরিয়ে পড়লাম রাতের রাজশাহী দেখতে। রাজশাহী নগর বেশ সুপরিচিত তার সুন্দর রাস্তা আর ল্যাম্পপোস্টের জন্য। ল্যাম্পপোস্টের রূপ আরও বেশিই যেন ধরা দেয় রাতের আঁধারে। রুয়েট, রাজশাহী ভার্সিটি সব ঘুরে ফ্লাইওভার, বাইপাস, আমচত্বর ঘুরে চললাম আমরা উপশহরে। কারণ, ঠিক ওখানেই আজ রাতে আমাদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ডিনার। রাজশাহীর আরেক বিখ্যাত খাবার কালাই রুটি; সঙ্গে মরিচ ও বেগুন ভর্তা। এ উপশহরেই আছে কালাইবাড়ি, কালাইঘর, কালাই হাউস নামে বেশ কিছু দোকান। বিখ্যাত এ হোটেলগুলোতেই দেখা পাবেন কালাই রুটির। ডিনার শেষ করে ছুটলাম আমরা সিঅ্যান্ডবি মোড়ে। সেখানে পাওয়া যায় বিখ্যাত রানা মিষ্টিঘরের মিষ্টি। আর যা হোক, রাজশাহী ঘুরতে গেলে এ মিষ্টি অন্তত মিস করবেন না। এরপর ঘরে ফেরা, অপেক্ষা সকাল হওয়ার। সকালেই উঠে পড়লাম আমরা। ব্রেকফাস্ট সেরে চটজলদি বেরিয়ে পড়ার পালা। আজ দিনটি মূলত যে কারণে রাজশাহীর সিল্ক সিটি নামটি পাওয়া, সেই সিল্কের সন্ধানের জন্য।

বেরিয়ে পড়েই ছুটলাম উপশহরে সপুরা সিল্ক মিলের পথে। সিল্ক আর রাজশাহীÑনামেই যেন একে অন্যের পরিপূরক। কয়েক দশক থেকে চলে আসছে এ পরিচিতি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচি ও ফ্যাশন বদলে গেলেও অমলিন সিল্কের ঐতিহ্য। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সপুরা সিল্ক মিলস হলো রাজশাহীর আরেকটি মাস্ট ভিজিট প্লেস। এখানে যেমন দেখতে পাবেন কোথা থেকে কী করে তৈরি হয় সিল্ক কাপড়, তেমন কিনতে পারবেন পছন্দ অনুযায়ী।

এ অঞ্চলে রেশম উৎপাদনের সূচনা ত্রয়োদশ শতকে। তখন এটি বেঙ্গল সিল্ক বা গঙ্গা সিল্ক নামে পরিচিত ছিল। পাকিস্তান সরকার ১৯৫২ সালে রাজশাহীতে রেশম উৎপাদন শুরু করে। রাজশাহী সিল্ক ফ্যাক্টরি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছিল, যা ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ২০২১ সালে ওই রাজশাহী সিল্ককে বাংলাদেশের অন্যতম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। রেশম বা সিল্ক এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রোটিন তন্তু, যার কয়েকটি ধরন বস্ত্রশিল্প তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এক ধরনের রেশম পোকার গুটি থেকে এ ধরনের সুতা পাওয়া যায়। বিশেষ ব্যবস্থায় রেশম পোকা চাষের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে এ সুতা প্রস্তুত করা হয়। রেশম পোকার গুটি চাষের পদ্ধতিকে সেরিকালচার বলা হয়।

নদীর তীরে গোধূলী লগ্নে। ছবি : লেখক

সিল্কের সমগ্র উৎপাদন প্রক্রিয়াকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়, যা সাধারণত বিভিন্ন সত্তা দ্বারা পরিচালিত হয়। এ প্রক্রিয়া শুরুই হয় তুত গাছ চাষ এবং সে তুতপাতায় রেশম কীট চাষ করার মাধ্যমে। লার্ভাগুলো পাতা খাওয়া শুরু করার অল্প দিনেই পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে। আর শুরু করে কোকুন তৈরি। কোকুনগুলো পরিপুষ্ট হয়ে গেলে এগুলো ফুটন্ত জলে দ্রবীভূত করা হয়; যাতে পৃথক লম্বা তন্তুগুলো বের করে স্পিনিং রিলে সুতা বানানো যায়। যদি বলে থাকেন সিল্ক শিল্পের সব থেকে ট্র্যাজেডি কোন অংশটি, তবে সেটি হলো এ কোকুন থেকে সুতা তৈরি। মূলত সুতা তৈরির জন্য সিল্ক তৈরিকারী সেই মথকেই গরম পানিতে জীবন্ত অবস্থায় ডুবিয়ে ও ফুটিয়ে মারা হয়, তাদের থেকে রেশম তৈরির জন্য। এরপর সেই কোকুন থেকেই তৈরি হয় রেশমি সুতা। আর সেই সুতা থেকেই হয় সিল্ক বা রেশমি কাপড়। সিল্ক উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়াটিই দেখতে পাবেন যদি আপনি আসেন ঘুরতে এ সপুরা সিল্কে। মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, সিল্ক এত দামি কেন? মূলত ১ কেজি রেশম উৎপাদন করতে ১০৪ কেজি তুতপাতা ও ৩ হাজার রেশম মথ লাগে। সেই সঙ্গে অন্যান্য তন্তুর তুলনা করলে রেশম তৈরি অনেক বেশি পরিমাণে পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। রেশম যে শুধু রাজশাহীতেই চাষ ও উৎপাদন হয় তা কিন্তু নয়, রাজশাহীর পর সর্বাধিক রেশম উৎপাদন হয় উত্তরের রংপুর ও দিনাজপুরে। শুধু সিল্ক উৎপাদন নয়, যদি চান নানান ধাঁচের ও মানের সিল্ক কাপড় ও শাড়ি কিনতে তবে আপনার জন্য সিল্কের স্বর্গ এ সপুরা সিল্কের সেলস আউটলেট। বিভিন্ন রকম ডিজাইনের ও মানের শাড়ি পাবেন এখানে। যদি চান তবে আপনার পছন্দের রঙ নির্বাচন করে সে অনুযায়ী বানিয়েও নিতে পারবেন শাড়ি এখান থেকেই। ৩ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যেই পাবেন এখানকার বিখ্যাত সব সিল্কের শাড়ি। সপুরা সিল্ক মিলের আশপাশে আছে আরও বেশ কিছু সিল্ক শাড়ির শোরুম। তুলনামূলক কম মূল্যেই পাবেন শাড়ি সেগুলোয়। তাই শুধুই সপুরা সিল্ক নয়, সময় পেলে সেই শোরুমগুলোও ঘুরে দেখতে ভুলবেন না।

সিল্কের দেশে ঘোরাঘুরি করতে করতে দুপুর হয়ে গেছে। এবার পালা আমাদের মোটেলে ফেরার। চটজলদি মোটেলে ফিরে লাঞ্চ করেই ধরলাম স্টেশনের পথ। কারণ, বিকাল ৪টায় ট্রেন আমাদের ঢাকার পথে। ৪টায় ছাড়া ট্রেন রাত ১১টায় নামিয়ে দিল আমাদের কমলাপুরে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা