ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৪
গোলাম কিবরিয়া
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১০:২৯ এএম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ১০:৫৪ এএম
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৪ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে ‘ইউআইইউ মার্স রোভার টিম’। প্রবা ফটো
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৪ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে ‘ইউআইইউ মার্স রোভার টিম’। প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ড ২৯ মে থেকে ১ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা স্টেটের হ্যাঙ্কসভিলে মার্স ডেজার্ট রিসার্চ স্টেশনে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ ও ২০২৩ সালের প্রতিযোগিতায়ও এশিয়ায় প্রথম হয়েছিল ইউআইইউ
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘ইউআইইউ মার্স রোভার টিম’ মার্স সোসাইটি আয়োজিত ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৪ প্রতিযোগিতায় এশিয়ায় টানা তৃতীয়বারের মতো প্রথম স্থান অর্জন করেছে। প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ড ২৯ মে থেকে ১ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা স্টেটের হ্যাঙ্কসভিলে বিখ্যাত মার্স ডেজার্ট রিসার্চ স্টেশনে অনুষ্ঠিত হয়। ইউআইইউ মার্স রোভার টিম ২০২২ ও ২০২৩ সালের ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায়ও এশিয়ায় প্রথম হয়েছিল।
তিন দিনের চূড়ান্ত রাউন্ডে নিজেদের তৈরি রোভারের ক্ষমতা এবং অপারেশন দক্ষতা প্রদর্শন করে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। এজন্য রোভারগুলোকে অনুসন্ধান, স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন, চরম পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা, ইকুইপমেন্ট সার্ভিসিং-এ চারটি মিশন সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করতে হয়েছে।
ইউআইইউ মার্স রোভার টিম মিশন অতিক্রমের এ সফলতায় চূড়ান্ত পর্বে ৩৮টি দলের মধ্যে বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করলেও এশিয়ান দলগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এ পর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, চিলি, মেক্সিকো, তুরস্কসহ প্রায় ১৫টি দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ইউআইইউ মার্স রোভার দল।
বিজয়ী ইউআইইউ দলটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিশ্ববিদ্যলয়টির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেকুল ইসলাম এবং মেন্টরের দায়িত্ব পালন করেন প্রভাষক আবিদ হোসাইন। ইউআইইউ রোবোটিকস ক্লাবের ১০ সদস্য নিয়ে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রকল্পের টিম লিডার ইউআইউর কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইয়াসিন। অন্যান্য ম্যানেজমেন্ট সাব টিমে সাকিব মাহমুদ সাদ, মেকানিক্যাল সাব টিমে বায়েজিদ উদ্দিন মিয়া, ইলেকট্রিক্যাল সাব টিমে শাহ মেহরাব হোসেন ফাহিম, সফটওয়্যার সাব টিমে শেখ সাকিব হোসেন, কমিউনিকেশন সাব টিমে সরওয়ার হোসেন এবং সায়েন্স সাব টিমে সুরাইয়া আফরোজ মারিয়া নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মেন্টরের দায়িত্ব পালন করেন প্রভাষক আবিদ হোসাইন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমরা সবাই উচ্ছ্বসিত। ২০২২ সালে আমাদের যাত্রা হয়। সেবার বিশ্বে আমরা ১৩তম, ২০২৩ সালে বিশ্বে ২৭৩.৫৯ পয়েন্ট নিয়ে নবম এবং ২০২৪ সালে ৩০৪.২৫ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করি। নিঃসন্দেহে এ অর্জন বিরাট এক সাফল্য। এ পুরো জার্নিতে আমি ছিলাম। ২০২২ সালে আমরা প্রথম রোভার তৈরি করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। পরের বার রোভারে আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এবারের রোভারে আমরা আরও নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করি। নিজেদের তৈরি রোভারের ক্ষমতা ও অপারেশনের দক্ষতা প্রদর্শন করে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। এজন্য অনুসন্ধান, স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন, চরম পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা ও ইকুইপমেন্ট সার্ভিসিংয়ের মিশন অতিক্রম করতে হয় রোভারকে। যেহেতু আমাদের ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল বিভাগ নেই তাই সিইসি ও ইইই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফিল্ড রিসার্চের মাধ্যমে রোভার ডিজাইন করতে হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থীরা অনেক পরিশ্রম করেছে। সারা দিন ক্লাস শেষে রাত জেগে কাজ করেছে। আমাদের সবার বিশাল অভিজ্ঞতা হয়েছে।’
বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কোনো পার্থক্য কি চোখে পড়েছে; যা তাদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আবিদ বলেন, ‘তাদের টিমগুলোকে ভার্সিটি ছাড়াও বড় বড় ব্র্যান্ড স্পন্সর করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা এমন স্পন্সর পাই না। পুরো বাজেটটিই ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বহন করেছে। আমাদের দেশের স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কাজের মূল্য অনুধাবন করতে পারে না। আমরা চেষ্টাও করেছিলাম ভার্সিটির বাইরে স্পন্সর জোগাড় করতে, কিন্তু আশানুরূপ ফল পাইনি।’
এমন বড় সাফল্যে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি আবিদ হোসাইন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। স্পন্সর ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েছে সব সময়। এজন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ ইউআইইউ ভিসির প্রতি। এমন সহযোগিতা বজায় থাকলে আশা করি আগামীবার আমরা আরও বড় সাফল্য নিয়ে আসতে পারব।’
এবার এ প্রতিযোগিতায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে ফাইনালে অংশগ্রহণ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্র্যাকইউ মঙ্গল-তরী’ ও ইউআইইউ মার্স রোভার টিম।
চূড়ান্ত ফাইনালিস্ট ৩৮ দলের চ্যাম্পিয়নশিপের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৯২.৭৫ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পোল্যান্ডের এজিএইচ ইউনিভার্সিটি অব ক্রাকোর ‘এজিএইচ স্পেস সিস্টেমস’ দল, ৩৯১.৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির ‘টিম মাউন্টেনিয়ারস’, ৩৭৪.২৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিংহাম ইয়ং ইউনিভার্সিটির ‘বিওয়াইইউ মার্স রোভার’ দল এবং ৩৪১.৫৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ‘মার্স রোভার ডিজাইন টিম’।
৩০৪.২৫ পয়েন্ট নিয়ে ইউআইইউ মার্স রোভার ৩৮ দলের মধ্যে বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ার মধ্যে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। তালিকার সেরা দশের মধ্যে ইউআইইউ ছাড়াও পোলান্ডের একটি, যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি ও কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে।