রোকনুজ্জামান
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১০:২৩ এএম
প্রবা কোলাজ
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় বক্তৃতা প্রদানের অনুষ্ঠান ‘টেড টক’। এখানে বক্তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে। গত মঙ্গলবার ‘টেডএক্স-চিটাগাং ইউনিভার্সিটি’ শিরোনামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক এ বক্তৃতা প্রদানের অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখা আট বক্তা এতে অংশ নেন।
বক্তারা হলেন বাংলাদেশ সায়েন্স অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হাসিনা খান, চিকিৎসক ও বিতার্কিক ডা. আবদুন নূর তুষার, গীতিকার ও করপোরেট ব্যক্তিত্ব আসিফ ইকবাল, লেখক আনিসুল হক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বাসনা মুহুরি, হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া, এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী ডা. বাবর আলী ও মডেল পিয়া জান্নাতুল। ‘একটি নতুন আগামী’ প্রতিপাদ্যে চবিতে প্রথমবারের মতো আয়োজনটি করে চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি।
অধ্যাপক হাসিনা খান
সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের গবেষণার গল্প বলেন অধ্যাপক হাসিনা খান। তিনি জানান ৩০ বছর আগে কীভাবে শুরু হয়েছিল তাদের এ গবেষণা। কম তাপমাত্রায় পাটের বীজ সংরক্ষণ, ছত্রাকরোধী পাট, পাটের জিনোমে মার্কার ডিএনএ নিয়ে গবেষণার কথা। পাট গবেষণার সফলতা ভবিষ্যতে নতুন গবেষণার আগ্রহ জোগাবে বলেও আশা তার। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে উন্নতমানের পাট উৎপন্ন হয় বাংলাদেশে। কার্বন-নিউট্রাল হওয়ায় এটি পরিবেশেরও ক্ষতি করে না। পাট আমাদের আইডেনটিটি।’
ডা. বাসনা মুহুরি
অটিস্টিক শিশুর মা হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ডা. বাসনা মুহুরি। গল্পে গল্পে বলেন তার সংগ্রামের কথা। ৩৫ বছর আগে ডা. মুহুরি যখন বুঝতে পারেন তার সন্তান অর্ণব অন্য শিশুদের মতো নয়, চিন্তার ভাঁজ পড়ে তার কপালে। চট্টগ্রামের সব ডাক্তারের কাছে ধরনা দিয়েও জানতে পারেন না এ বিশেষ অবস্থার কারণ। সবশেষে ভারতে গিয়েও শুনতে হয় ‘অটিজমের চিকিৎসা নেই’। তখনই জিদ চাপে তার মনে। শুরু করেন অটিজম সম্পর্কে জানা ও জানানো। দিল্লি, সিঙ্গাপুরে করেন প্রশিক্ষণ কোর্স। ডা. মুহুরি বলেন, ‘আমার ছেলেকে স্কুলে দিলে এক সপ্তাহের মাথায় বের করে দেয়। আত্মীয়রা দাওয়াত দিলে পরোক্ষভাবে বোঝাত যেন অর্ণবকে না নিয়ে যাই। অনেকে আবার মনে করত এটা ছোঁয়াচে কিছু। মানুষের এসব ধারণার কারণ ছিল তাদের অজ্ঞতা। অনেক প্রচেষ্টার পর এখন দিন বদলেছে। সেই মানুষেরাই এখন দাওয়াতের সময় বলে দেয় যেন অর্ণবকে সঙ্গে নিয়ে যাই।’
অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া
হালদা গবেষক ও চবি অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা রক্ষায় তাদের সংগ্রামের কথা। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে হালদা প্রতি বছর প্রায় ৮০০ কোটি টাকার অবদান রাখছে। এ নদী থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিদিন ১৮ কোটি লিটার পানি নেয়, যা শহরবাসীর বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। এটিই দেশের একমাত্র নদী যেটাকে দূষণমুক্ত করতে সরকার দুটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।’ এই গবেষক বুঝেছিলেন হালদা নিছক কোনো নদী নয়। তাই লড়ে গেছেন এর জলুস ফেরাতে। একই সঙ্গে কাজ করে গেছেন ল্যাবরেটরির গবেষণা ও জনসচেতনতায়। প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, অচিরেই দেশের মধ্যে দূষণমুক্ত নদীর রোল মডেল হয়ে উঠবে হালদা।
বাবর আলী
পর্বতারোহী ডা. বাবর আলী শোনান তার হাল না ছাড়ার গল্প। বাবর বলেন, ‘পর্বত আরোহণকে আমি কোনো স্পোর্টস নয় বরং জীবনাদর্শ হিসেবে দেখি। এটাকে আমার তীর্থযাত্রা মনে হয়। এভারেস্টের পথে প্রকৃতি আমাদের নানা শিক্ষা দেয়। উপলব্ধি করেছি প্রকৃতির কাছে আমরা কত ক্ষুদ্র। এভারেস্টের জুনিপার গাছ অধিক তাপ সংরক্ষণের জন্য পর্বতের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের আকৃতি ছোট করে নেয়। এ থেকে বোঝা যায় আমরা যত ওপরে যাব আমাদের তত ছোট হতে হবে।’ সবাইকে পর্বতারোহী হতে হবে এমন মনে করেন না তিনি। তবে পরামর্শ দেন ‘নিজের জীবনের পর্বত’ আরোহণ করে চূড়ায় পৌঁছানোর।
আবদুন নূর তুষার ও আসিফ ইকবাল
ভিন্নভাবে চিন্তা করা ও সফলতার মধ্যে যোগসূত্র দেখান ডা. আবদুন নূর তুষার। তিনি বলেন, ‘সফলতার সংজ্ঞা শতকে শতকে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীর বড় মানুষগুলো কারও কাছ থেকে মোটিভেটেড হয়ে সফল হননি। তারা ছিলেন সেলফ মোটিভেটেড।’ আসিফ ইকবাল বলেন প্রথমে ড্রপআউট হয়েও কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সেরাদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছিলেন। নিজের ভালো লাগার কাজটাই ভালোভাবে করতে পরামর্শ দেন এ দুই বক্তা।
আনিসুল হক ও পিয়া জান্নাতুল
‘গল্প বলার’ গল্প বলেন লেখক আনিসুল হক। জানান তার লেখক হয়ে ওঠার গল্প। বলেন, ‘মানুষের পাঁচটি আঙুল থাকলেও লেখক-সাহিত্যিকদের থাকে ছয়টি। ষষ্ঠটি হলো তার কলম।’ মডেল পিয়া জান্নাতুল বলেন তার মডেল হওয়ার পথে নানা চ্যালেঞ্জের কথা। বলেন, ‘জীবনটা আমার কাছে প্রতিযোগিতা নয়, আমি এটাকে একটি ক্যাটওয়াক মনে করি।’ বহুমুখী প্রতিভা থাকলে সেগুলো সমানতালে চালিয়ে নেওয়ার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্টের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।