× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ব্রি-১০৩ : ধানের নতুন জাত, জাগায় নতুন আশা

ফেনী সংবাদদাতা

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১৩:০৫ পিএম

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৪১ পিএম

পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে ব্রি-১০৩ ধান। ছবি : প্রবা

পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে ব্রি-১০৩ ধান। ছবি : প্রবা

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উচ্চ ফলনশীল ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে, যা অবমুক্তের অপেক্ষায় রয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত এ ধানের জাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে কম। এ জাতটি বিদ্যমান জাতের তুলনায় বিঘাপ্রতি ১ থেকে ২ মণ ফলন বেশি, খড়ের ফলনও বেশি। জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় এ ধানের জাত ব্রি-১০৩ অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ। 

ব্রির সোনাগাজী আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কর্মকার জানান, ব্রি ধান-১০৩-এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অঙ্গজ অবস্থায় গাছের আকার ও আকৃতি ব্রি ধান-৮৭ থেকে ভিন্ন। পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১২৫ সেমি। দানা লম্বা ও চিকন। এ জাতের ধানের দানার রঙ খড়ের মতো। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩ দশমিক ৭ গ্রাম। এ ধানের প্রোটিন এবং অ্যামাইলোজের পরিমাণ যথাক্রমে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ। প্রতি হেক্টরে এ জাতটির গড় ফলন ৬ দশমিক ২ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতি হেক্টরে ৭ দশমিক ৯৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের গড় জীবনকাল ১৩০ দিন (১২৮-১৩৩ দিন)। শস্য কর্তনে ব্রি ধান-১০৩ জাতটি উদ্ভাবনের পর হতে বিভিন্ন পরীক্ষায় হেক্টরপ্রতি সারা দেশের গড় ফলন পাওয়া গেছে ৬ দশমিক ২০ টন।

ব্রি-১০৩ জাতের বৈশিষ্ট্য : ব্রি-১০৩-এর কাণ্ড শক্ত, পাতা হালকা সবুজ এবং ডিগ পাতা খাড়া, লম্বা ও চওড়া। ধানের ছড়া লম্বা ও ধান পাকার সময় ছড়া ডিগ পাতার ওপরে থাকে, তাই ক্ষেত দেখতে খুব আকর্ষণীয় হয়। ধান লম্বা ও চাল সোজা। 

ড. বিশ্বজিৎ কর্মকার আরও জানান, এ জাতটি রোপা আমন মৌসুমে বৃষ্টিনির্ভর চাষাবাদ উপযোগী। এ ধানের চাষাবাদ অন্যান্য উফশী রোপা আমন ধানের মতোই। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ১৫ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত, অর্থাৎ ১ আষাঢ় থেকে ২১ আষাঢ়। এ ধান ২৫-৩০ দিনের চারা গোছা প্রতি ২-৩টি করে ২৫ সেমি থেকে ১৫ সেমি দূরত্বে রোপণ করতে হবে। সারের মাত্রা অন্যান্য উফশী জাতের মতোই (প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি জিপসাম, জিংক সালফেট- ১৮০, ৮৫, ১০০, ৭০, ১২.৫ কেজি)। সর্বশেষ জমি চাষের সময় সবটুকু টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, দুই তৃতীয়াংশ এমওপি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার সমান তিন কিস্তিতে, যথারোপণের ১০ দিন পর ১ম কিস্তি, ২৫ দিন পর ২য় কিস্তি এবং ৪০ দিন পর ৩য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। বাকি এক তৃতীয়াংশ এমওপি দ্বিতীয় কিস্তি ইউরিয়ার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে।

ব্রি-১০৩-এ রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে কম হয়। তবে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করা হবে।

নতুন জাত উদ্ভাবন সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্রি-১০৩-এর কৌলিক সারি বিআর (বায়ো) ৮৯৬১-এসি২৬-১৬। প্রথমে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত জাত ব্রি ধান-২৯-এর সঙ্গে এফএল৩৭৮-এর সংকরায়ণ করা হয়, পরে অ্যান্থার কালচার করে এই সারিটি উদ্ভাবন করা হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে হোমোজাইগাস কৌলিক সারি নির্বাচনের পর ৩ বছর ফলন পরীক্ষার করা হয়। পরবর্তী সময়ে উক্ত কৌলিক সারিটি আমন ২০১৮ মৌসুমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। উক্ত কৌলিক সারিটির ফলন ব্রি ধান-৪৯-এর চেয়ে বেশি হওয়ায় প্রস্তাবিত জাত হিসেবে নির্বাচিত হয়।

পরবর্তী সময়ে জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক টি. আমন ২০২১ মৌসুমে ব্রি ধান-৮৭ (চেক জাত) এর সঙ্গে কৃষকের মাঠে প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক হওয়ায় টি. আমন মৌসুমের জন্য একটি আগাম জাত হিসেবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়।

পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে ব্রি-১০৩ ধান। ছবি : প্রবা

ড. বিশ্বজিৎ কর্মকার উল্লেখ করেন, আমন মৌসুমে আবাদযোগ্য ব্রি ধান-১০৩ সদ্য উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাত, যা ইতোমধ্যে জাতীয় কারিগরি কমিটিতে পাস হয়েছে এবং জাতীয় বীজ বোর্ডে পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে। জাতীয় বীজ বোর্ডে পাস হওয়ার পর এই বীজ সারা দেশে সম্প্রসারণ করা হবে। তাই এই জাতটি সারা দেশে চাষ করা হলে দেশের মোট ধান উৎপাদনে অনেক বড় অবদান রাখবে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় এ জাতটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। 

এ ধানের পরীক্ষামূলক চাষি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণ চর চান্দিয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আবু সাঈদ রুবেল জানান, এ ধান চাষ করেছেন তিনি। প্রথমবার চাষেই সফলতা পেয়েছেন। আমন মৌসুমে ১ হেক্টরে অন্য জাতের ধান ৫ মেট্রিক টন উৎপাদন হলে এ নতুন জাতটি ছয় মেট্রিক টনেরও বেশি উৎপাদিত হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. মোফাজ্জল করিম বলেন, ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে অন্যান্য জাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্রি ধান-১০৩-এর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। নুয়ে পড়েনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা