চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৪ পিএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:১৩ পিএম
শিবগঞ্জ উপজেলায় একটি ক্ষেতে স্ট্রবেরি গাছ পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। প্রবা ফটো
বাজারে স্ট্রবেরির চাহিদা নেই- এমন অজুহাতে নামমাত্র মূল্যে চাষির কাছ থেকে স্ট্রবেরি কিনছেন মধ্যস্থতাকারীরা। এতে চাষির লাভের টাকার বড় অংশই চলে যাচ্ছে তাদের পকেটে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষেত থেকে আকারভেদে ১৫০-২০০ টাকা কেজি দরে স্ট্রবেরি বিক্রি হলেও বাজার ও সুপার শপগুলোয় বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে বাজারে চাহিদা থাকলেও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় স্ট্রবেরির আবাদ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন এ জেলার চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত বছর ১০০ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়। এবার ১৮ হেক্টর কমে ৮২ হেক্টর জমিতে এ ফলের চাষ করছেন কৃষকরা। এর মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৮০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হেক্টর এবং গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে স্ট্রবেরি।
স্ট্রবেরি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি স্ট্রবেরির চাষাবাদ হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যেই এই ফলের চারা রোপণ করতে হয়। আবাহওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের আশা দেখেন কৃষকরা। কিন্তু ভালো ফলন হলেও তাদের লাভের আশা করাই যেন বৃথা।
চাষিরা বলছেন, ফলটি পরিপক্ব হওয়ার পরপরই মধ্যস্থতাকারীরা ক্ষেতে আসেন এবং এখান থেকেই নামমাত্র মূল্যে স্ট্রবেরি কেনেন। ফলটি দ্রুত পচনশীল হওয়ায় পরিপক্বের পরপরই একপ্রকার বাধ্য হয়ে মধ্যস্থতাকারীর কাছে বিক্রি করে দেন স্ট্রবেরি চাষিরা।
রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকারভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে স্ট্রবেরি বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকাদের স্ট্রবেরি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০, মাঝারি আকারেরটা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ আর সব বড় সাইজের স্ট্রবেরি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা। তবে বাজারে ছোট আকারের একটা স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। কয়েক দিন আগে তোলা এই স্ট্রবেরির দাম ৪০০ টাকা।
শিবগঞ্জের স্ট্রবেরি চাষি মুনিরুল ইসলাম। তিনি পরের জমি লিজ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে স্ট্রবেরি চাষাবাদ করছেন। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। নিজেই চারা তৈরি করে লিজ নেওয়া জমিতে স্ট্রবেরি আবাদ করেছেন।
এই স্ট্রবেরি চাষি বলেন, এবার মৌসুমের প্রথমে স্ট্রবেরির আশানুরূপ দাম পাওয়া গেছে। সময়ের ব্যবধানে এই ফলটির দাম কমে গিয়ে একেবারে নামমাত্র মূল্যে চলে এসেছে। স্ট্রবেরির কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশ তিনি।
অনলাইনে স্ট্রবেরি বিক্রেতা সিয়াম বলেন, এখন অনলাইনের মাধ্যমে স্ট্রবেরি বিক্রি করা খুবই সহজ। ভোক্তার অর্ডার কনফার্ম হওয়ার পরপরই মাঠ থেকে ফল তুলে কুরিয়ারে বুকিং দিলেই হয়ে যায়। এতে আমরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ওই ভোক্তাও বাজার দামের তুলনায় অনেক কমে কিনতে পারে এই ফল।
কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, স্ট্রবেরি চাষাবাদ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। যথাযথভাবে যত্ন নিতে না পারলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে এই ফলের আবাদ ছেড়ে অনেকেই অন্য শাকসবজি চাষাবাদে ঝুঁকছেন।
মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি কেনা হয় বাজারে বিক্রির দামের তুলনায় একটু কমেই। এই ফলটি হাতেগোনা কয়েক দিন ছাড়া রাখা যাবে না। নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া সময়মতো বাজার ধরাতে না পারলে অনেক স্ট্রবেরি পচে নষ্ট হয়। তাই ফলটি কম দামে কেনা হয়।
ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে কত টাকা লাভ হয় এমন প্রশ্নের সদুত্তর দেননি তিনি।
স্ট্রবেরি উৎপাদনের শীর্ষে থাকা কয়েকটি জেলার মধ্যে অন্যতম চাঁপাইনবাবগঞ্জ। কিন্তু জেলার কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন জানেন না এখানে স্ট্রবেরি আবাদ হয়।
তিনি বলেন, আমি সঠিক জানি না এ জেলায় স্ট্রবেরির আবাদ হয় কি না। তবে লোকমুখে শুনেছি হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক স্ট্রবেরি চাষ করেন। এই ফলের দাম কেমন। কত টাকায় স্ট্রবেরি বিক্রি করছেন কৃষকরা এটা জানা নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘এ ফলটি সময়ের মধ্যে বাজারজাত করা না গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। সব মিলিয়ে এ ফলের আবাদ করা খুবই ঝুঁকির্পূর্ণ। যেসব কৃষক স্ট্রবেরি আবাদ করছেন তাদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার স্ট্রবেরি চাষাবাদ কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে ভালো দাম থাকায় আশা করা যাচ্ছে সামনের দিন থেকে কৃষক এ ফল চাষাবাদে ঝুঁকবেন।’