রফিকুল ইসলাম সান, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৮ পিএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪ ১৫:৫৩ পিএম
চোরের ভয়ে পেঁয়াজের ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে ছাউনি। রাতের বেলা কৃষকরা দল বেঁধে সেখানে থেকে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দেন। প্রবা ফটো
সারা দেশে পাবনার সাঁথিয়ার খ্যাতি ‘পেঁয়াজের ভান্ডার’ হিসেবে। কিন্তু গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে লাভ দূরে থাক, লোকসান হয়েছে সেখানকার পেঁয়াজ চাষিদের। তবে চলতি বছর মুড়িকাটা (মূলকাটা) পেঁয়াজে যেমন, তেমনি হালি জাতের পেঁয়াজেও ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। তবে শঙ্কার কথা হলো, রাত হলে ক্ষেত থেকেই চুরি হয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজ।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭৫ টাকায়। তবে সাধারণ ক্রেতারা মনে করছেন ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের এমন দাম অনেকটাই অস্বাভাবিক। এদিকে দাম অস্বাভাবিক হওয়াতে প্রতি রাতেই ক্ষেত থেকে চুরি হচ্ছে কাঁচা পেঁয়াজ। এ পরিস্থিতিতে কোনো কোনো পেঁয়াজ চাষি চুরি যাওয়ার আতঙ্কে পুষ্ট হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তুলে ফেলছেন পেঁয়াজ। চুরি ঠেকাতে রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন অনেক চাষি। কিন্তু পাহারা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না পেঁয়াজ চুরি।
পেঁয়াজ চাষের আওতায় ১৭ হাজার হেক্টর জমি
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল আগাম বা মুড়িকাটা (মূলকাটা) জাতের পেঁয়াজ, যা অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বাকি সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে হালি জাতের পেঁয়াজ। আর এখন মাঠে রয়েছে দানার দেশি হালি পেঁয়াজ। এসব জমির পেঁয়াজই চুরি হয়ে যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, স্থানীয় পাটগাড়ি গ্রামে অনলাইন জুয়া ছড়িয়ে পড়েছে। জুয়া খেলার টাকা জোগাড় করার উদ্দেশ্যে জুয়াড়িরাও সংঘবদ্ধভাবে এ কাজ করতে পারে।
পাটগাড়ি এলাকার পেঁয়াজ চাষি মন্টু খান জানান, এ বছর ধারদেনা করে তিনি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। রাতে পাহারা দিলেও গত রবিবার রাতের কোনো এক সময় তার ক্ষেত থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ মণ পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে।
ক্ষেত পাহারা দিতে অস্থায়ী ছাউনি
কৃষকরা জানান, ক্ষেতের সব পেঁয়াজই এখন বেশ বড় হয়ে গেছে। দুই হাতে একসঙ্গে হালকা করে ধরে গাছসুদ্ধ টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ১০-১২টা পেঁয়াজ উঠে আসে। তাই সুযোগমতো দুই-তিনজন চোর এসে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই দুই-তিন মণ পেঁয়াজ তুলে বস্তায় ভরে চম্পট দিচ্ছে। সরেজমিনে উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চোরের ভয়ে পেঁয়াজের ক্ষেতের পাশে অস্থায়ী ছাউনি বসানো হয়েছে। রাতের বেলা কয়েকজন কৃষক একসঙ্গে সেখানে শুয়ে-বসে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দেন।
অপুষ্ট পেঁয়াজই তুলে ফেলছেন চাষিরা
যেখানে অস্থায়ী ছাউনি বা পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে পুষ্ট হওয়ার আগেই পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন কৃষকরা। সরেজমিনে গতকাল সোমবার পাটগাড়ি এলাকায় গিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে সেখানকার তায়জাল খান, মুন খান, মজিদ প্রামাণিক ও হামিদ প্রামাণিক এবং ভীটাপাড়া গ্রামের শাহ আলম প্রামাণিকসহ অন্তত ১০ জন কৃষকের ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। রাত জেগে পাহারায় থাকার পরও তায়জাল খানের প্রায় আট মণ পেঁয়াজ চুরি হয়েছে গত বৃহস্পতিবার রাতে। তাই তিনি ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে ফেলার কথা ভাবছেন। অথচ তার পেঁয়াজ পুরোপুরি পুষ্ট হতে এখনও অন্তত ২০ দিন সময় লাগবে।
সাঁথিয়া উপজেলার পাটগাড়ি এলাকার নূরনবী প্রামাণিক জানান, এ বছর ধারদেনা করে তিনি দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। বাড়ি থেকে পেঁয়াজের ক্ষেত দূরে হওয়ায় সব সময় তার পক্ষে পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু এ বছর চোরের উপদ্রব বেশি হওয়ায় প্রতি রাতেই অন্যান্য কৃষকের সঙ্গে ক্ষেতে বসানো ছাউনিতে থেকে পাহারা দিচ্ছেন তিনি।
জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন আলহাজ সরদার। তিনি বলেন, এ বছর পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। দামও খুব ভালো পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভালো দামের কারণে পেঁয়াজের ক্ষেতে চোরের উৎপাতও খুব বেড়ে গিয়েছে। কয়েক দিন রাতে পাহারা দিয়েছি। কিন্তু কত আর রাত জাগা যায়? তাই পুরো পুষ্ট হওয়ার আগেই জমির সব পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছি।
‘থানাপুলিশ ও গ্রামপুলিশের যৌথ প্রচেষ্টা দরকার’
এ প্রসঙ্গে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার গোস্বামী জানান, পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে কৃষকরা এবার ভালো দাম পাচ্ছেন। আর সে কারণেই কোনো কোনো জায়গায় ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে। এ বিষয়ে আসলে তাদের তেমন কিছু করার নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে তারা শিগগিরই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানায় জানাবেন। থানাপুলিশ ও গ্রামপুলিশের প্রচেষ্টায় এক্ষেত্রে ফল পাওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।