প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫১ পিএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২০ পিএম
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ল্যাব ঘুরে দেখছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। প্রবা ফটো
পাটের উৎপাদন গেল ৮ বছরে ৩৩ লাখ বেল (এক বেল সাড়ে তিন মণ) বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ।
তিনি বলেন, ‘আশির দশকে পাট ছিল দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। ওই সময় পাট রপ্তানি করে ৭৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো। মাঝখানে পাটের উৎপাদন কমে গিয়েছিল। তবে সরকারের পাটবান্ধব নীতির কারণে গত ৮ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৩৩ লাখ বেল।’
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) প্রধান কার্যালয়ে ‘বিজেআরআই এবং জেনোম গবেষণা কেন্দ্রের সাফল্য ও সম্ভাবনা’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।
কৃষিমন্ত্রী জানান, ২০১৫ সালে দেশে পাট উৎপাদন হতো ৫১ লাখ বেল; ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮৪ লাখ বেল। এই হিসাবে গেল ৮ বছরে বেড়েছে ৩৩ লাখ বেল। এই সময়ে প্রায় ৪৩ লাখ বেল পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এসব পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে।
দেশের ৪০ থেকে ৫০ লাখ কৃষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট উৎপাদনে জড়িত উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, কাঁচা পাট ও পাট পণ্য রপ্তানি করে বর্তমানে ৩ থেকে ৪ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, যার মূল্যমান ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। দেশের জিডিপিতে পাট খাতের অবদান ১ দশমিক ৪ ভাগ এবং কৃষি জিডিপিতে পাট খাতের অবদান ২৬ দশমিক ২৬ ভাগ।
বিজেআরআই’র মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বিজেআরআই’র কারিগরি উইংয়ের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মোসলেম উদ্দিন, জেনোম গবেষণার কার্যক্রমের সমন্বয়কারী ড. কাজী মো. মোছাদ্দেক হোসেন প্রমুখ। সেমিনারে অংশ নেওয়ার আগে কৃষিমন্ত্রী বিভিন্ন ল্যাব ঘুরে দেখেন।
কমেছে জমি বাড়ছে উৎপাদন
পাট চাষের জমির পরিমাণ কমলেও উৎপাদন বাড়ছে বলে জানান ড. মো. আবদুল আউয়াল। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে পাট চাষ হতো ৯ লাখ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে তা সাড়ে ৭ লাখ হেক্টরে চাষ হচ্ছে। দেশে বছরে ৬ হাজার টন পাটবীজের চাহিদা থাকলেও আমরা উৎপাদন করতে পারছি মাত্র দেড় হাজার টন। বাকি বীজ ভারত বা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
তিনি বলেন, ‘২০২৩-২৪ এ পাটের জাত উন্নয়ন ও অন্যান্য কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ে ১৭৩টি এবং পাটের বহুমুখী পণ্য ও শিল্প প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ে ৫৪টি গবেষণা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়ে (২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত) বিজেআরআই মোট ১৬টি জাত (দেশী পাট ৬টি, তোষা পাট ৪টি, কেনাফ ৩টি এবং মেস্তা ৩টি), ৭৩টি কৃষি প্রযুক্তি এবং ৩৫টি শিল্প ও কারিগরি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
গবেষক ড. কাজী মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, পাটের জিনোম তথ্য উন্মোচনের পরপরই বিভিন্ন আধুনিক প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করে মাঠে আবাদের জন্য বিজেআরআই তোষাপাট-৮ (রবি-১) নামক উচ্চ ফলনশীল জাত ২০১৯ সালে অবমুক্ত করা হয়েছে। এটি প্রচলিত জাতের চেয়ে শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ বেশি ফলন দিচ্ছে। তা ছাড়া শশী-১ ও শশী-২ নামক দেশী পাটের দুটি অগ্রবর্তী সারি উদ্ভাবিত হয়েছে। শশী-১ লাইনটি ধবধবে সাদা আশ বিশিষ্ট এবং শশী-২ লাইনটি স্বল্প জীবনকাল (৮০-৮৫ দিন) বিশিষ্ট। পাট, ছত্রাক ও ধইঞ্চার জিনোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করার পর প্রাপ্ত তথ্য থেকে প্রায়োগিক গবেষণায় ব্যবহারের জন্য ট্রান্সক্রিপটোম সিকুয়েন্সের কাজও চলমান রয়েছে।
যা বলছেন কৃষক
সেমিনারে অংশ নেওয়া ফরিদপুরের পাট চাষ সমিতির সভাপতি মো. মোক্তার মোল্লা বলেন, তিনি ১২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে ২০০ মণ পাট পেয়েছেন। এ বছর রবি-১ জাতের পাট ৫০ শতক জমিতে চাষ করেছেন। বর্তমান পাটের মণ ৩ হাজার টাকা করে হলেও মূল মৌসুমে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সেখানে ১৫ থেকে ২০ মণ পাট উৎপাদন হয়। ২২০০ টাকা মণে প্রায় ৪৪ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়।
নাটোরের শহিদুল ইসলাম ২০১৭ সাল থেকে মেসতা-২ জাতের পাট চাষ করেন। তিনি বলেন, এ পাটের ফলের পাপড়ি দিয়ে চা, শরবত ও আচার তৈরি করে বিক্রি করা যায়। চাষের জন্য এক বিঘা জমিতে ১৬০০ চারা দরকার হয়। বিঘায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়। আর বিক্রি করা যায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায়।