শামসুল আলম, পাবনা
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৩ এএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:০৯ পিএম
পাবনা শহরে এমনকি বিভিন্ন হাটবাজারের সবজির দোকানেও ছড়িয়ে পড়েছে আসলাম আলীর ক্ষেতের রঙিন ফুলকপি। অচেনা এই সবজি বেশ আগ্রহ নিয়ে কিনছেন ক্রেতারা। প্রবা ফটো
দুই মেয়ের অনুরোধে রঙিন ফুলকপি চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন পাবনা সদর উপজেলার বিল ভাদুরিয়া গ্রামের কৃষক আসলাম আলী। এখন ফুলকপি ক্ষেতের রঙের ছটা যেন কৃষক আসলামের ঘরেও লেগেছে। বেচাকেনার ধুমে পাল্টেছে সংসারের গতি। পাবনা শহর এমনকি জেলার হাটবাজারগুলোর সবজির দোকান ছেয়ে গেছে তার ক্ষেতের রঙিন ফুলকপিতে।
বাজারে সবজির দোকানগুলোতে ক্রেতারা আসার সাথে সাথে রঙের বর্ণচ্ছটায় আকৃষ্ট করছে সাজিয়ে রাখা এই ফুলকপি। প্রথমবার এমন রঙিন ফুলকপি দেখেই কেনার ইচ্ছা পোষণ করছেন অনেক ক্রেতা। কৌতূহল আর শখের বশে ক্রেতারা ফুলকপি কিনে বাড়ি ফিরছেন। স্থানীয় খুচরা বাজারে আসলামের ক্ষেতের রঙিন ফুলকপি প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রঙিন ফুলকপি চাষের শুরু প্রসঙ্গে কৃষক আসলাম আলী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত বছর আমার দুই মেয়ে ইউটিউবে রঙিন ফুলকপির ভিডিও দেখে। এরপর তারা আমার কাছে এসে এই ফুলকপি চাষ করার জন্য অনুরোধ করে। আমিও ভিডিও দেখে মুগ্ধ হই এবং চাষ করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করি। প্রথমে পাবনা সদর উপজেলা কৃষি অফিস গেলে তার এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই বলে জানালে আমি ইউটিউবের ভিডিও প্রচারকের সাথে যোগাযোগ করি। পরে ঢাকায় বীজভান্ডারে যোগাযোগ করে রঙিন ফুলকপি বীজ নিয়ে এসে আবাদ করি।
তিনি আরও বলেন, আমার দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ৬ হাজারের বেশি ফুলকপির চারা রোপণ করেছিলাম। সবগুলোই ভালোভাবে বড় হওয়ায় এখন প্রতিদিন কপি কেটে বাজারের বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রি করি। পাইকারি ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও খুচরায় ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। রঙিন কপি চাষ নিয়ে প্রথমে এলাকাবাসী নানা সমালোচনা করলেও, বাম্পার ফলন আর ভালো দাম পাওয়ায় এখন অনেকেই এই কপি আবাদে আগ্রহী হয়েছেন।
আসলাম আলীর বাবা ওমর আলী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রথমদিকে আমার চিন্তা হয়েছিল যে এগুলো সঠিকভাবে হবে কি না। কিন্তু সকল চারাতেই সফলভাবে ফুল এসেছে, কপিগুলোও বেশ বড় হয়েছে। এ রঙিন ফুলকপি আবাদের খরচ অন্যান্য কপির মতোই, আলাদা কিছুই নেই। অনেকেই ফুলকপি দেখতে ও ছবি তুলতে ক্ষেতে আসছেন।
একই এলাকার কৃষক জামাল শেখ বলেন, আসলামের এই নতুন জাতের কপি চাষ দেখে অনেকেই ব্যঙ্গ করলেও এখন তার সফলতায় অনেকেই এখন রঙিন কপি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমিও চিন্তা করছি আগামী বছর ৩-৪ বিঘায় এ জাতের কপির আবাদ করব।
শহরের সবজি বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সাদা কপি যেখানে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি, সেখানে রঙিন ফুলকপি বিক্রি করছি ৮০-১০০ টাকায়। স্বাদও ভালো হওয়ায় প্রতিদিন ৫০-৬০ পিস পর্যন্ত এ ফুলকপি বিক্রি করছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাবনার উপপরিচালক ড. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘পাবনাতে সাধারণ সাদা কপিই চাষ হয়, এবারই প্রথম এই রঙিন কপি চাষ করা হয়েছে। এগুলো জাপানি জাতের। আমাদের দেশে মাত্র দুই বছর আগে থেকে এর আবাদ শুরু। রঙিন কপি আবাদে আগ্রহী কৃষকদের আগামীতে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’