× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তিস্তা সেচ ক্যানেলের পাড় ভেঙে প্লাবন

‘ক্যানেলের বান্ধ ভাঙিয়া সউগ শ্যাষ হয়া গেইল’

রংপুর অফিস

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:১২ পিএম

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৯ পিএম

রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের জানপুর এলাকায় ক্যানেলের পাড়ের ৩৫ ফুট ভেঙে ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। প্রবা ফটো

রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের জানপুর এলাকায় ক্যানেলের পাড়ের ৩৫ ফুট ভেঙে ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। প্রবা ফটো

‘ভোর সাড়ে চাইরটা বাজে। মুই ল্যাটিন (শোচাগার) থ্যাকি মাইসের (মানুষ) চিকরা-চিকরি (চিৎকার) শুনতেছিন। দৌড় দিয়া জমির দিকে যাইতে দেকি পানিতে পানি। পানির স্রোতের ভিতরোত মোর আলুক্ষেত, তামাকক্ষেত সউগ (সব) ডুবি ছিল। মাইসের (মানুষ) বাঁশঝাড়, জমি-জমা সউগ নষ্ট হয়া গেইচে। বেলা ফর্সা (দিনের আলো) হইলে দেকি জমির আবাদ আর নাই। সউগ বালুর তলাত (নিচে) ঢুকি গেইচে। ৭৫ শতক জমিত আলু আর তামাক লাগইছিনু (চাষ করেছিলাম)। এক লাখের মতো টাকা খরচ হইছিল। ক্যানেলের বান্ধ (বাঁধ) ভাঙিয়া মোর সউগ শ্যাষ হয়া গেইল। এ্যালা (এখন) কেমন করি চলিম কিছুই বুঝবার পারতেছো (পারছি) না।’

কৃষক আজহার আলী তার ক্ষয়ক্ষতির কথা এভাবেই জানাচ্ছিলেন। তিনি তিস্তা সেচ প্রকল্পের রংপুর ক্যানেলের পশ্চিম অংশে পাড়ের চাষি। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের জানপুর এলাকায় ক্যানেলের পাড়ের ৩৫ ফুট ভেঙে ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।

কৃষক আমজাদ আলী এক একর জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন। পরিপক্ক তামাক পাতায় ভরপুর ছিল ক্ষেত। তারও জমিতে এখন বালুর স্তুপ। আমজাদ আলী বলেন, ‘তামাকোত বেশি লাভ। সেই জন্তে (সেজন্য) কোম্পানির কাছোত (কাছ থেকে) আগাম টাকা নিয়ে তামাক লাগাইছিনু। জমিত আর তামাকগাছ নাই। সউগ পানিত ভাঙি চলি গেইচে। জমিত বালু পড়ি গেইচে। এ্যালা নতুন করি যে আবাদ করমো সেই অবস্থাও নাই। ক্ষতিপূরণ না পাইলে কেমন করি চলমো সেই চিন্তাই করতেছি হামরা।’

স্থানীয়রা জানায়, উত্তর মমিনপুর জানপুর মৌজায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের রংপুর ক্যানেলের পশ্চিম অংশের পাড় এক যুগে সাতবার ভেঙেছে। ওই এলাকায় সেচ ক্যানেলটি ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যাওয়ায় পানির বেশি চাপ সৃষ্টি হয় এবং সেচ ক্যানেলের সংস্কারকাজ চলাকালে হঠাৎ করে বেশি পানি ছাড়া হলে পানির চাপে সেই অংশ ভেঙে যায়। এতে প্রায় ২০০ একরের ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে তলিয়ে যায় কৃষকের আলু, তামাক, ধান, ভুট্টাসহ শাকসবজির ক্ষেত।

কৃষকরা জানান, তাদের দুই কোটি টাকারও বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পানির স্রোতের কারণে জানপুর গ্রামে ত্রাণের টাকায় খারুভাঁজ নদীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া একটি খালের ওপর নির্মিত ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে বেশ কিছু বাঁশঝাড়, গাছপালা ভেঙে গেছে। এ ছাড়া সেচ ক্যানেলের পানির সঙ্গে বালু জমে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জমিগুলো। বিগত সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণ না পেলেও এবার তারা অনঢ় অবস্থানে রয়েছেন। ক্ষতিপূরণ না পেলে তারা পাড় মেরামত করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এজন্য তারা সেচ ক্যানেলের পাশে বসে পাহারা দিচ্ছেন।  

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি– ইঁদুরের গর্তের ভেতর দিয়ে পানি বের হতে হতে বড় আকার ধারণ করে পাড়টি ভেঙে গেছে। 

কৃষক সোহেল রানা বলেন, ‘মোর তামাকক্ষেত নষ্ট হয়া গেইছে। এইবার ক্ষতিপূরণ না পাইলে কাম করবার দিমো না। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানুষেরা ঠিকমতো ক্যানেলের কাম করিল হয়, তাইলে হামার এত বড় ক্ষতি হইল না হয়।’ 

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ক্যানেলের পাড়টি পুরোনো হওয়ায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট ভেঙে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইঁদুরের গর্ত থেকে ভাঙনের সূত্রপাত হয়েছে। এতে কিছু জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্যানেলের বাঁধ সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণ করছি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা