× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বৈশ্বিক প্রতিবেদন

তিন দশকে কৃষিতে ক্ষতি ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:২০ এএম

তিন দশকে কৃষিতে ক্ষতি ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কৃষি খাতে। এ বছর মিধিলি ও মিগজাউম নামে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের কবলে বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত ৯ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা, ২১ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় হামুন বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানলেও অনেকখানি প্রভাব পড়ে কৃষিতে। তা ছাড়া অতি বৃষ্টি, বন্যা, খরা, অতি কুয়াশা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্যান্য ফসলের মধ্যে কৃষিতেই ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। 

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সামষ্টিক ক্ষতি নিয়ে তেমন কোনো গবেষণার কথা জানা যায় না। তবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) কিছুদিন আগে ৩০ বছরের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ‘দ্য ইম্পেক্ট অব ডিজাস্টার এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বিশ্বের সামষ্টিক ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত তিন দশকে বিশ্বে প্রায় ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ফসল এবং পশুসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। যা বছরপ্রতি হিসাবে ১২৩ বিলিয়ন ডলার বা বার্ষিক বৈশ্বিক কৃষি জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। এই ৩০ বছরে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা ২০২২ সালে ব্রাজিলের জিডিপির সমপরিমাণের। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্যোগের কারণে নিম্ন আয়ের দেশের কৃষি জিডিপির ১০ শতাংশ ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ১৫ শতাংশের মতো ক্ষতি হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ কৃষি জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি এবং সশস্ত্র সংঘাত সবই কৃষি উৎপাদন, মূল্য-শৃঙ্খল এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০২০-২১ সালে হর্ন অব আফ্রিকাতে মরু পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকটি দেশে দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং স্থিতিস্থাপকতায় বিনিয়োগ হয়েছে। ২০২৩ সাল বিশ্বের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার উষ্ণায়নের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। তা ছাড়া চরম বন্যা, ঝড়, খরা, দাবানল এবং কীটপতঙ্গ ও নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। 

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ক্ষতি সম্পর্কে বলা হয়, বাংলাদেশে আগাম পদক্ষেপের কারণে দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষা করা কিছুটা সম্ভব হচ্ছে। কৃষি খাতে বেনিফিট কস্ট রেশিও (বিসিআর) ছিল বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে অন্যান্য প্রত্যাশিত ক্ষতির তুলনায় যথেষ্ট কম। আগাম হস্তক্ষেপ ছাড়াও বিদ্যমান ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বিশেষ করে বাংলাদেশে বন্যার আগে জলরোধী ড্রাম বিতরণ করা যেতে পারে। 

এদিকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) স্টেট অব দ্য ক্লাইমেট ইন এশিয়া ২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ায় চরম আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দ্রুত বাড়ছে। খরা এবং বন্যা ছড়িয়ে পড়ছে। এতে জীবন এবং জীবিকা ধ্বংস হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে এশিয়ায় ৮১টি আবহাওয়া, জলবায়ু এবং পানি-সম্পর্কিত বিপর্যয় ঘটেছে। এসবের মধ্যে ৮৩ শতাংশের বেশি বন্যা এবং ঝড়ের ঘটনা ছিল। এর ফলে ৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তা ছাড়া ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের কৃষি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষতিপূরণে পিছিয়ে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন জানতে চাইলে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের ব্যব্যস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন খান বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আগে কোন অঞ্চলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে তার একটি পূর্ব তালিকা তৈরি করতে হবে। বোরোতে দুর্যোগের কারণে ২০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়। তা ছাড়া আমন-আউশেরও ক্ষতি হয়। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বোরো ফসল কম হচ্ছে। আমাদেরকে অঞ্চলভিত্তিক ঝুঁকির তালিকা তৈরি করতে হবে। ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে প্রকল্প নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুটি দিক থাকবে- প্রথমত, কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। দ্বিতীয়ত, উৎপাদনশীলতায় সর্বোচ্চ ব্যয় কমাতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকি খাদ্য নিয়ে। অথচ এ খাতে সরকারি বরাদ্দ কম। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক যে অবস্থান সেখানে ২৫ শতাংশ খাদ্য আমদানি করতে হলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। প্রতি বছর ৩৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমরা উৎপাদন করি। তার মধ্যে ২০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ কী ধরনের সমস্যায় পড়বে তার কোনো গবেষণা আমাদের কাছে নেই। এজন্য বন্যা, খরাসহ অন্যান্য দুর্যোগে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তার একটি সঠিক পরিসংখ্যান করা দরকার। 

দ্বিতীয়ত, উৎপাদনশীলতায় সর্বোচ্চ ব্যয় কমাতে হবে। সে ক্ষেত্রে কম সার, কম পানি দিয়ে কীভাবে বেশি উৎপাদন করা যায় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। মাটির উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয় সে ধরনের কীটনাশক ব্যবহার বাদ দিতে হবে। প্লাস্টিকের কারণে মাটি নষ্ট হচ্ছে সেদিকেও খেয়াল করতে হবে। উৎপাদকের কাছে সাপ্লাই চেইন দেওয়া যাবে না। সরকার নিজ উদ্যোগে ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবে। আর বীজের প্রতি কৃষকের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে। কেননা বীজ করপোরেটদের হাতে চলে গেলে একসময় কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়লেও কৃষকের কোনো লাভ থাকবে না। প্রয়োজনে সমিতি করে খাস জমিতে বীজ উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কৃষি মূলত জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। ভালো আবহাওয়া থাকলে উৎপাদন বেশি হয়। খারাপ আবহাওয়ায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাল থেকে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায় প্রতিবছর ১০-২০ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়। ২০২০ সালে ৪০ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছে। তা ছাড়া গমসহ প্রায় এক কোটি টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের যে ক্ষতি তার সবচেয়ে বেশি আঘাত পড়ে কৃষকের ওপর। অনেক সময় ক্ষতির পরিমাণ ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে সব কৃষককে সার্বিকভাবে সহায়তা করা দরকার। সার, বীজের সঙ্গে নগদ সহায়তাও দিতে হবে। কৃষিবীমা চালু করতে হবে। কৃষিবীমা সব সময় লাভজনক নাও হতে পারে। যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকবে না তখন লাভজনক হবে। ক্ষতি হলে তা পুষিয়ে নিতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা