× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হুদহুদ বা সোলেমান পাখি

আ ন ম আমিনুর রহমান

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২১ এএম

সুন্দরবনের কটকায় পালক পরিচর্যায় ব্যস্ত হুদহুদ বা মোহনচূড়া। ছবি : নুসরাত জাহান

সুন্দরবনের কটকায় পালক পরিচর্যায় ব্যস্ত হুদহুদ বা মোহনচূড়া। ছবি : নুসরাত জাহান

প্রায় ১১ বছর আগের ঘটনা। ৫০ জনের টিমে ‘ভ্রমণ বাংলাদেশ’ নামক ট্যুর গ্রুপের সঙ্গে সুন্দরবন ভ্রমণে এসেছি। ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন সকালে কটকা বিট অফিসের কাছে নোঙর করা ‘রিয়া মনি’ লঞ্চ থেকে ট্রলারে করে কটকা টাওয়ারের কাছে গেলাম সুন্দরবনের ভয়ংকর সমুদ্রসৈকত জামতলীতে যাওয়ার জন্য। কটকা টাওয়ার এলাকাটি বাঘের শোবার ঘর বা বেডরুম নামে পরিচিত। কথাটি শুনতেই প্রথমবার সুন্দরবন ভ্রমণে আসা অনেকেই ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল। তাই সবাই গাইডের কথামতো চোখকান খোলা রেখে সাবধানে হাঁটা শুরু করল। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জামতলী সৈকতে যেতে হবে। ভাবতেই গা ছমছম করে ওঠে যে এই সৈকতে বাঘও ঘোরাফেরা করে। পৃথিবীর কোথায় এমন সৈকত আছে কি? সম্ভবত নেই। 

কটকা পন্টুন থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের মতো এগিয়েছি, আর অমনি ঘাসবনে মায়াবী চিতালশাবকের দেখা পেলাম। ভালোভাবে পেছনে তাকাতেই দেখা মেলল ওদের পুরো দলের। ওদের ছবি তুলতে তুলতেই পাশের বরইগাছে পাখিটির দেখা পেলাম। বলে রাখা ভালো, কটকা-জামতলী এলাকায় প্রচুর জাম ও বরইগাছ রয়েছে। কীভাবে বাঁদাবনে এসব গাছ এলো জানি না। তবে বর্ষায় এখানকার সুমিষ্ট খুদি জাম যেমন খেয়েছি তেমনি শীতে খেয়েছি টক-মিষ্টি বরই। তো যা বলছিলাম, বরইগাছে পাখিটিকে দেখে ধীরে ধীরে ওর দিকে এগোতেই সে টের পেয়ে গেল। সতর্কভাবে মাথায় সুদৃশ্য খোঁপাটি ফোলাল ও ঢেউয়ের মতো করে দর্শনীয়ভাবে উড়ে গিয়ে খোলা মাঠে বসল। আমিও পথ চলতে চলতে ওর ছবি তোলার চেষ্টায় থাকলাম। তবে বাঘের রাজ্য বলে কথা। চোখকান খোলা রেখে সাবধানে ছবি তুলতে হচ্ছে। এরপর থেকে যতবার শীতে জামতলী সৈকতে গিয়েছি ততবারই এই অনিন্দ্যসুন্দর খোঁপাধারী পাখিটিকে দেখেছি। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে পাখিটিকে দেখলাম সেই জামতলী সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথেই। 

সুন্দরবনের কটকায় দেখা সুদর্শন এই খোঁপাধারী পাখিটি হলোÑ এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান আাবাসিক পাখি হুদহুদ বা সোলেমান পাখি। অবশ্য অনেকের কাছে এটি ওদুদ পাখি, কূপ পাখি বা পাঙ্খা পাখি নামেও পরিচিত। আর এর কেতাবি নাম হলোÑ মোহনচূড়া। ইংরেজি নাম Common Hoopoe বা Eurasian Hoopoe। উপপিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Upopa epops। পৃথিবীতে এই প্রজাতিটির যে সাতটি উপপ্রজাতি রয়েছে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে তার মধ্যে একমাত্র Upopa epops ceylonensis-ই দেখা যায়। 

হুদহুদ বাংলাদেশের সুন্দর পাখিগুলোর একটি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের দৈর্ঘ্য ২৬-৩২ সেন্টিমিটার (সেমি), প্রসারিত ডানা ৪২-৪৬ সেমি ও ওজন ৪৭-৮৯ গ্রাম। পাখিটির দেহে সাদা-কালো-খয়েরি-হালকা হলুদ ও কমলা রঙের চমৎকার সমন্বয় দেখা যায়। মাথা-ঘাড়, পিঠের ওপরের অংশ, বুক-পেট ও লেজের নিচের অংশে হালকা হলুদ, কমলা ও খয়েরি রঙের মিশেল। পিঠের ওপর থেকে ডানা হয়ে নিচের দিকে ‘ভি’ আকারের একটি নকশা কালো-সাদা-কালো-সাদা করে করে নিচে নেমে গেছে, যা পাখিটির দেহের সৌন্দর্য বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে। লেজেও রয়েছে সাদা-কালোর সমন্বয়। তবে ডানা ও লেজের পালকের শেষাংশ পুরোপুরি কালো। ডানা দেখতে অনেকটা জেব্রার মতো। মাথার চূড়ার প্রতিটি পালকের আগা কালো। ফলে মাথার ফুলটা মেলে ধরলে তা জাপানি পাখা মেলে ধরার মতোই লাগে। বন্ধ অবস্থায় চূড়াটি ইষৎ পেছনের দিকে হেলে থাকে। অন্যদিকে সরু ও লম্বা চঞ্চুটি ইষৎ নিচের দিকে বাঁকানো থাকে। চঞ্চু, পা ও আঙুল ধূসর-বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। ওরা সব সময় পালকের যত্ন নেয় ও চকচকে রাখে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখিগুলোকে বেশ চকচকে দেখায়। অন্যদিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পালকের রঙ কিছুটা ফ্যাকাশে। 

হুদহুদ এ দেশের প্রায় সবখানেই দেখা যায়। তবে ওরা কখনও গভীর বন পছন্দ করে না। খানিকটা খোলা মাঠ, বাগান, কৃষিজমি, হালকা ঝোপজঙ্গল এদের পছন্দ। ওদের একাকী বা জোড়ায় মাঠে চরতে দেখা যায়। হেঁটে হেঁটে খাবার সংগ্রহ করে। সরু ও লম্বা চঞ্চুজোড়া মাটির ভেতর ঢুকিয়ে কীটপতঙ্গ ও তাদের শূককীট টেনে বের করে আনে। এ ছাড়াও কেঁচো, পিঁপড়া, পিঁপড়ার ডিম, উইপোকা, উইপোকার ডিম, শামুকের ডিম, ব্যাঙ ইত্যাদিও খায়। খাবার খোঁজার সময় চূড়াটি বন্ধ রাখে। তবে উড়ে গিয়ে কোথাও বসলে, ভয় পেলে বা উত্তেজিত হলে চূড়াটি মেলে ধরে। সচরাচর ‘হুদ-হুদ…’ শব্দে ডাকলেও প্রজননকালে ‘উপ-উপ-উপ…’ শব্দে ডাকে।

মার্চ থেকে জুন প্রজননকাল। বাসা বানায় গাছের খোঁড়ল বা দালানের ফোকরে। বাসা দেখতে মোটেও সুন্দর নয়। পাতা, ঘাস, উল, পালক বা ময়লা দিয়ে বাসার আস্তর বা লাইনিং তৈরি করে। স্ত্রী মোহনচূড়া ৫-৬টি সাদা (বা হালকা নীল) রঙের ডিম পাড়ে। ডিমে শুধু স্ত্রীই তা দেয়। ধনেশ পাখির মতো ডিমে তা দানরত স্ত্রী পাখির খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা পুরুষ পাখিটিই করে থাকে। ডিম ফোটে ১৮-২২ দিনে। ডিম থেকে ছানা ফোটার পর স্ত্রী ৯-১৪ দিন বুকের উম দেয়। ছানারা ২৬-২৯ দিনে বড় হয়ে যায় ও উড়তে শিখে। আয়ুষ্কাল প্রায় ছয় বছর।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা