শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩ ১২:২৮ পিএম
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৩ ১২:২৯ পিএম
শেরপুরে গারো পাহাড়ে শতাধিক গাছে ধরেছে বিদেশি ফল কোকোয়া। প্রবা ফটো
শেরপুরের গারো পাহাড়ে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে বিদেশি ফল কোকোয়া। এটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপত্যকার উদ্ভিদ। এর বীজ থেকে চকলেট ও কফির কাঁচামাল তৈরি হয়। বাজারজাত করতে পারলে কমবে আমদানিনির্ভরতা এবং বাড়বে কর্মসংস্থান- এমনটাই আশা করছেন স্থানীয়রা। কোকোয়া চাষ ও চারা উৎপাদনে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
কোকো বা কোকোয়া মধ্য আমেরিকার আরও কয়েকটি দেশে চাষ হচ্ছে। আফ্রিকার আইভরি কোস্ট, ঘানা, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনেও এর চাষ হচ্ছে। গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ফোটে গাছের কাণ্ডে ও ডালে। ফুলগুলো আকারে ছোট, হালকা গোলাপি ও সাদা রঙের। পাকা ফলের ভেতরে পেঁপের মতো ফাঁকা আর কয়েকটি সারিতে ছোট ছোট বীজ থাকে। একটি গাছে শতাধিক ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩০টির মতো বীজ থাকে, যা খেতে অত্যন্ত মিষ্টি।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী বন্দবাটপাড় এলাকার জালাল উদ্দীন। দীর্ঘ ১০ বছর মালয়েশিয়ায় চাকরি করে দেশে ফিরে কোকোয়ার বাগান করেন।
তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রবাস জীবন শেষে ১৯৯৮ সালে দেশে ফেরার সময় মালয়েশিয়া থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন কোকোয়া বীজ। ওই বীজ থেকে চারা করে বাগান শুরু করেন তিনি। বর্তমানে এই বাগানে ফল এসেছে। মালয়েশিয়ায় এই বীজ দিয়ে চকলেট, কফি, কেক, বিস্কুট, আইসক্রিম বানানো হয়। এমন একটি কারখানায় কাজ করেছিলেন বলে জানান তিনি। বর্তমানে তার বাগানে এক হাজারটির বেশি চারা গাছ আছে।
কোকোয়া বীজের প্রসেসিং সম্পর্কে জালাল উদ্দীন বলেন, পাকলে ফলের রঙ হয় লাল আবার কোনোটা গাঢ় হলুদ। পাকা ফলের ভেতরের বীজ বের করে শুকিয়ে ফারমেনটেশন বা গাঁজাতে হয়। তার পর এটিকে গুঁড়া করতে হয়। এর গুঁড়া থেকেই চকলেট তৈরি হয়। বছরে দুই থেকে তিনবার ফল সংগ্রহ করতে হয়। কোকোয়া গাছ শীতল ও গরম হাওয়া কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। তাই হালকা রোদ পড়ে এমন ছায়াযুক্ত জায়গায় ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ ও সরকারিভাবে এ বীজের বাজারজাত করতে পারলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাত হবে এটি।
এ উদ্যোক্তার মেয়ে আঁখি আক্তার বলেন, প্রচুর ফল আসছে গাছে। এগুলো খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন দেখতে এবং বাগান তৈরির জন্য চারার খোঁজে। কফি ও চকলেটের কাঁচামাল বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়। এ ফল চাষ সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং কৃষি বিভাগের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করতে পারলে আমদানিনির্ভরতা কমে যাবে। সমৃদ্ধ হবে দেশের কৃষি খাত। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।
অনেকেই আগ্রহী এ ফলের বাগান করতে। স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা আতিকুর রহমান বলেন, আমি প্রাথমিকভাবে ৫০টি চারা রোপণ করব। এটি যেহেতু ছায়াযুক্ত জায়গায়ও হয়, তাই বাড়ির পেছনে পতিত জমিতে বাগানটি করতে চাচ্ছি। এর ফল খুব মিষ্টি।
বাগানে আসা আরেক কৃষক শামসউদ্দিন বলেন, ‘আমি আরেক দিন এসে ফলটি খেয়ে গেছি। এটি অত্যন্ত মিষ্টি এবং কাঁঠালের চেয়েও মিষ্টি। আমার বাচ্চাদের জন্য আজ কিছু ফল কিনতে এসেছি। আমি এই ফলের বাগান করব।’
পুষ্টিবিদ তাসলিমা আক্তার উর্মি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এর বীজে আছে থিওব্রোমাইন, ক্যাফেন ও রঙিন বস্তু। সাবির্কভাবে বীজ উত্তেজক ও মূত্র রোগে বেশ উপকারী। থিওব্রোমাইন স্নায়োবিক রোগের টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হৃদরোগজনিত এনজাইমা পেক্টোরিসের ব্যথা উপশম করতে পারে চকলেটের ক্বাথ। এ ছাড়াও চকলেটের ফ্ল্যাভানলসমৃদ্ধ কোকোয়া মিল্ক ক্লান্তি দূর করতে, ইনসোমনিয়া প্রতিরোধে কাজ করে। এমনকি শরীরের চামড়া টানটান রাখে, যা বাধর্ক্য দূর করতেও কাজ করে।
ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর আহ্বায়ক জাহিদুল হক মনির বলেন, জালাল উদ্দীনের এই বাগান সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের পাহাড়ি এ অঞ্চলে অনেকেই কোকোয়া ফল চাষে আগ্রহী হবেন। আশা করি, এতে এই জনপদের মানুষের আর্থিকভাবে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কোকোয়া বিদেশি ফল হলেও গত এক-দেড় দশক ধরে আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে। এটি ছায়াযুক্ত জায়গায়ও হয়। কোকোয়ার বাগানে মিশ্র ফসল হিসেবে আদা ও হলুদের ভালো ফলন হয়। এই ফল চাষ ও চারা উৎপাদনে জামাল উদ্দীনকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।