হবিগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩ ১৪:০৭ পিএম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৩ ১৫:৪৬ পিএম
হবিগঞ্জের হাওরসহ সব অঞ্চলে ধান কাটার মৌসুম চলছে। প্রবা ফটো
হবিগঞ্জের হাওরসহ সব অঞ্চলে চলছে ধান কাটার মৌসুম। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক। এ কারণে দুই দফা ঋণের ফাঁদে পড়তে হচ্ছে তাদের। চলতি বোরো মৌসুমে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। চলতি মৌসুমে হবিগঞ্জে ১ লাখ ২২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
হাওরের কৃষকের ভরসার জায়গা বোরো ধান। এ ফসল তাদের সারা বছরের খোরাক জোগায়। এ বছর ধানের দাম সন্তোষজনক না হওয়ায় তারা হতাশ। সরকারি দামে ধান কিনলে উপকৃত হবেন কৃষক।
লাখাই উপজেলার কৃষক সুজন কুমার শীল জানান, যে পরিমাণ ধান পাওয়া যায় খরচ বাদ দিলে তাতে লাভ থাকে না। সারা বছর শ্রম দিয়েও যদি লাভের দেখা না পাওয়া যায়, তাহলে সংসার চালানো কষ্টকর। সরকার ন্যায্যমূল্য দিয়ে কৃষকের থেকে সরাসরি ধান কিনলে সুবিধা হতো।
চুনারুঘাটের কৃষক সজল মিয়া বলেন, ১ ক্ষের (৪২ শতক) জমিতে পানি সেচ, বীজ, হালচাষ, কীটনাশক, শ্রমিকসহ খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সে জমিতে এবার সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২০ মণ ধানের ফলন হয়েছে। সে হিসেবে ১ ক্ষের জমিতে ১৩ হাজার টাকার ধান বিক্রি করা যাবে।
তিনি বলেন, ঋণ করে বোরো চাষ করেছি। ন্যায্যমূল্য না থাকায় ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ধান বিক্রি করে লোকজনের পাওনা পরিশোধ করতে না পারলে আবারও ঋণের ফাঁদে পড়তে হবে।
চুনারুঘাটের আরেক কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, অন্যের জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। শ্রমিক হিসেবে সঙ্গে ছিল আমার তিন সন্তান। এর পরও খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। বর্গা জমিতে ধান হয়েছে ১৮ মণ। এর মধ্যে জমির মালিককে দিতে হবে ৬ মণ। বাকি ১২ মণ বড়জোর সাড়ে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব। এ বছর চুনারুঘাটে মণপ্রতি ৬৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, জেলায় এবার ১ লাখ ২২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ছাড়া সব জাতের ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে হাওরে অর্ধেকের বেশি ধান কাটার কাজ শেষ হয়েছে। এবার পরীক্ষামূলকভাবে কিছু এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু-১০০’ জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এতে ভালো ফলন এসেছে। আগামীতে ব্রি-২৮ ধানের পরিবর্তে ব্রি-২৯ ও বঙ্গবন্ধু-১০০ ধান চাষে কৃষককে উৎসাহিত করা হবে।
তিনি জানান, ব্রি-২৮ ধানের পাঁচ-ছয় দিন আগে ব্রি-২৯ ও বঙ্গবন্ধু ১০০ ধান পেকে যায়। ফলনও ভালো। রোগবালাই কম হওয়ায় এ দুই জাতের ধান চাষের জন্য কৃষককে বলা হচ্ছে।
সিলেট বিভাগ অটোরাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শংকর পাল জানান, অনেক কৃষকই ধান না শুকিয়ে বিক্রি করে দেয়। সে কারণে তারা দাম কিছুটা কম পাচ্ছে। শুকিয়ে বিক্রি করলে ভালো দাম পেত।
হবিগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা চাই থোয়াই প্রু মার্মা জানান, সরকার ১ হাজার ২ টাকা মণ দরে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বরাদ্দ না আসায় ধান কিনতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।