হবিগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:১৫ পিএম
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৪৯ পিএম
হবিগঞ্জে ধানের ভেতরে চাল না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কৃষকরা। প্রবা ফটো
হবিগঞ্জে হাওর এলাকায় বোরো জমিতে খরার ক্ষতিকর প্রভাব ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ার হতাশা কাটতে না কাটতে এবার ধানের ভেতরে চাল না হওয়ার দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কৃষক। ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান আবাদ করা জমির প্রায় ৪০ শতাংশ ধানের ভেতরে চাল না হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক। এ চিত্র দেখা গেছে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার কয়েকটি হাওর ঘুরে।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৫ দশমিক ২ টন হিসেবে এবার ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯০ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে কৃষি বিভাগ।
তবে ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান আবাদ করা প্রান্তিক কৃষক জানান, গতবারের তুলনায় এবার বোরোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে। ফলে জমির বর্গা, সার, কীটনাশক ও অন্যান্য খরচ বাদে মুনাফার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর হাওরে নিজের জমিতে কাজ করছিলেন কৃষক ওয়ারিশ মিয়া। তার চেহারায় ছিল হতাশার ছাপ। ফলন কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করলে জানান, গেল চৈত্রে টানা কয়েক দিন তীব্র খরা ও গরম হাওয়া বয়ে গেছে। সে সময় ধানগাছগুলো পোয়াতি ছিল। তখন তেমন কোনো সমস্যা বোঝা না গেলেও ধান বের হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে এগুলো পুষ্ট হয়নি, প্রায় ৪০ শতাংশ ধানের ভেতরেই চাল নেই।
ওয়ারিশ মিয়ার আবাদ করা ৪০ বিঘা জমির অর্ধেকই ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান। গত বছর একই পরিমাণ জমি থেকে ৮০০ মণের বেশি ধান উৎপাদন হলেও এবার তা অর্ধেকে নেমে আসবে বলে জানালেন তিনি।
আজমিরীগঞ্জের পিরিজপুর, হিলালপুর, গুচ্ছগ্রাম ও নোয়াগাঁও, জলশুকা হাওরে আরও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারাও একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্ণপাড়া চান্দের মহল্লার কৃষক তৌফিক মিয়া জানান, এবার বোরো আবাদের শুরুতেই খরা ও ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানে চিটা রোগ দেখা দেয়। সারের দাম বেড়ে যাওয়ার পর এখন ধান কেটে দেখা যাচ্ছে অর্ধেকেই চাল নেই।
তিনি আরও জানান, এই একই সমস্যার মুখোমুখি জেলার অধিকাংশ কৃষক। ফলে এবার তাদের লোকসান গুনতে হবে।
লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের কৃষক বিষু রায় বলেন, ‘আমাদের ভাটি এলাকার জমিগুলোয় সব সময় আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে। যে কারণে ব্রি-২৮ জাতীয় ধান আমরা রোপণ করি। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’
তিনি আরও জানান, এ ধান ফলনে যেমন ভালো, তেমনি বৈশাখের শুরুতে কাটাও যায়। মূলত এজন্যই এ ধানে কৃষকের আগ্রহ বেশি।
বোরো ধান বোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক দফায় পোকামাকড়ের আক্রমণ, তিন দফায় কীটনাশক প্রয়োগ, খরা, গরম হাওয়া এবং সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। একসঙ্গে এতগুলো সমস্যা তারা আগে কখনও মোকাবিলা করেননি।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানে এবার ব্লাস্ট রোগসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আমরা জানার পরপরই নাগুড়া ফার্মের ধান গবেষকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাওর অঞ্চল পরিদর্শন করি।’
মূলত জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলেই ব্রি-২৮ জাতের ধানে এমনটা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরম ও রাতের বেলায় ঠান্ডা থাকার কারণে ব্রি-২৮ জাতের ধান এখন চাষের অনুপযোগী। এজন্য এ ধান চাষে কৃষককে নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের আগাম জাতের অন্য নানা রকম ধান চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাই নতুন গবেষণায় ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৬, ব্রি-৯৬ আবাদ করলে এমন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’
তবে জেলায় এবার কী পরিমাণ জমিতে ব্রি-২৮ ও ২৯ চাষ হয়েছে, তা তিনি বলতে পারেননি।