চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ১২:১৭ পিএম
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুরে শিলাবৃষ্টিতে জমিতে নুয়ে পড়ে আধাপাকা ধান। প্রবা ফটো
চাঁপাইনবাবগঞ্জে দীর্ঘদিন পর গত বুধবার বিকালে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে স্বস্তি এনে দিলেও জেলায় কয়েক জায়গায় শিলাবৃষ্টি হওয়ায় কপাল পুড়েছে কয়েক হাজার কৃষকের।
শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান, শাকসবজিসহ কয়েকটি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। চলতি মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে কৃষকদের বোরো ধান কেটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শিলাবৃষ্টিতে জেলায় ৪ হাজার ৮৩০ কৃষকের ১ হাজার ৭২৮ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ১৯০ কৃষকের ৪৬৩ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলার ৪২০ কৃষকের ২১৫ হেক্টর ও নাচোলে ১ হাজার ২২০ কৃষকের ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আম ৩৯৬ হেক্টর, শাকসবজি ১৭৫ হেক্টর, বোরো ধান ১ হাজার ১৪৫ হেক্টর, পাট ৬ হেক্টর এবং ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে ৬ হেক্টর জমির।
সদর উপজেলার নারায়ণপুর, ইসলামপুর, শাহজাহানপুর ও সুন্দরপুর, শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা এবং নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে বেশি। এসব এলাকার ৪ হাজার ৮৩০ জন কৃষকের ১ হাজার ৭২৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সদর উপজেলার আম চাষি জাকির হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় বোঁটা শুকিয়ে গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে পড়ছিল। বৃষ্টি হওয়ায় আমের জন্য আশীর্বাদ। তবে যে পরিমাণে বৃষ্টির দরকার ছিল, সে পরিমাণে হয়নি। কিছু এলাকাতে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
সদর উপজেলার নারায়ণপুর এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাদ্দাম হোসেনের ধানক্ষেত। তিনি বলেন, ‘জিরা ধান পেকে গিয়েছিল, কাটার অপেক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যেই শিলাবৃষ্টি হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ধান দিয়েই বছরের খোরাকি হতো। এবার বেশি দাম দিয়ে চাল কিনে খেতে হবে।’
চলতি মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে কৃষকদের বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে বলা হয়েছিল জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার বলেন, ‘জেলায় গত বুধবার বিকালে গড়ে ৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা আমের জন্য খুবই উপকারী। তবে সদর, শিবগঞ্জ ও নাচোল উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দিতে পারে।’
এ ছাড়া বাগেরহাটের মোংলায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোংলা প্রতিবেদক। এতে গরম কমলেও আমের মুকুলসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শহরতলীর নিম্নাঞ্চল এলাকায় দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জাতীয় গ্রিড থেকে মোংলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মল্লিক সেলিম আহম্মেদ বলেন, ‘মৌসুমের প্রথম ঝড়-বৃষ্টিতে সার্বিকভাবে এলাকার কৃষির উপকার হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।’