সম্ভাবনাময় ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তি, ৫ শতাধিক বিঘায় সবুজের হাতছানি

সাতক্ষীরার দেবহাটায় কৃষিতে ব্যাপক সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে সরকারের ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তি। খুলনা অঞ্চলে কৃষিতে ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলার ২৮টি উপজেলায় এই প্রকল্পের কাজ চলছে। কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা টেকসই রাখতে জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল ফসলের জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণ করার লক্ষে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

তাছাড়া ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তি বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে এটি খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনির নির্দেশনা মোতাবেক সাতক্ষীরার কৃষিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিতকায় দেবহাটার কৃষিতে ব্যাপক সম্ভাবনা বিরাজ করছে।

দেবহাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এই প্রযুক্তির আওতায় উপজেলার নোড়া-চারকুনি এলাকায় একটি বিশেষ উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। যা এলাকার কৃষি উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আগামী বোরো মৌসুমে বিস্তৃর্ণ মৎস্যঘের অধ্যুষিত এলাকা সবুজে ভরে উঠবে এমনটি আশা করেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ১৮ মার্চ দেবহাটায় ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় (অর্থায়নে) বোরো আবাদের লক্ষে অপরিকল্পিত ঘেরে পানি নিষ্কাশন নালা খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। দেবহাটার নোড়া চারকুনি এলাকার মৎস্য ঘেরে প্রায় ৪৫ বছর পরে এ বছর নতুন করে বোরো ধান চাষ শুরু হয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিত ঘেরে পানি নিষ্কাশন নালা না থাকায় ধান চাষে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। 

পরে উপজেলা পরিষদ ও কৃষি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পানি নিস্কাশনের জন্য নালা তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়। উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে নতুন আশা সঞ্চয় হয়েছে। পানি নিষ্কাশন নালাটি খনন সম্পন্ন হলে চারকুনি গ্রামের অন্তত ৫০০ বিঘা জমিতে আগামী বোরো মৌসুমে বোরোধান আবাদ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘লবণ পানির প্রভাবে আমাদের এলাকায় কয়েক যুগ ধরে ধান চাষ না হওয়ায় মাছ চাষ শুরু হয়। কিন্তু ভাইরাসে মৎস্যঘেরে প্রতিবছর ব্যাপক টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হয় চাষিদের। যার ফলে ধান ও মাছ চাষ কোনোটাই ঠিকমত হয় না। পানি নিষ্কাশনের জন্য জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে বার বার গেলেও কোনো সমাধান আসেনি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের প্রথম দিকে কয়েকজন কৃষক মিলে উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আমাদের চাষের আগ্রহের কথা তুলে ধরি। উপজেলা কৃষি অফিসার আমাদের কথা শুনে আমাদের এলাকা পরিদর্শন করে পানি নিষ্কাশন নালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুব খুশি ও আনন্দিত।’

উপসহকারী কৃষি অফিসার আহম্মদ সাঈদ বলেন, ‘এই কাজটি অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জের ছিল। কৃষকরা পানি নিষ্কাশনের জন্য নালার দাবি করলে নানা প্রতিকূলতায় তা দীর্ঘদিনে বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু বর্তমান উপজেলা কৃষি অফিসারের সাহসী ভূমিকা ও আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় কৃষকের দাবির প্রেক্ষিতে পানি নিস্কাশনের নালা তৈরির কাজ শেষের পথে। ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক কৃষিতে অনেক সফলতা বয়ে আনবে।’

উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফ মোহাম্মদ তিতুমীর বলেন, ‘ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নোড়া চারকুনি এলাকার দীর্ঘদিনের সমস্যার বিষয়টি আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করি। পরে প্রকল্প পরিচালককে অবহিত করি, তিনি ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে তিনি অর্থ প্রদান করায় আমরা খুব দ্রুত কাজটি শুরু করেছি। কৃষকরা আশা করি আগামী মৌসুমে এর সুফল পেতে শুরু করবে।’