× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মুন্সীগঞ্জে কমছে আলু চাষ

শিহাব আহমেদ, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৩:১২ পিএম

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৩:১৪ পিএম

মুন্সীগঞ্জ জেলাজুড়ে চলছে আলু তোলার উৎসব। সিরাজদিখান উপজেলার কাকালদি এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রবা ফটো

মুন্সীগঞ্জ জেলাজুড়ে চলছে আলু তোলার উৎসব। সিরাজদিখান উপজেলার কাকালদি এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রবা ফটো

টানা লোকসানে আলুর জেলা মুন্সীগঞ্জের কৃষকদের আলু আবাদে আগ্রহ কমেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে জেলায় আলু উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে কমেছে। চলতি বছরও জেলায় আলু চাষ কম হয়েছে। ফলে কম হয়েছে উৎপাদনও। 

পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে জেলায় ধারাবাহিকভাবে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ও উৎপাদন কমেছে। অন্যদিকে চলতি বছর তেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আলু উৎপাদন-পরিবহন ও সংরক্ষণে কৃষকের খরচ বেড়েছে। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, আলু উৎপাদনে শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জে প্রতি বছর গড়ে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়, যেখানে জেলার ৬৮টি হিমাগারে (কোল্ডস্টোরেজ) ধারণক্ষমতা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন। তাই উৎপাদিত বাকি আলু নিয়ে প্রতিবছরই কৃষকদের হিমশিম খেতে হয়। আবার কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণে খরচ বৃদ্ধিতে কম লাভে ক্ষেত থেকেই আলু বিক্রি করে দেন তারা। এতে লোকসানে পড়তে হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে সদর, টঙ্গিবাড়ি ও সিরাজদিখানে বেশি চাষ হয়েছে। বর্তমানে জেলাজুড়ে চলছে আলু তোলার উৎসব। মুন্সীগঞ্জের ছয়টি উপজেলায় এ বছর ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে। 

এর আগে ২০২২ সালে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর, চাষ হয়েছিল ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর। ২০২১ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর, চাষ হয়েছিল ৩৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর। ২০২০ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৪৯৫ হেক্টর, চাষ হয়েছিল ৩৭ হয়েছে ৫৯০ হেক্টর এবং ২০১৯ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৮০০ হেক্টর, চাষ হয়েছিল ৩৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে।

এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর কম জমিতে আলুর আবাদ হলেও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে কৃষি অফিস। তারা বলছে, যেহেতু কৃষক প্রতি বছরই বলছে আলুতে তাদের লোকসান হচ্ছে, তাই তাদের বিকল্প হিসেবে ভুট্টা ও সরিষা চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ বছর তারা সেটি শুনেছেন। তা ছাড়া বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আলুর জাত চাষে কৃষকদের মধ্যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। 

সরেজমিন দেখা গেছে, আলুক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আলুচাষি ও শ্রমিকরা। ক্ষেত থেকে আলু তুলে বস্তাবন্দি করে নেওয়া হচ্ছে জেলার বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজে। ক্ষেত থেকে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু কৃষক পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন ৬০০ টাকা দরে। অন্যদিকে কোল্ডস্টোরেজে প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে কৃষকের ব্যয় হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা। 

আলুক্ষেতের শ্রমিক বিল্লাল মোল্লা বলেন, এ বছর একেবারেই বৃষ্টি হয়নি। আবার খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় আলুক্ষেতের আশপাশে চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট পানিও পাওয়া যায়নি। এতে আলুক্ষেতে দুই বেলা পানি দিতে কৃষকের খরচ বেশি হয়েছে। আবার সার-কীটনাশকের দামও বেশি ছিল। সব মিলিয়ে খরচ বেশিই হয়েছে। তবে বর্তমানে বাজারে আলুর চাহিদা থাকায় দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। 

বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি আলু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩-২৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। মুন্সীগঞ্জ শহর বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. রাহাত বলেন, প্রতি বস্তা আলু তারা পাইকারদের কাছ থেকে এক হাজার টাকায় কেনেন। কেজি পড়ে ২০ টাকা। কৃষকের কাছ থেকে কিনলে আরও কমে কেনা যায়। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ২৪-২৫ টাকায়। 

আরেক বিক্রেতা স্বপন বলেন, ২০ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছ থেকে আলু কেনেন তারা। খুচরা ক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেন ২৩-২৪ টাকা দরে। 

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় আলু পরিবহনে দেড়গুণ খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বস্তাপ্রতি কোল্ডস্টোরেজ ভাড়াও ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। 

টঙ্গিবাড়ি উপজেলার হাসাইল এলাকার কৃষক মুজিব বেপারী বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্ষেত থেকে কোল্ডস্টোরেজে আলু পরিবহনের খরচ দেড়গুণ বেড়েছে। দেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে। এ ছাড়া গত বছর যেখানে প্রতি বস্তা আলু কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণে ২১০ টাকা ব্যয় হতো, এ বছর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা প্রতি বস্তায় ২৬০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। এতে অনেক কৃষক কোল্ডস্টোরেজে আলু না দিয়ে ক্ষেত থেকেই কম লাভে বিক্রি করে দিচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এবার আলুর দাম ভালো যাচ্ছে বাজারে। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। 

মুন্সীগঞ্জ সদরের মোল্লাকান্দি এলাকার আলুচাষি বাদল বেপারী বলেন, এ বছর ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ কানি (২৪ বিঘা) জমিতে আলু চাষ করেছেন। গত বছরও লোকসান হয়েছে। এরপরও এ বছর লাভের আশায় আলু চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে তুলে সব আলু কোল্ডস্টোরেজে রেখেছেন। দাম আরও বাড়লে বিক্রি করবেন। 

বাদল বেপারী আরও বলেন, আলুর পাশাপাশি জমির আইলে সামান্য পরিমাণ সরিষা চাষ করেছেন। ভালো দামে বিক্রি হলে সামনের বছর আলু চাষ কমিয়ে সরিষা চাষ করবেন। 

সিরাজদিখানের মধ্যপাড়া ইউনিয়নের কাকালদি গ্রামের কৃষক আহমদ খান বলেন, এ বছর তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছেন এবং ২০ শতাংশ জমিতে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে সরিষা চাষ করেছেন। তার মতো এলাকার অনেক কৃষক আলুর আবাদ কমিয়ে বিকল্প সবজি চাষ করেছেন। 

আবির অ্যাগ্রো কোল্ডস্টোরেজের স্বত্বাধিকারী মোশাররফ হোসেন পুস্তি বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসান এড়াতে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে ২৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা ২৩০-২৪০ টাকার বেশি দিতে চাচ্ছেন না। এতে কোল্ডস্টোরেজগুলোর লোকসানে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে ৬০ শতাংশের বেশি আলু তুলে নিয়েছেন কৃষক। বাকিটাও কয়েক দিনের মধ্যে তোলা হবে। এ বছর হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ দশমিক ৬৪ মেট্রিক টন। গড় উৎপাদন পাওয়া গেছে ২৭ মেট্রিক টন করে। কারণ আগাম জাতের আলু আগেভাগে তুলে নেওয়ায় ফলন কম হয়েছে। চলতি দফায় যে আলু উঠছে, সেগুলোর ফলন ভালো। 

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সার্বিকভাবে যদিও আবাদ কম হয়েছে কিন্তু কৃষক লোকসানে পড়েননি। যেহেতু কৃষকও বলছেন আলুতে তাদের প্রতিবার লোকসান হচ্ছে, তাই তাদের আলুর বিকল্প সরিষা, ভুট্টা ও শাকসবজি চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষককে বুঝিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জ আলুর জেলা হলেও লোকসান দিয়ে তো আর চাষ করা যাবে না। আলু আবাদ কমে আসছে এটি অবশ্যই ইতিবাচক। 

রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাত উপযোগী আলুর জাত ছাড়করণ এবং কৃষকপর্যায়ে জনপ্রিয় করার বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বলেন, মুন্সীগঞ্জে বেশি চাষ হওয়া আলুর জাতের মধ্যে একটি হচ্ছে ডায়মন্ড। এ ছাড়াও অরিকো, মাল্টা ও পেরিটোনাইটিস জাতের আলু বেশি চাষ হয় এখানে।

অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য যে জাতগুলো রয়েছে যেমন- বিএডিসির সানশাইন, কুইন এনি, বারি আলু-৬২; সেগুলো সম্পর্কে কৃষককে জানাচ্ছেন। উৎপাদন প্রক্রিয়া শেখানোর চেষ্টা করছেন। এ জাতগুলোর উৎপাদন বাড়ানো গেলে আলুচাষিরা যেমন বেশি লাভবান হবেন, অন্যদিকে বিদেশে আলু রপ্তানি অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা