কুড়িগ্রাম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:১৬ এএম
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৩২ পিএম
সরকারের প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে উন্নত মানের ধানবীজ। কৃষকরা আনন্দসহকারে এসব বীজ নিয়েছেন। বপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রক্রিয়াকরণও করেছেন। কিন্তু বীজে চারা গজায়নি।
বিনামূল্যে কৃষকের বীজ পাওয়ার আনন্দ পরিণত হয়েছে নিরানন্দে। বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা। সম্প্রতি এমনটা ঘটেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে প্রণোদনার আওতায় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার ১০০ কৃষকের মাঝে হাইব্রিড জাতের ধানবীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে এসব বীজ ক্রয় করা হয়। এসব কোম্পানির মধ্যে ব্যাবিলন অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির ‘ব্যাবিলন-২’ নামের ধানবীজও ছিল।
কৃষি অফিস ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী বীজতলা তৈরি করেছেন কৃষকরা। চারা গজানোর জন্য তারা ধানবীজ পানিতে ভেজান। পরে ভেজা এসব বীজ ঘরের ভেতর ডালিতে (বাঁশের তৈরি এক ধরনের বড় পাত্র) খড় দিয়ে রাখেন। কিন্তু হায়! সময় পেরিয়ে গেলেও বীজ থেকে চারা গজায়নি। ফলে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। ‘ব্যাবিলন-২’ ধানবীজ পাওয়া এমন শতাধিক কৃষক অভিযোগ জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসে।
উপজেলার আজোয়াটারী গ্রামের কৃষক নুরনবী মিয়া ও নুরজামাল হক জানান, ব্যাবিলন-২ হাইব্রিড জাতের ধানবীজ পাওয়ার পর কর্মকর্তাদের কথামতো বীজতলা প্রস্তুত করেন। বীজ পানিতে ভিজিয়ে তুলে (জাগ) রাখেন। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও তাতে চারা গজায়নি। তাই বীজ বপন করতে পারেননি। একই অভিযোগ করেন জকারহাট এলাকার নাসির উদ্দিনসহ একাধিক কৃষক। তারা জানান, উপায় না দেখে এখন বাজার থেকে ধানবীজ ক্রয় করে বীজতলা করছেন। কিন্তু সময় চলে যাওয়ায় বোরো আবাদ নিয়ে চিন্তিত তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্যাবিলন অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি লিমিটেড থেকে ব্যাবিলন-২ নামে ৯৫০ কেজি হাইব্রিড ধানের বীজ ২৬০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়েছে। উপজেলার ৪৭৫ জন কৃষকের মাঝে তা বিতরণও করা হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক কৃষক বীজ থেকে চারা না গজানোর অভিযোগ করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলে কোম্পানিকে জানানো হয়। পরে ৭০ জন কৃষককে পুনরায় ধানবীজ সরবরাহ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। যদিও এ সময় বীজতলা করে বোরো চাষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কৃষকদের মাঝে।
বড়ভিটা এলাকার দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, অভিযোগ পেয়ে ১৩ জনের নামের তালিকা অফিসে দিয়েছেন। অন্য ব্লকের কৃষকদেরও তালিকা করে আবার বীজ দেওয়া হয়েছে।
বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাবিলন অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার আহসান উদ্দিন রাফি জানান, অভিযোগের পর নতুন করে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে চারা না গজানোর কারণ তিনি বলতে পারেননি।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, ব্যাবিলন-২ বীজ নিয়ে কিছু কৃষক অভিযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে বীজ নিয়ে ৭০ জন কৃষককে পুনরায় দেওয়া হয়েছে। ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে চারা রোপণ করা যাবে। এতে আবাদের তেমন সমস্যা হবে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, কয়েকটি উপজেলায় এ বীজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে কিছু কৃষক অভিযোগ করেছেন। অনেককে পুনরায় বীজ সরবরাহ করেছে কোম্পানি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।