× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ধান-চাল সংগ্রহে হোঁচট

দিনাজপুর প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:০১ পিএম

আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৪৮ পিএম

ধান সংগ্রহের কাজ চলছে। ছবি : প্রবা

ধান সংগ্রহের কাজ চলছে। ছবি : প্রবা

এবার আমন মৌসুমে সারা দেশে পাঁচ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও তিন লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। গত বছরের ১৭ নভেম্বর শুরু হয়ে এ অভিযান চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। উত্তরের শষ্যভান্ডারখ্যাত দিনাজপুরের কৃষকের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে ১৪ হাজার ৪১৭ টন ধান এবং ৪২ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে ৫৪ হাজার টন চাল সংগ্রহ করছে খাদ্য অধিদপ্তর।

তবে গত ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৫ দিনে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩ টন ৮০ কেজি। আর চাল সংগ্রহ করা গেছে ৩৭ হাজার ৭০৮ টন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ করে ধানের বাজার চড়া হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে। দিনাজপুরে অন্যতম প্রধান ধানের বাজার পার্বতীপুরের আমবাড়ি হাট, সদরের গোপালগঞ্জ হাট, ফার্ম হাট, রাণীগঞ্জ হাট, বিরলের কালিয়াগঞ্জ হাট, কাশিডাঙ্গা-চৌরঙ্গী হাট এবং কাহারোল হাটে গিয়ে দেখা গেছে ধানের দাম চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে দাম।

গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় সদর উপজেলার ফার্ম হাটে কথা হয় ধান ব্যবসায়ী হাসান আলীর সঙ্গে। তিনি এসেছেন চিরিরবন্দর উপজেলার কারেন্ট হাট এলাকা থেকে ধান কেনার জন্য। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) এই হাটে মোটা ধান কিনেছি প্রতিবস্তা (৭৬ কেজি) ৪ হাজার ১৫০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায়। আজ সেই ধান ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। চিকন ধানের দাম আরও বেশি। বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।’

বিরল উপজেলার মুরাদপুর থেকে ধান কিনতে আসা ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম জানালেন, এবার অবস্থা খারাপ। এই হাটে যেই চিকন চিনিগুড়া, হাঠারি ধান একবস্তা কিনেছেন ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়, সেই ধান এখন ৫ হাজার ১০০ থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকা বস্তা।

বিরল উপজেলার ১১ নম্বর পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার ইবরাহিমপুর গ্রামের আজাহার আলী কিছুটা হতাশ। কারণ এই চাষি আগেই তার উৎপাদিত বেশিরভাগ ধান বেচে দিয়েছেন। আক্ষেপ করে তিনি বললেন, ‘ভাই, এইবার মুই ধানত খুবই লস খাইনু। ৮-১০ দিন আগত যেই ধান বিক্রি করনু ৪৩০০-৪৪০০ টাকা বস্তা, সেই ধান এখন ৫০০০-৫২০০ টকা বস্তা। জমি আবাদ করি এগারশ মণ ধান পাইছো। থুবার জায়গা না থাকায় বেশিরভাগ বেচিছো আগতেই। এইবার খুবই লস।’

জেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের পরও দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান-চাল সংগ্রহে হোঁচট খাচ্ছে জেলা খাদ্য অধিদপ্তর। কৃষক সরকারকে ধান দিচ্ছে না। মিল মালিকরাও চাল দিতে গড়িমসি করছে।  

জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উচ্চমান সরকারী হাবিবুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত (১১ জানুয়ারি) ধান সংগ্রহ হয়েছে ৩ টন ৮০ কেজি। আর চাল সংগ্রহ ৩৭ হাজার ৭০৮ টন।

জেলায় রয়েছে ১ হাজার ৫৪৪টি রাইস মিল। এর মধ্যে হাসকিং মিল ১ হাজার ৩৪৮টি এবং অটোরাইস মিল ১৯৩টি। সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে হাসকিং মিল ৯৪৩টি ও অটোরাইস মিল ১৮৩টি। তবে সময়সীমা শেষ হওয়ায় ইতোমধ্যে ৪১৮টি মিল সরকারের গুদামে চাল দেওয়ার জন্য চুক্তি করেনি মর্মে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব মিলারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। মিলাররা অনেকে নানা অজুহাত দেখালেও শেষ পর্যন্ত লাইসেন্স বাতিলের ভয়ে চাল দিতে চুক্তির আওতায় আসছেন বলে জানান কর্মকর্তারা। 

দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘আমরা নিজেদের ক্ষতি করে হলেও সরকারকে যথাসাধ্য চাল দিচ্ছি। না দিলে আমাদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি রয়েছে। তবে ধানের যে দাম, তাতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকার একটু বেশি রেট দিলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।’

মিলার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘হয় সরকার নির্ধারিত দাম বাড়াতে হবে, নতুবা বাজারে ধানের দাম কমাতে হবে। বর্তমান বাজারে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে, তা থেকে চাল তৈরি করলে সর্বনিম্ন মূল্য দাঁড়ায় ৪৬-৪৮ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারণ করেছে ৪২ টাকা। ফলে কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা লোকসান গুনে চাল দিতে আগ্রহী নন তারা।’

সদর উপজেলার দক্ষিণ কোতোয়ালির কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান-চাল দিতে অনেক ঝামেলা হয়। পরিবহন খরচ বেশি। এ ছাড়া অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বেচতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। অ্যাপস আমরা বুঝি না। আবার ধান বিক্রির পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে দেওয়া হয় টাকা। এত ঝামেলা করার কী দরকার!’

ধান সংগ্রহ কম হওয়ার আরেকটি কারণ জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, এটা ঠিক না। আসলে কৃষক আমাদের কাছে আসছে না। না আসার কারণ যেটা আমি বুঝি, ধানে আর্দ্রতা বেশি বলে আমরা নিতে পারছি না। আবহাওয়া খারাপ যাওয়ার কারণে সঠিক সময়ে ধান শুকাতে পারেনি কৃষক।

আগে যে ধান এক দিনে শুকানো যেত, এখন তিন দিনেও সেই ধান শুকাতে পারছেন না। ১৪ শতাংশের ওপরে আর্দ্রতা গেলে আমরা ধান নিতে পারি না। কিন্তু কৃষকরা ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ আর্দ্রতার ধান নিয়ে আসে। যা নেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক কৃষক ধান পরিষ্কার করেন না। মাড়াই দিয়েই বাজারে নিয়ে আসেন যা পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। আমাদের পক্ষে তা কেনা সম্ভব হয় না।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা