পিরোজপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৪ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪১ পিএম
বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ক্যাটাগরিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) হিসেবে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করছেন বদরুল। ছবি : প্রবা
কেঁচো চাষের মাধ্যমে কম্পোস্ট সার তৈরি করে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বদরুল হায়দার বেপারি। কেঁচো চাষ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চৌঠাইমহল গ্রামের এই চাষি তার কাজটাকে এত ভালোবাসেন যে, ফেসবুকে তার পরিচিতি দিয়েছেন ‘কেঁচোচাষা’ হিসেবে।
বিএ পাস করা এই চাষি এখন কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কেঁচোসার নিয়ে পরামর্শ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটে যান বদরুল। অন্যদের কেঁচোসার উৎপাদন ও ব্যবহারে উৎসাহিত করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষি বদরুল একজন স্বাবলম্বী কৃষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
২০১২ সাল থেকে কেঁচোসার নিয়ে কাজ করছেন বদরুল। তার সাফল্যে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছরের ২৭ জুলাই কৃষি মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ক্যাটাগরিতে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) হিসেবে সম্মাননা দেয় তাকে। বদরুলসহ ১৩ ব্যক্তি এ সম্মাননা পেয়েছেন।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে এআইপি সম্মাননা ২০২০ পান বদরুল।তিনি সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষিপদক পেয়েছেন।
বদরুল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ২০১২ সালের দিকে একটি পত্রিকায় কেঁচো চাষের মাধ্যমে কম্পোস্ট সার তৈরি সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন পড়েন। ওই প্রতিবেদন পড়ে কেঁচো চাষ নিয়ে কাজ করায় আগ্রহী হন। তারপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। চুয়াডাঙ্গা থেকে ১৩ হাজার ২০০ টাকায় ২ কেজি কেঁচো কেনেন। কেনেন ছয়টি স্যানিটারি রিং। শুরু করেন ‘জাগো কেঁচো খামার’।
বদরুল বলেন, কেঁচো নিয়ে কাজ করায় শুরুতে আশপাশের লোকজন হাসাহাসি করত। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত। কিন্তু তিনি হতোদ্যম হননি। কাজ চালিয়ে গেছেন নিজের মতো। তবে এখন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। বদরুলের কাজ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরাও গর্বিত। এমনকি তারা তার কাজে নানাভাবে সহায়তা করছেন।
বদরুলের নিজের তিনটি খামারে বর্তমানে কেঁচোসার উৎপাদনের পরিমাণ মাসিক প্রায় ৮৫ টন। তিনি বিভিন্ন খামার থেকে সোর্সিং করে মাসে প্রায় ১ হাজার ৫০০ টন কেঁচোসার বিক্রি করেন। ১ টন কেঁচোসার ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
বদরুল বলেন, ‘শুরুতে নিজের উৎপাদিত কেঁচোসার নিজের কৃষি খামারে ব্যবহার করি। এতে ভালো ফল পাই। তারপর অন্য কৃষকদের কেঁচোসার উৎপাদন ও ব্যবহারের কাজে নামি। তবে কাজটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু এ কাজেও সফলতা আসে।’
তার সার্বিক সহায়তায় জেলায় এ পর্যন্ত আরও ৪১টি কেঁচো খামার গড়ে উঠেছে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৬৩টি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ২০ হাজার নগর ও মাঠ কৃষকের কাছে পৌঁছান বদরুল। প্রশিক্ষণ দিয়েছেন আরও প্রায় ৭০ হাজার কৃষককে। সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের একজন সফল প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মনেপ্রাণে চাই দেশের অন্তত ৪০ ভাগ কৃষক কৃষি উৎপাদনে এ জৈবসার ব্যবহার করুক।’
বদরুলের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘প্রথম দিকে আমার এ কাজ ভালো লাগত না। কিন্তু আস্তে আস্তে আমিও তাকে সহযোগিতা করতে শুরু করি। গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদক পাওয়ায় আমার স্বামী এখন দেশের একজন সফল ব্যক্তি। এটা আমার আর আমার সন্তানদের কাছে খুবই গর্বের।’
বদরুল এআইপি সম্মাননা পাওয়ায় তিনি বেশ কিছু সুবিধা পাবেন। যেমন এক বছর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রশংসাপত্র পাবেন। বাংলাদেশ সচিবালয়ে ঢোকার জন্য পাস পাবেন। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাবেন। আকাশ, রেল, সড়ক ও জল পথে ভ্রমণে সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন। ব্যবসা বা দাপ্তরিক কাজে বিদেশ ভ্রমণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা প্রাপ্তিতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন ইস্যু করবে। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন।
বদরুলের জন্ম পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চৌঠাইমহল গ্রামে, ১৯৭৬ সালে। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন ব্যাপারী। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।