প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫ ২১:৪৬ পিএম
আমন ধানের বীজ সংগ্রহ ও শোধন, বীজতলা তৈরি ও বীজতলার যত্ন সম্পর্কে একটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এগ্রোমেট ল্যাব। ১ জুলাই নিজস্ব ওয়েবসাইটে কৃষি বুলেটিন নামে দেওয়া এই নির্দেশনায় উন্নত মানের অধিক ফলনশীল বীজ সংগ্রহ করার আহ্বান জানানো হয়। তাছাড়া আমন ধানের বীজতলা তৈরিতে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে ব্যবহারের কথাও বলা হয়।
বীজ শোধন ও জাগ দেওয়া সম্পর্কে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, বীজ শোধন দুভাবে করা যায়- শুকনো বীজ শোধন ও ভেজানো বীজ শোধন। কার্বেনডাজিম (৫০%) বা কার্বেনডাজিম (২৫%) + ম্যানকোজেভ (৫০%) মিশ্রণ ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১ কেজি বীজ সেই দ্রবণে ৮-১০ ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। জৈব ছত্রাকনাশক ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৪ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে মিশিয়েও বীজ শোধন করা যায়।
তারপর ওই বীজ ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে জাগ দিতে হবে। ধানের বীজ বস্তা থেকে বের করে তিন-চার ঘণ্টা রৌদ্রে শুকিয়ে তারপর ছায়ায় রেখে স্বাভাবিক ঠাণ্ডা করতে হবে।
বপনের জন্য পুষ্ট ও সুস্থ বীজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দশ লিটার পরিস্কার পানিতে ৩৭৫ গ্রাম ইউরিয়া সার ভালোভাবে মিশাতে হবে। তারপর ১০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দিলে পুষ্ট বীজ ডুবে নীচে জমা হবে এবং অপুষ্ট ও হালকা বীজ ভেসে উঠবে। হাত বা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। ভারী বীজ নিচ থেকে তুলে নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ৩-৪ বার ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর বীজ চটের বস্তায় ভর্তি করে পরিষ্কার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পর বস্তাসহ বীজ পানি থেকে তুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে খড়-কুটো দিয়ে ঢেকে জাগ দিতে হবে।
এভাবে জাগ দিলে আমন মৌসুমে ৪৮ ঘণ্টা বা দুই দিনের মধ্যে বীজের অঙ্কুর বের হবে এবং বীজতলায় বপনের উপযুক্ত হবে।
বীজতলা নির্বাচন ও আদর্শ বীজতলা তৈরি সম্পর্কে কৃষি বুলেটিনে বলা হয়, চারদিকে খোলা, রৌদ্র ও সেচসুবিধাযুক্ত জমিতে বীজতলা তৈরী করতে হবে। আশেপাশের জমির থেকে একটু উঁচু জমি আমন ধানের বীজতলার জন্য আদর্শ। ভালোমত চাষ-মই দিয়ে, জমি থকথকে কাঁদাময় তৈরী করে, তাতে ১.০-১.৫ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট প্রয়োজন মত লম্বা একাধিক বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে।
প্রতি দুই বীজতলার মাঝে ৩০ সেমি নালা/ড্রেন রেখে সেখান থেকে মাটি উঠিয়ে বীজতলা একটু উঁচু ও সমতল করে তৈরী করা যেতে পারে। চারা গজানোর পর দুই বীজতলার মাঝখান দিয়ে হাঁটাচলা করা, চারায় পানি সেচ ও অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা করা সহজতর হয়। প্রতি বর্গমিটার বীজতলায় ৮০-১০০ গ্রাম হারে অঙ্কুরিত বীজ বেডের উপর সমানভাবে বুনে দিতে হবে।
সারের পরিমাপ সম্পর্কে বুলেটিনে বলা হয়, দোআঁশ ও এটেল মাটি বীজতলার জন্য ভালো। বীজতলা যদি অনুর্বর হয় তবে প্রতি বর্গ মিটারে ১-১.৫ কেজি হারে জৈব সার হিসেবে পঁচা গোবর ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর জমিতে ৫-৬ সেন্টিমিটার পরিমাণে পানি দিয়ে ভালোভাবে মই দিয়ে চাষ দিয়ে ৭-১০ দিন রেখে দিতে হবে এবং পানি আটকে রাখতে হবে। এছাড়া হাইব্রিড ধানের ক্ষেত্রে সুস্থ ও সবল চারা পেতে হলে বীজ তলার প্রতি বর্গ মিটারে ৪ গ্রাম টিএসপি, ৭ গ্রাম এমওপি এবং বীজ বোনার দশ দিন পর ৭ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।