× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পান চাষিদের মাথা হাত

ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ, মহেশখালী (কক্সবাজার)

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫ ১০:৪০ এএম

বড় মহেশখালীর পান বাজারে টুকরিতে পান তুলতে ব্যস্ত শ্রমিক

বড় মহেশখালীর পান বাজারে টুকরিতে পান তুলতে ব্যস্ত শ্রমিক

মিষ্টি পানের জন্য দেশজুড়ে যে কয়েকটি অঞ্চলের খ্যাতি আছে, তার মধ্যে মহেশখালীর নাম এগিয়ে আছে। অতিথি আপ্যায়নের এই মিষ্টি পান বিবেচিত হয়ে থাকে।

অনেক চাষির জীবিকার ভরসা মিষ্টি পান উৎপাদন। কিন্তু পান উৎপাদনে চাষির ভাগ্যে জুটেছে দুঃখ-যন্ত্রণা। পানের দামে ধস নামায় পান চাষিরা দিশাহারা। অতিরিক্ত উৎপাদন খরচের ভারে তারা ক্ষতির মুখে। কেউ মাঝপথে এসে বরজ তুলে নিচ্ছেন। কেউবা প্রচণ্ড হতাশায় গরুকে পান খাওয়াচ্ছেন। এতে দ্বীপটির ঐতিহ্যবাহী কৃষি অর্থনীতি ধ্বংসের শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।

পান চাষি আবদুল মালেক বলেন, ‘সত্তর হাজার টাকা ধার করে বরজে পান লাগিয়েছি। এখন পর্যন্ত ত্রিশ হাজার টাকার পানও বেচতে পারিনি। পাইকাররা বলছেন, বাজারে পান পড়ে আছে। আমি ঋণদাতার ভয়ে বাড়ি থেকেও বের হতে পারছি না।’ আরেক চাষি রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলের স্কুলের বেতন দিতে পারিনি। এখন বেঁচে থাকাটাও কঠিন হয়ে উঠছে। পান চাষ করে এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে তা আগে ভাবিনি।’

গত বছরের তুলনায় এবার ভালো দাম পাওয়ার আশায় মহেশখালীর হোয়ানক, কালারমারছড়া, বড় মহেশখালী এবং শাপলাপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৪০০ হেক্টর জমিতে চাষিরা বরজ গড়ে তুলেছে। প্রায় ১৩ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি এই পান উৎপাদনে যুক্ত ছিলেন। গড়ে প্রতিটি বরজে বিনিয়োগ হয়েছে ৭০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। ধারদেনা করেই বেশিরভাগ পান চাষি বরজে বিনিয়োগ করেছেন। এমন অনেকেই আছেন শেষ সম্বল খরচ করে বরজ বানিয়েছেন। কিন্তু এতে লাভের আশা উবে গেছে। পান চাষ বয়ে এনেছে লোকসান।

চাষিরা বলেন, জানুয়ারিতে যে পানের প্রতি বিরা (প্রায় ২২০টি পান) ৭৫০ টাকায় বিক্রি হতো, বর্ষা মৌসুমের সঙ্গে সঙ্গে সেই দাম ভয়ানকভাবে কমে গেছে। বর্তমানে প্রতি বিরা পান মাত্র ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে মুনাফা হওয়া তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না। পানি, শ্রমিক, বাঁশ, জাল, সারÑ সবকিছুর খরচ উঠিয়ে লাভের কথা ভাবাই যাচ্ছে না। উল্টো প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে।

মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা পানের গাছ কেটে ফেলছেন নিজের হাতেই। বরজে পড়ে থাকা পানের আর কোনো বাজার নেই বলে তারা মনে করছেন। পাইকার এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপটে তারা ন্যায্য দামের কাছাকাছিও যেতে পারছেন না। কেউ কেউ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, আমরা পান চাষ করছি, কিন্তু লাভ কুড়াচ্ছে দালালরা। যারা বরজে ঘাম ঝরায়, তাদের কপালে জোটে শুধু ঋণ আর হতাশা।

চাষিরা অভিযোগ করছেন, বর্তমানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে একটি সুসংগঠিত দালালচক্র ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তারাই ঠিক করে দিচ্ছে কে কত দামে পান বিক্রি করবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশাল পরিবহন সংকট এবং পানের সংরক্ষণে কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকা। ফলে চাষিরা সিংহভাগ সময় লোকসানে পান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। নতুবা মাঠেই ফেলে দিয়ে আসছেন।

মহেশখালী পান চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘চাষের বিস্তৃতি এ বছর নজিরবিহীন ছিল, আগে কখনো এত বড় আকারে পান চাষ হয়নি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় মানুষ ধারদেনা করে বরজ করেছিল। কিন্তু বাজারে এমন ধস নামবে তা কল্পনাও করিনি। যদি সরকার সহজ শর্তে কৃষিঋণের ব্যবস্থা করে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্তরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। না হলে আগামী মৌসুমে চাষিরা পান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।’

মহেশখালী কৃষি অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চাষিদের অসংগঠিত অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, মহেশখালীর সামগ্রিক অর্থনীতিতে মিষ্টি পানের অবদান অনেক। এটি টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা জরুরি। সহজ শর্তে কৃষিঋণ, সরকারি ক্রয় কার্যক্রম চালু, পানের সংরক্ষণের জন্য স্টোরেজ সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে এই দ্বীপ জেলা থেকে মিষ্টি পানের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা