মীর ফাহাদ, ভালুকা (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫ ০৮:৫০ এএম
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫ ০৮:৫৮ এএম
ময়মনসিংহের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড বাজারের আড়তে স্তূপ করা কাঁঠাল
ময়মনসিংহের সর্বদক্ষিণের লালমাটির উঁচু-নিচু পাহাড়ি বনভূমি এলাকাটা হলো ভালুকা উপজেলা। জাতীয় ফল কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চল। শিল্পায়নের ছোঁয়ায় ফল ও ফসলি জমি কমলেও এখনও এ অঞ্চলে কাঁঠাল চাষ হয় প্রচুর। এবার ভালুকায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই অঞ্চলের কাঁঠাল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে, তবে তার আগে হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানান ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারীরা।
ভালুকার বিভিন্ন হাটবাজারে ব্যাপক কাঁঠাল সরবরাহে বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই প্রাকৃতিক উপায়ে কমবেশি কাঁঠাল চাষ হয়ে থাকে। এখানে কাঁঠালের বড় বাজার হবিরবাড়ীর সিড স্টোর বাসস্ট্যান্ড, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড, উথুরা বাজার, মল্লিকবাড়ী বাজার, বিরুনিয়া বাজার, কাচিনা বাজার, শান্তিগঞ্জ বাজার, পোনাশাইল বাজার, আঙ্গারগাড়া বাজার ও মাস্টারবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা।
ভালুকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকা থেকে ঠেলাগাড়ি, রিকশা, তাটো, গরু মহিষের গাড়ি, পিকআপসহ বিভিন্ন বাহনে কাঁঠালচাষি ও বেপারিরা আসেন এসব হাটবাজারে।
তবে সাপ্তাহিক হাট হলেও জাতীয় ফল কাঁঠাল বিক্রির জন্য বাজারে প্রতিদিন হাট বসে। বাজার ছাড়াও রাস্তার মোড়ে মোড়ে কাঁঠাল নিয়ে বিক্রি করেন চাষিরা। প্রচুর আমদানি ও বিক্রি শুরু হয় বিভিন্ন এলাকার হাট বাজারে। কোনো কোনো পরিবার ফল মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি করে সারা বছরের আয় করেন। দুই থেকে তিন মাস কাঁঠালের ভরা মৌসুম এ সময় পাইকার ও শ্রমিক শ্রেণির লোকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার হবিরবাড়ী বাজারজুড়ে ও আড়তগুলোতে কাঁঠালের স্তূপ। থলে থলে সাজানো রয়েছে ছোট-বড় কাঁচা-পাকা অসংখ্য কাঁঠাল। বাতাসে ছড়াচ্ছে কাঁঠালের সুঘ্রাণ। সকাল থেকেই আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এই কাঁঠাল এনে জড়ো করেন চাষিরা। বাটাজোর বাজারের শেডঘরে কাঁঠাল, উঠানে কাঁঠাল। বাজারের ছোট-বড় শেডঘরে, বাজারজুড়ে কাঁঠাল আর কাঁঠাল। কেউ কাঁধে করে, মাথায় করে আবার কেউ রিকশায় করে কাঁঠাল নিয়ে বাজারে আসছেন। কেউবা রাস্তার মোড়ে মোড়ে দু-একটি কাঁঠাল নিয়ে বসে আছেন বিক্রির জন্য।
বন্দর নারায়ণগঞ্জের ও ঢাকার কাঁঠালের পাইকার এনামুল হক ও তারা মিয়া বলেন, ‘ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভালুকার কাঁঠালের বেশ চাহিদা। তিনি বলেন, ‘গাড়ি ভাড়াসহ ১ লাখ টাকার কাঁঠাল কিনলে বেচা হবে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।’
উপজেলার হবিরবাড়ী বাজারের আড়তদার মেহিদী মৃধা মিয়া বলেন, ‘আমি প্রায় ১০ বছর ধরে কাঁঠাল বেচাকেনা করছি। কাঁঠালের সাইজ বুঝে দাম। ছোটটি ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত আর বড়টি ৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমাদের এলাকার কাঁঠালের চাহিদা দেশের অন্যন্যা অঞ্চলে রয়েছে। গত বছরের তুলনাই এ বছর কাঁঠাল উৎপাদন ভালো দামও কম। যদি কাঁঠাল সংক্ষরণের জন্য হিমাগার ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে চাষিরা লাভবান হতেন।’ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আসেন এই হাটে। এ ছাড়াও নোয়াখালী সিলেট, রাজশাহী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গাড়ির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলার হবিরবাড়ি গ্রামের কাঁঠাল চাষিরা জানান, প্রায় প্রতিবছর কাঁঠালের ফলন ভালো হয়। সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার কাঁঠাল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। উপযুক্ত দাম থেকে বঞ্চিত হন। এলাকায় সরকারি উদ্যোগে কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, ‘উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের ব্লক আমি দেখাশোনা করি। এলাকাতে কাঁঠাল সবচেয়ে বেশি হয়। বর্তমান বাজারে কাঁঠালের দাম একটু কম।’
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবৃদ নুসরাত জামান বলেন, ‘কাঁঠাল চাষে অনেক আগে থেকেই ভালুকা বিখ্যাত। এ বছর ভালুকাতে প্রায় ৩৮৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৪৩ হাজার ৯শ মেট্রিক টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।’