× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃষকদের মধ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫ ২০:৩৫ পিএম

কৃষকদের মধ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে

কৃষকদের মধ্যে পুষ্টিকর ফসল উৎপাদনের আগ্রহ বাড়ছে। তবে এজন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কাজের ধারাবাহিকতা না থাকা, মানসম্পন্ন বীজের অভাব। এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলে কৃষকদের মধ্যে এসব ফসল চাষের আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। 

‘কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় তারা এসব কথা বলেন। বুধবার (১৮ জুন) সকালে রাজধানীর খামারবাড়িস্থ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের হলে কর্মশালাটির আয়োজন করে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী, এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএইর প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইংয়ের পরিচালক মো: আব্দুস সাত্তার, প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের পরিচালক মোঃ হাবিবউল্লাহ্। কারিগরি সেশন পরিচালনা করেন মোঃ হাবিবউল্লাহ্ এবং স্বাগত বক্তব্য ও প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক, আ.ন.ম. আনোয়ারুল হাসান।

আ.ন.ম. আনোয়ারুল হাসান বলেন, ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২৭ সালে শেষ হবে। তিনি বলেন, ৮ বিভাগের ৪৯ জেলার ১৫৫টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৩ হাজার ৭১৮টি বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী, ১৫৫টি পুষ্টিসমৃদ্ধ ষেরাপদ ফসল গ্রাম সৃজনের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চত করা হব। 

তিনি জানান, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে ৩ লাখ ৮ হাজার ৬১৮টি কৃষক পরিবারে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং ৩৭ হাজার ২০০ কৃষক-কৃষাণীর আয়বর্ধনে বারটানের ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে ৭টি মিনি নিউট্রিশন ল্যাব স্থাপন করা হবে। 

প্রকল্পটির অর্জন সম্পর্কে আ.ন.ম. আনোয়ারুল হাসান বলেন প্রকল্পের অধীনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৯ একর জমিতে ২৬৮.৬৪ মেট্রিক টন জিংক ধান, ১৯৮ একর জমিতে ৮৮১.৭১ মেট্রিক টন ভুট্টা, ৯৯ একর জমিতে ১ হাজা ৪০২ মেট্রিক টন মিষ্টি আলু, ১৫১.৮ একর জমিতে ১ হাজার ৩৫২.০৭ মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়া, ৯৯ একর জমিতে ৭৩.৩৯ মেট্রিক টন চিনা বাদাম এবং ১৩২ একর জমিতে ৭২.১৪৯ মেট্রিক টন ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদন হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত ৪৬৪.৩৫ মেট্রিক টন ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৬০ জন কৃষক-কৃষাণীকে দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত জিংক সমৃদ্ধ ৩০০টি ধানের জাত, ৩০০ টি করে মিষ্টি আলু ও চিনা বাদাম, ৬০০ টি ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, ফ্রেন্সবিন, শসা, গাজর, ব্রকলি, রঙিন বাধাকপি, ফুলকপি ও কচু জাতীয় ৪৬০ ফসল উৎপাদনের প্রদর্শনী করা হয়েছে। জিংক সমৃদ্ধ ধান ব্রি-৮৪, ১০০ ও ১০২ ধান চাস করে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ এ ধানের চাল শিশুদের পুষ্টি উন্নয়নে সহায়ক। 

মাঠপর্যায়ের কাজের গুণগত মান বাড়াতে হবে উল্লে করে মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, আমরা আগে খাদ্য উৎপাদনের কথা বলা হতো, এখন পুষ্টিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আমরা জিংক ও প্রোটিন সমৃদ্ধ জাত চাষের ব্যাপারে চিন্তা করবো।

তিনি বলেন, কৃষিখাতে বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৭ মিলিয়ন ডলার আদায় করতে পেরেছি। মিষ্টি আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এটি খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি থাকে। মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচিতে এ খাদ্যের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

সবকিছু কৃষককে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের অধীনে আমরা কৃষককে মাত্র ৪ হাজার টাকা দিচ্ছি। সেখানে কৃষকদের খরচগুলো তুলে ধরতে পারলে এসব সমালোচনার জবাব দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানান। মো. ছাইফুল আলম বলেন, পুষ্টিতে পিছিয়ে থাকার কারণ হচ্ছে আমাদের অস্বচ্ছতা ও অজ্ঞতা। তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় দরকার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো: আব্দুস সাত্তার বলেন, বর্তমানে ২৯টি প্রকল্প চলমান আছে। বাঘার পদ্মার চরে কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছে। আমরা যেকোন নতুন জাত এক বছরের মধ্যে মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি আর্থিকসহ সব ক্ষেত্রে সচ্ছতা রাখার আহ্বান জানান। 

হযরত আলী বলেন, অনাবাদি পতিত জমিতে পুষ্টি বাগান নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এখন নতুন প্রকল্প চালু হয়েছে। যেখানে অল্পজমিতে বেশি পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায়। তিনি পণ্যের বাজারজাতের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তা ছাড়া এসব পণ্যের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। কৃষকরা নিজেদের পণ্যের রেজিষ্ট্রেশন করতে সমস্যায় পড়ছে। এক্ষেত্রে রেজিষ্ট্রেশন আইন সহজ করতে হবে। 

মোঃ হাবিবউল্লাহ্ বলেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ জাতকে যুক্ত করতে হবে। আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশ। কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষক কামাল হোসেন প্রকল্পের আওতায় ২৮ শতক জমিতে বারি-১২, ১৬, ১৭ ও ১৮ জাতের মিষ্টি আলু বারি চাষ করেন। এতে ৪৫ মণ বড় জাতের আলু বিক্রি করেছেন, ৭ মণ ছোট জাতের আলু বিক্রি এবং আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়াসহ প্রায় ৬০ মণ আলু উৎপাদন হয়েছে। 

তিনি বলেন, তাকে দেখে স্থানীয় কৃষকরা চাষে এগিয়ে আসছে। তবে বীজের জন্য রাখা ১৭-১৮ জাতের আলু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে প্রকল্প পরিচালক জানান, আলু ক্ষেত থেকে তোলার পর ছায়ার মধ্যে রেখে চামড়াটি শক্ত করে নিয়ে বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

গাজীপুরের কালিগঞ্জের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম বলেন, গাজীপুরে প্রতিনিয়ত হাউজিং ও রিসোর্ট কোম্পানি এবং কল-কারখানা স্থাপনের কারণে ফসলি জমির পরিমাণ কমছে। এখানে ১৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির মধ্যে ৯৫২ হেক্টর জমিই এক ফসলি। এখানে ব্রি-১০২ ও ১০৮ জিংক সমৃদ্ধ ধানের আবাদ হয়েছে। তাতে কৃষকদের মধ্যে সাড়া পড়ছে। তিনি জানান, তার অঞ্চলে কাঁঠাল প্রক্রিয়া জাতের সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া কল-কারখানার বিষাক্ত পানির কারণে সেচের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সেচের সুব্যবস্থা কা দরকার।

পাহাড়ে ৫ শতকের ছোট বাগানের বদলে বড় ধরনের বাগানের ব্যবস্থা করা দরকার বলে দাবি করেন রাঙামাটির কাউখালি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাসেল সরকার। বলেন, ব্রকলি ও রঙিন সবজির আবাদ বাড়ছে। তবে তাদের সেচের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

যন্ত্রপাতি সরবরাহ বৃদ্ধির দাবি করে ভোলা সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, কৃষকদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বেশি করে সরবরাহ করা দরকার। তা ছাড়া এখানে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়।

 তিনি বলেন, এখানে প্রচুর পরিমাণ সুপারির আবাদ হয়। তাতে সহযোগী ফসলের আবাদ বাড়ছে। তিনি বলেন, ভোলায় প্রচুর টমেটো চাষ হয় তবে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেয়ে তারা তা শুকিয়ে বিক্রির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এতে দামও পাওয়া যাচ্ছে। ২৮ হেক্টর জমিতে কেপসিকাম চাষ হয় তবে দাম বেশি পায় না। তারা ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও সেটি বাজারে ২০০-২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে যাতে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায়। খরিপ-১ ও ২ মৌসুমে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত বলেন, অমৌসুমী তরমুজের চাষাবাদ বাড়ছে। তা ছাড়া পুষ্টিমান খাবার খেতে এবিষয়ে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মানসম্মত বীজ পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। 

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) আলাদাভাবে কাজ করায় সমন্বয়হীনতা তৈরি হয় এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, বারটানকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। তা না হলে লক্ষ্য পূরণ হবে না। ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আগে আমাদের নিজেদের উদ্যোক্তাদেরগুলো কিনতে হবে বলে তিনি নির্দেশনা দেন।

চাঁদপুরের কৃষি কর্মকর্তা বলেন, চাঁদপুরে ১৮০ হেক্টর বোরো জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। ৪৮টি চর রয়েছে। সিলেটের কর্মকর্তা ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, সিলেটে কৃষির আবাদ কম। প্রাক বন্যার মুখে পড়তে হয়। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা