অরুপ রতন, বগুড়া
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ১৯:৩৮ পিএম
আপডেট : ২১ মে ২০২৫ ২০:১৬ পিএম
যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর তীরঘেঁষা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে গেছে গত কয়েক বছরে। যেখানে একসময় জমি পড়ে থাকত বছরের পর বছর, আজ সেখানে গড়ে উঠেছে ফসলের সমৃদ্ধ ভান্ডার। চরাঞ্চলে কৃষিতে ঘটেছে আশ্চর্যজনক পরিবর্তন। আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত জাতের বীজ, সেচ সুবিধা ও উদ্যোক্তাদের আগমনে এই চরাঞ্চল এখন হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
কৃষি অফিস বলছে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত জাতের বীজ, সেচ সুবিধা এবং নতুন উদ্যোক্তাদের আগমনে বদলে গেছে কৃষির চিত্র। প্রতিবছর উজান থেকে বয়ে আসা পলিমাটি জমির উর্বরতা বাড়িয়ে তুলছে। এতে বেলে-দোআঁশ প্রকৃতির এই মাটি হয়েছে ফসলের জন্য আদর্শ।
চলতি বছরে উপজেলায় ৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৮৬ হাজার ৫০০ টন, যার বাজারমূল্য ২৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকার বেশি। মরিচ উৎপাদিত হয়েছে ৩ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে, পরিমাণ ৯ হাজার ৭৭ টন, বাজারমূল্য প্রায় ১৯৩ কোটি টাকা। বোরো মৌসুমে ধান চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টরে, উৎপাদন ২৫ হাজার ১৮২ টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭৯ কোটি টাকা।
পাটের ক্ষেত্রেও ছিল উল্লেখযোগ্য সাফল্য। গত বছর পাট উৎপাদিত হয়েছিল ৩ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে, যার বাজারমূল্য ৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি। চলতি বছরও ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হচ্ছে।
রবি মৌসুমেও মিলেছে বাম্পার ফলন। উৎপাদিত হয়েছে ৯ হাজার ১১০ টন আলু, ৫ হাজার ১২০ টন সরিষা, ১৯ হাজার ৮০ টন পেঁয়াজ, ৪৫০ টন রসুন, ৮৬৮ টন গম, ১ হাজার ২০ টন মসুর, ১ হাজার ১৫৫ টন খেসারি, ১৫ টন তিল, ৯ হাজার ৪৯০ টন নানা ধরনের শাকসবজি এবং ৫ হাজার ৮১০ টন মিষ্টি আলু। সব মিলিয়ে গত রবি মৌসুমে কৃষকের ঘরে ফিরেছে প্রায় হাজার কোটি টাকার ফসল।
এই কৃষি বিপ্লবের পেছনে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। চরাঞ্চলে শ্যালো মেশিন বসিয়ে প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ফলে এমন জায়গাতেও চাষ সম্ভব হচ্ছে, যেখানে আগে পানি ওঠানো ছিল কল্পনাতীত।
চরের এই কৃষি সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই উদ্যোগ নিচ্ছেন প্রজেক্ট আকারে চাষাবাদের। কেউ কেউ বছরে বা মৌসুমভিত্তিক চরের জমি লিজ নিয়ে ১০০ থেকে ৫০০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে ফসল চাষ করছেন। ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়াÑ এসব এখন চরের প্রধান ফসল।
তরুণ উদ্যোক্তা আছালত জামান জামান, ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন তিনি। উচ্চশিক্ষা শেষ করে কিছুদিন চাকরি করলেও মন টিকছিল না। শেষে ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে। শুরু করেন কৃষিকাজ। এ বছর মাত্র ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে লাভ করেছেন ৩ লাখ টাকার বেশি। এখন তিনি আরও বড় পরিসরে চাষের পরিকল্পনা করছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, যমুনা ও বাঙ্গালী নদী থেকে প্রতিবছর বয়ে আসা পলিমাটি জমিকে করেছে অত্যন্ত উর্বর। আবহাওয়াও কয়েক বছর ধরে অনুকূলে থাকায় উৎপাদন হচ্ছে ভালো। কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন, তৈরি হচ্ছেন নতুন উদ্যোক্তা। তিনি জানান, চরাঞ্চলের মাটিতে সব ধরনের ফসল ভালো হয়। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির সহায়তা থাকলে এই এলাকার কৃষি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।