× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নগরে সুন্দরবনের ‘সুন্দরী’র সুবাস

হাসনাত মোবারক

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫ ১৩:৪৭ পিএম

নগরে সুন্দরবনের ‘সুন্দরী’র সুবাস

গ্রীষ্মের গুমোট এক সকাল। রাজধানীর শাপলা চত্বর থেকে নটর ডেম কলেজ রোড পথ ধরে হাঁটছি। অল্পতেই শরীর হাঁপিয়ে উঠল। বলতে দ্বিধা নেই। সেদিন বুঝি একটু বেশি হেঁয়ালিপনা পেয়ে বসেছিল। কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই ক্লান্তি দূর করতেই কলেজের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি। বৃক্ষশোভিত প্রাঙ্গণে গিয়ে মনপ্রাণ জুড়াবে এমন প্রত্যশা থেকেই সেদিন গিয়েছিলাম। বাহারি সব ফুল দেখে মুহূর্তে মনটা প্রশান্তিতে ভরেও উঠল। পুরো প্রাঙ্গণটি চক্কর দিয়ে ঘুরেফিরে দেখলাম। গাছে গাছে ডেকে যাচ্ছে পাখি। রঙিন ফুলগুলো হালকা বাতাসে দুলে উঠছে। এ দৃশ্য দেখে মনের অজান্তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফুলগুলি যেন কথা, পাতাগুলি যেন চারি দিকে তার/পুঞ্জিত নীরবতা’ এই গানটি গাইতে ইচ্ছে করল।

যা হোক, সৌন্দর্য ছড়ানো এই বৃক্ষলতার মধ্যে আমি নিসর্গী দ্বিজেন শর্মার চেহারাটি দেখতে পেলাম। কেননা এই প্রতিষ্ঠানে তিনি কিছুকাল শিক্ষকতা করেছেন। তারই স্মৃতিতে ধন্য এই প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার পথে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়াই। ঘাড় উঁচু করে তাকালাম। যেন ঝিরি ঝিরি করে আলো ছড়াচ্ছে। দিনদুপুরে গাছে জোনাক পোকা জ্বলছে! কী নাম এই ফুলের? কৌতূহল নিয়ে গাছের গোড়ায় গিয়ে দেখি, গাছের নাম লেখা, ‘সুন্দরী’। নামের সঙ্গে যথার্থ মিল রয়েছে। এ বৃক্ষটি আক্ষরিক অর্থেই নান্দনিক।

লম্বাটে গাছটির মাথায় ঝুলছে থোকা থোকা ফুল। লম্বাটে এর পাতা। রঙ কাঁঠাল পাতার মতোই। তবে এর চেয়ে একটু লম্বা। পাতার ওপরের পিঠ মসৃণ ও চকচকে গাঢ় সবুজ, নিচের পিঠ রুপালি-সাদা। খুব ছোট ছোট আকৃতির এই ফুল দেখে দূর থেকে কেউ ভুল করে ভাববে আরে গাছের মাথায় শোল মাছের ঝাঁক! কিন্তু কাছে গেলে ভ্রম দূর হবে। 

চিরসবুজ এ গাছের ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এর ফল কাষ্ঠল। ফল রসালো। আম, জাম, ধান, লিচু প্রভৃতির মতো এর ফল অবিদারী। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার ঘটে। কাঠ থেকে দামি আসবাবপত্র তৈরি হয়। বাকল থেকে ট্যানিন বা কষ এবং রঞ্জক দ্রব্য তৈরি করা হয়। আবার ট্যানিনমুক্ত বীজ খাওয়াও যায়। বীজের তেল অর্শরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। ডায়াবেটিস, আন্ত্রিক গোলযোগ, ঘ্যাগ, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এ গাছের উপকারিতা রয়েছে। পতঙ্গ তাড়াতেও গাছটির গুণ রয়েছে। অথচ গুণ সম্পন্ন এই গাছটি Red list of Thretened Species (২০১৩) অনুযায়ী সুন্দরী গাছকে বিপদাপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেই গাছের দেখা মিলল ঢাকার নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গণে।

সুন্দরী স্বাদু পানিতে স্বাচ্ছন্দ্য বেড়ে ওঠে। তবে মাঝারি লবণাক্ততা সইতে পারে। জোয়ারভাটায় প্লাবিত অঞ্চলে এই গাছটি বেশি দেখা যায়। এ কারণেই আমাদের দেশের সুন্দরবনে ব্যাপক দেখা যায়। যদিও সুন্দরী ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ। তবু তা উঁচু অলবণাক্ত স্থানেও জন্মাতে পারে। এ গাছটির আধিক্যের কারণেই বনটির নাম হয়েছে সুন্দরবন। এ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং উত্তর মালয়েশিয়াতেও এ গাছ জন্মে। ভারতে শুধু পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলীয় এলকাতে দেখে মেলে এ গাছটির। চিরসবুজ এ বৃক্ষটি প্রায় ২৫ মিটার লম্বা হয়। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Heritiera fomes Buch-Ham, গোত্র Sterculiaceae এবং ইংরেজি নাম, Sundari, অন্যান্য নামÑ সুন্দর, সুন্দ্রী, সোন্দরী।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা