× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাকালুকি হাওরজুড়ে সূর্যমুখীর হাসি

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৩৫ পিএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলামরা করেছেন সূর্যমুখী ফুলের চাষ। গত বছরের ভালো ফলনে এবারও স্বপ্ন বুনছেন তারা। তাদেরকে অনুসরণ করে এ ফুল চাষে এগিয়ে এসেছেন এলাকার আরও অনেক কৃষক। এশিয়ার বৃহত্তম হাওর মৌলভীবাজারের হাকালুকিতে এখন যেন সূর্যের মিলনমেলা। বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ দৃশ্য। দিগন্তজুড়ে সূর্যমুখী ফুলের হাসি নির্মল এক শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় চোখে। হাকালুকি হাওর এখন সূর্যমুখীময়। দূর থেকে হাওরের দিকে তাকালে মনে হয় বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। আর কাছে গেলেই চোখে পড়ে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুলের হাসি। ফুলগুলো বাতাসে দোল খেয়ে যেন সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার। অনিন্দ্যসুন্দর এ ফুলটি দেখতে আর সূর্যমুখীর রাজ্যে নিজেদের ভিডিও, ছবি ও সেলফি তুলতে প্রতিনিয়তই মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে ভিড় করছেন নানা বয়সি নারী-পুরুষ-শিশু। 

সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের কাছে সূর্যমুখী ফুল শুধু অপার সৌন্দর্যময় ফুল হলেও এর রয়েছে নানা গুণ। দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর এটি একটি উপকরণ এটি। সূর্যমুখী ফুলের শুকনো বীজ থেকে উৎপাদিত হয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল। পাশাপাশি তেল সংগ্রহের পর এ ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় খইল নামের এক ধরনের বস্তু, যা গবাদিপশুর খাদ্য। তবে মূলত খাদ্য চাহিদা মেটাতে তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিয়ে আসছে। চাষিরা বলেন সূর্যমুখী চাষ করার পদ্ধতি অনেকটা সহজ। প্রতিবিঘা জমিতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার ও কীটনাশক হলেই হয়। ফলে দিন দিন এ ফুলটি চাষের প্রতি কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর হাকালুকি হাওরসহ উপজেলার অন্য এলাকায় প্রণোদনার আওতায় ৭০ জন কৃষক ৭০ বিঘা জমিতে হাইসান-৩৩ ও আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেছেন। ফলন হয়েছে অত্যন্ত ভালো।

সরেজমিন হাকালুকি হাওরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সৌন্দর্যপিপাসুরা ভিড় করেছেন সূর্যমুখীর রাজ্যে। সিলেট থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থী জাহিদুর রহমান বলেন, এখানে এসে ফুলটির সৌন্দর্যে আমরা মুগ্ধ। হাওরের পরিবেশটা খুবই নিরিবিলি। এমন একটি ফুলের রাজ্যে ঘুরতে এসে মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল। চট্টগ্রাম থেকে পরিবারের সঙ্গে জেলার বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে এসেছিলেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা নাসিমা হক। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সূর্যমুখীর বাগান দেখে তিনি মুগ্ধ। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় ছোটবেলা থেকেই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখে বড় হয়েছি। কিন্তু এখানে যতটুকু চোখ যায়, ততটুকুই হলুদের সাম্রাজ্য। এত বড় বাগান জীবনে এ প্রথম দেখলাম। আমার দেখা এ যাবৎকালের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য এটি। হবিগঞ্জের সংস্কৃতিকর্মী গোবিন্দ রায় বলেন, মোটরসাইকেলে হবিগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজার, মৌলভীবাজার থেকে কুলাউড়া, এরপর জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওরÑ এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি সূর্যমুখী দেখতে। দীর্ঘ পথে প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তবে হাওরে এ ফুলের রাজ্য দেখে শরীর ও মনের ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে গেছে। এখন শরীর ও মন চনমনে। এ ধরনের ফুলের রাজ্য দেখতে হাজার মাইল পাড়ি দিতেও পারব এখন।

সূর্যমুখী চাষি রফিকুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা এবার দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলন খুবই ভালো হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আগামীতে আরও অধিক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করব। এ বছর জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেয়েছি। বাগানে ফুলের সমারোহে আমরা খুশি। তবে সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা লোকজন অনেক সময় ফুল ছিঁড়ে ফেলছেন। অনেকে ফুল সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যারা সূর্যমুখী দেখতে আসেন, তাদের কাছে অনুরোধ ফুলটির সৌন্দর্য উপভোগ করেন বাধা নেই। কিন্তু ফুল ছিঁড়ে আমাদের ক্ষতি করবেন না।

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, উপজেলায় সরকারের প্রণোদনার আওতায় ৭০ জন কৃষকের ৭০ বিঘা জমিতে এবার সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী থেকে উৎপাদিত তেল গুণগত মানের দিক থেকে খুবই ভালো। বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা ও দাম ভালো। এ কারণে এবং চলতি বছরের আবহাওয়া ও হাকালুকি হাওরের মাটি সূর্যমুখী চাষের উপযোগী হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। এতে করে চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে আমি আশাবাদী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় ক্রমান্বয়ে সূর্যমুখী আবাদ বাড়ছে। জেলার প্রতিটি সূর্যমুখী চাষিকে বীজসহ সব ধরনের সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে এ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা