নাটোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৫ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৭ পিএম
নাটোরের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম নিজ ক্ষেতে রোজেলা চা’য়ের চাষাবাদ দেখাশুনা ও পরিচর্যা করছেন। প্রবা ফটো
নাটোরে উন্নত মানের চা হিসেবে চাষ হচ্ছে রোজেলা। বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রোজেলা ফুল থেকে তৈরি হচ্ছে এই চা। গত ৫ বছর ধরে নাটোর সদর উপজেলার ঔষধি গ্রাম খ্যাত লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া গ্রামের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বানিজ্যিকভাবে পুষ্টি ও ঔষধি গুণসমৃদ্ধ রোজেলা চা’য়ের চাষাবাদ, প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাতকরণ শুরু করেছেন। বর্তমানে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে রোজেলা চা’য়ের চাষ করছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গেছে রোজেলা চায়ের পরিচিতি। প্রতিদিন এর কদর বেড়েই চলেছে।
রোজেলা চা একই গাছের ফল একেক নামে পরিচিত। কোথাও হিবিস্কাস ট্রি, চুক্কা, চুকাই বা চুকুর, চুকরি মেস্তা, কোথায় হরগোরা মেস্তা নামে এটি পরিচিত হলেও এর বৈজ্ঞানিক নাম রোজেলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন রোজেলা বৃক্ষের দেখা মেলে। অনেকেই বাড়িতে রোজেলা বৃক্ষের ফলকে টক হিসেবে রান্না করে থাকেন। এ ছাড়া বর্তমানে রোজেলা বৃক্ষের ফল থেকে বিশেষভাবে তৈরি করা হচ্ছে রোজেলা চা, যা ঔষধি ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। রোজেলা চা খেতে টক ও মিষ্টি। এটি স্বাস্থ্যকরও বটে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার ঔষধি গ্রাম খ্যাত খোলাবাড়ীয়ার পার্শ্ববর্তী গ্রাম কাঠালবাড়িয়া নতুন বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম তার রোজেলা চায়ের জমির পাশে খোলা জায়গায় রোজেলা বৃক্ষের ফল রোদে শুকাচ্ছেন। ভাল মানের ফল বাছাই করছেন। যত্ন সহকারে দেখাশুনা করছেন। তার পাশের লিজ নেওয়া জমিগুলোতে রোজেলার চাষ করেছেন। কোন জমিতে ফল তোলা হয়েছে। কোনটিতে ফল আহরণের সময় আসন্ন। রোদে শুকানোর পরই পলিনেটযুক্ত স্থানে পুনরায় স্বয়ংক্রিয় ড্রায়ার মেশিনে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এর পরই মোড়কজাতকরণ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সরেজমিনে শহিদুল ইসলামের প্রজেক্টে গিয়ে এর চাষাবাদ পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে নিচ্ছেন পরামর্শ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার-২০২৪ এর ‘সেরা কৃষি ব্যান্ড’-এ ভূষিত হয়েছেন শহিদুল ইসলাম।
শহিদুল ইসলাম জানান, বেসরকারি এনজিও সংস্থার কাছ থেকে রোজেলা চা চাষের ধারণা নিয়ে ২০১৯ সালে মাত্র ৫ শতক জমিতে এর বানিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে রোজেলার চাষ করছেন। রোজেলা বৃক্ষ অনেকটা দেখতে পাট গাছের মত। তবে এই বৃক্ষ ও ফলের রং লাল হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে রোজেলা ফুল আহরণ করে রোদে শুকানোর পর বীজ থেকে এর পাপড়ি আলাদা করা হয়। এরপর স্বয়ক্রিয় ড্রায়ার মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করে মোড়কজাত করা হয়। এতে চা’য়ের মান ও স্বাদ ঠিক থাকে। তবে খোলা পরিবেশে এই ফল রোদে শুকানো হলে আদ্রতাজনিত কারণে এর স্বাদ ও গন্ধ ভালো পাওয়া যায় না।
শহিদুল ইসলাম আরও জানান, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এক কেজি রোজেলা চা’য়ের দাম সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তার দাবি, নিয়মিত রোজেলা চা খেলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিকস্ রোগে বেশ উপকারী। এ ছাড়া ভিটামিন সি যুক্ত পুষ্টিগুণ রয়েছে এতে। এই চা পানে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় অনেকগুণ। অনলাইন মার্কেটে রোজেলা চায়ের সাড়া বেশ আশাব্যঞ্জক।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান জানান, ঔষধি গ্রামে রোজেলা চাষ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এটি লাভজনক হওয়ায় উত্তরোত্তর এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, লাভজনক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ রোজেলা চাষে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলামকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।